সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী
প্রায় ৬ মাসের মত হল এই দেশে এসেছি, এদেশের সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হয়ে উঠছে না। কাল রাতে মোটামুটি বড় ধরনের অভিজ্ঞতা হল আজকে তা ই জানাব।
গতকাল রাতে শীতকালীন অলিম্পিকের আইস হকির কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা ছিল ফিনল্যান্ড বনাম আমেরিকা। আমার সকল ফিনিশ বন্ধুরা খুবই excited. রাতে পার্টির আয়োজন করল খেলা উপলক্ষ্যে। আমাকেও নিমন্ত্রন দেয়া হল।
আফ্রিকান বন্ধু অজিমা এডসনের গাড়ি করে গেলাম আমাদের এক বান্ধবী ইডা-পাইতিলা র বাসায় যেখানে কিনা পার্টি হবে। ফিনল্যান্ডে আমার প্রথম পার্টি উদযাপন (জীবনেও প্রথম) তাই কিছুটা সংকিত আমি। সবাই বান্ধবীর বাড়িতে গেলাম, আমাদের আওয়াজ শুনে ই কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করল (এই দেশে আবার কুকুর পুষতে লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয়)। আমাদের রক্ষার্থে কুকুর বন্দী করা হল। গিয়ে অনান্য বন্ধুদের কে পেলাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করব এক বুলগেরিয়ান এক বন্ধুর কথা নাম ডানিয়েল, যার পরীক্ষা মাঝে মাঝে মিস হয় কিন্তু কোন পার্টি মিস হয় না।
সবার সাথে কুশল বিনিময় হল, সবাই দেখি তাদের নিয়ে আনা বিয়ার খাওয়া শুরু করল, আমিও জুস খাওয়া শুরু করলাম। এক প্রস্থ পানাহার শেষে সবাই সাউনা Sauna তে যাবে। সাউনা হচ্ছে শীতপ্রধান দেশে গুলোতে শরীর ফিট রাখার জন্য ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার উতপ্ত রুমে গরম স্টোভের উপর পানি ছিটিয়ে উলংঙ্গ হয়ে বসে থাকা। (এই লিংকে ডেমো ছবি দেখতে পারেন) আমি তো স্বভাবতই খুবই বিব্রত, মনে মনে ঠিক করলাম আমি সাউনা তে যাবনা, আবার পার্টিতে সব বন্ধুরা কি মনে করে তাও ভাবলাম। সবাই উলংঙ্গ হয়ে সাউনাতে বসে আছে আমি একটি তোয়ালে জড়িয়ে ঢুকলাম এবং সবাইকে বললাম ধর্মীয় বিধি-মোতাবেক আমি এই তোয়ালে টা জড়িয়েছি তোমরা কেউ কিছু মনে করো না।
সবাই ভাল ভাবেই গ্রহন করল দেখলাম। এক আমাদের সবার সাথে একটি জুনিয়র ছেলে বসে আছে, জানতে পারলাম সে আমাদের বান্ধবীর ছোট ভাই। চুটিয়ে সবাই বিয়ার খাচ্ছে সাউনার ভেতর আমি মনে মনে ভাবি এটা কোন ধরনের রীতি যে বান্ধবীর ছোট ভাই আমাদের সাথে একসাথে উলংঙ্গ হয়ে বিয়ার খাচ্ছে। যাক কোন মতে এই পর্ব শেষ করে টিভির রুমে চলে আসলাম যেখানে আমাদের চাইনিজ, পোলিশ ও ফিনিশ বান্ধবীরা বসে আছে।
আইস হকি শুরু হল, আমি ফিনিশ পতাকা নাড়াতে শুরু করলাম।
প্রথম দশ মিনিট না যেতে ই ৬ গোল দিল আমেরিকা ফিনিশদের জালে, সবাই হতবাক ফিনল্যান্ড এতটা খারাপ খেলবে কেউ আশা করেনি। এমনিতেই ফিনিশ রা খুবই সাদা তার উপর মাত্র সাউনা থেকে এসছে (সাউনা থেকে আসলে শরীর খুবই হালকা এবং ফর্সা লাগে) দেখি লজ্জায় এক একটার গাল ফেটে যেন রক্ত বেরিয়ে আসবে। যাক আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল।
খেলা চলাকালীন সময়ে খাওয়া দাওয়া সারলাম, ফিনিশরা তাদের বিড়াল কে এত ভালবাসে যে তাদের প্লেটে বিড়াল একসাথে খেলেও আপত্তি নেই। আমি খুবই বিব্রত এই বিড়াল নিয়ে, খাবার টেবিলের উপরে উঠে চারদিক ঘুরাফেরা করছে বিড়াল।
আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার কোলে এসে বসল, হাসি মুখে বিড়াল কে বলছি Mita kuuluu অর্থাৎ কেমন আছ! মনে মনে বলি আমাকে মাফ করনা ভাই।
যাক খেলা শেষ হল ফাইনাল রেজাল্ট আমেরিকা ৬ ফিনল্যান্ড ১। সবাই যে যার মত বাসায় ফিরে আসলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।