আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিনল্যান্ডের ডায়েরী..৩

সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী

আজ আমার জন্য একটি স্মরনীয় দিন। প্রায় ১৪ মাস পূর্বে ফিনল্যান্ডে আসি, প্রথম ৮ মাস কোন চাকরি পাইনি, অবসর ছিলাম তাই বেশি বেশি ক্রেডিট নিয়ে পড়াশোনা একটু বেশি এগিয়ে নিয়েছিলাম। তবে মনের মধ্যে সব সময় একটা ব্যাথা কাজ করত, সহপাঠীরা সবাই যে যার মত কাজের সন্ধান করে নিয়েছে কেবল আমিই বাকি। আত্মীয় স্বজন বা বন্ধুদের ফোন করলে প্রথমেই কাজের খবর জিজ্ঞেস করত তাই ফোনও করতাম না কাউকে (অবশ্য ফোন করার টাকাও ছিল না)। ভাত বাদে অন্য কোন কিছু কিনে খাবারও সাহস করতাম না।

ভাইয়ার দেয়া ২০০০ ইউরো ছিল ব্যাংকে কিন্তু খরচ করার মত সাহস ছিলনা আমার, কারন সবেধন নীলমনি ঐ ২০০০ ইউরো বাদে আমার কোন সম্বলই ছিলনা এই অচেনা অজানা রাজ্যে। মার্চ ২০১০, চাকরী পেলাম আফ্রিকান এক বন্ধুর রেফারেন্সে তার কাছে চীর কৃতজ্ঞ থাকব। যাক সামনে এগিয়ে যাবার পালা, ইতমধ্যে ২সেমিস্টারও শেষ করলাম। গ্রীষ্মের বন্ধ চার মাসে পাগলের মত কাজ করলাম, মোটামুটি ভাল একটা অংকের টাকা আমার একাউন্টে এখন। তবে দুঃখ গুলো ভুলতে পারিনা।

একটা কলার দাম ৪৫ সেন্ট যা প্রায় ৪০ টাকার মত, একটা কলা পর্যন্ত কিনে খাইনি, মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার শীত পার করেছি জীর্ন জ্যাকেটে (বাংলাদেশী পোষাক তো আর মাইনাস ৩০ ডিগ্রির উপযোগী করে বানানো নয় তাই জীর্ণ ই বলতে হচ্ছে)। গ্লাভসের ফাক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে হাত বরফ হয়ে যেত, ইউনিভাসির্টিতে গিয়ে গরম পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ঠিক করতাম। এত ঠান্ডায় চোখের পানি চোখেই বরাফ হবার উপক্রম। বাসায় ফিরে ২০ সেন্টে কেনা ম্যকরনী রান্না করতাম। মাঝে মাঝে বাঙালী খাবার রান্নার অপচেষ্টা করতাম ফলে যা রান্না করতাম তা নিজে খেতেই কষ্ট হত।

এই কষ্টগুলো করতাম আর ভাবতা বড় হতে হলে মনে হয় এমন ভাবেই কষ্ট করতে হয়। বড় হয়েছি কিনা জানিনা তবে সচ্ছল ভাবে চলার মত টাকা হয়েছে। যে আমি অফিসে অফিসে ঘুরে বেড়িয়েছি কাজের জন্য আজ স্বয়ং অফিসের বস এসেছে আমাকে নিয়ে যাবার জন্য। ডায়েরী খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ১৭ ইঊরো তে মাস পার করেছি আমি আর আজ বন্ধুদের নিয়ে ২০ ইউরোর পিজ্জা খাই। এত কিছু পেয়েছি তাও নিজকে সুখী মনে করিনা।

(আমি যে মানুষ!) এত ঝড় যাবার পরও আমি দৃঢ় স্বকল্পবদ্ধ ছিলাম যে এর শেষ আমি দেখে ছাড়ব। পেঁয়াজ কাঁটা বাদে আর কোন কষ্ট ই আমার চোখে পানি আনতে পারিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় কষ্টগুলো জয় করে ফেলেছি আমি। এখন আবেগহীন এক নিঃসঙ্গ পথিক মাত্র।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।