আমি ফ্রা ঙ্কে স্টা ই ন......... আদালত পাড়ায় আজ অতুৎসাহী মানুষের বিশাল ভিড় দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ কঠোর ও জোড়দার করা হয়েছে, কিছু ক্ষনের মাঝেই আদালতে হাজির করা হবে সক্রেটিস কে। রাষ্টদ্রোহী, দেশোদ্রোহী, ধর্মদ্রোহীর অভিযোগে অভিযুক্ত সক্রেটিস আদালতে আজ কি বলবেন তা শোনার আগ্রহেই আজ সাধারণ মানুষ ও তার ভক্তদের এই বিশাল উপস্থিতি, পিছনে দেখা যাচ্ছে একটি শিশু স্লোগান দিচ্ছে ফাসি চাই ফাসি চাই, সক্রেটিসের ফাসি চাই। শিশুর সাথে এসেছেন তার বাবা, তার মাথায় ব্যন্ডে লিখা আছে ধর্মবিদ্বেষী সক্রেটিসের ফাসি চাই। বাজারে কানা ঘুসা আছে বামপন্থী বিদ্রোহীদের প্রবল চাপে সেনা সমর্থিত গণতান্ত্রিক(!) সরকার বাধ্য হয়েছেন সক্রেটিসকে ক্যামেরা ট্রায়েলে না নিয়ে ফৌজদারী দণ্ডবিধিতে বিচার করার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অনলাইনে, ব্লগে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসকে প্রচণ্ড আঘাতে করে লিখা লিখেছেন, যা সরকারের ভিত নড়িয়ে দিয়েছে।
এখান আমার সাথে আছেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী জেনারেল মাউনুদ্দিন রুই মাছ।
= স্যার প্রথমেই আমি জানতে চাচ্ছি, আপনাদের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের আজ আদালতে উপস্থিতি কি বিচার ব্যবস্থার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করার সামিল নয়? আপনি কি মনে করে না, আপনার উপস্থিতি বিচারিক আদালত কে প্রভাবিত করবে।
=(চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট) না তা অবশ্যই নয়, আমাদের আদালত সম্পুর্ণ ভাবে প্রভাবমুক্ত। চারজন বিচারকের মাঝে ৩ জন ই আমার ব্যক্তিগত বন্ধু। আমি তাদের বলেছি, এই নরকের কীট, এই শুয়োরের বাচ্চার সাথে যেন শত ভাগ ন্যায় বিচার করা হয়।
আর কোন প্রশ্ন নয় প্লিজ।
আপনারা দেখলেন সরকার ন্যায় বিচারের পক্ষে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি। বর্তমান সরকারের সব গুলো মন্ত্রনালয় এই বিচারের ব্যপারে বেশ ভালো ভাবেই সচেতন রয়েছেন। আমরা এইমাত্র দেখছি সক্রেটিসকে নিয়ে আসা হচ্ছে একটি নীল পাজারু তে করে। দর্শক বৃন্দ আপনারা দেখতে পারছেন চারদিক থেকে স্লোগান হচ্ছে, ফাসি ফাসি ফাসি চাই, সক্রেটিসের ফাসি চাই।
সক্রেটিসের জবানবন্দীর পুরো অয়ানুষ্ঠানিকতা সহ সকল ঘটনা প্রবাহ দেখছেন এক্সক্লুসিভ ভাবে শুধু মাত্র কাশেম টিভিতে। সাথে আছি আমি লফিতা শুমি।
[আদালত ভবন। এজলাশে অভিজাতদের বিশাল ভিড়, সাথে আছেন কিছু সেনাপতি, সরকারী তেল তেলে আমলা এবং শুশীল সমাজের প্রতিনিধি। ]
এজলাশে বসে আছেন রাশভারী বৃদ্ধ বিচারপতি।
আসামীর কাঠ গড়ায় দাঁড়িয়ে আছে সক্রেটিস। পায়ে বেড়ী দেয়া হাতে হাত কড়ি। সক্রেটিসের পড়নে কালো শার্ট, নীল জিন্স প্যান্ট মুখে দাড়ি, মাথায় এলোমেলো চুল। চোখে মাঝারি পাওয়ারের চশমা। সক্রেটিসের পক্ষে কোন আইনজীবি নেই।
সকারী আইনজীবী বলে উঠলেন,
=এই লোক টির নাম সক্রেটিস, সে তরুন সমাজ কে ভুল পথে পরিচালিত করতে চেষ্টা করেছিলো। আজ দেশে কম্যুনিস্ট বিদ্রোহীরা যে আন্দোলন করছে তার পেছনে রয়েছে এই লোকটির বিশাল হাত। ধর্মাবতার আমি একে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। [মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন বিচারক। ]
=আপনার নাম কি?
=আমার নাম সক্রেটিস আলফাতুল রহমান।
=আপনার পেশা কি?
=শিক্ষকতা।
=ধর্ম সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
=ধর্ম হলো বিবর্তন বাদের এক অসামান্য দান। মানুষের সাহিত্য চিন্তা এবং হাজার হাজার বছরের সভ্যতার পর্যায়ক্রমিক বুদ্ধি বৃত্তীয় বিকাশের সাক্ষ্য এই ধর্ম।
=আপনার ধর্ম বিশ্বাস কী?
=কোন বিশ্বাস নেই।
=মহামান্য ধর্মাবতার দেখুন, এই লোকটি মাত্রই ঘোষনা করলো সে একজন নাস্তিক।
সে কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয়।
=মহামান্য বিচারক। পৃথিবীতে যে সকল বহুল আচারিত ধর্ম আছে তার মাঝে, শেষ ধর্ম মত টির আগমন ঘটেছে আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে। বাকী গুলো আরো পুরোনো। ধর্মাবতার আমার প্রশ্ন আজ থেকে ২০০০ বছর আগে মানুষ যে পোষাক পড়তো আজ ও কী আপনি সে পোষাকেই পড়েন না তার স্টাইলে কিছুটা পরিবর্তন পরিবর্ধন এসেছে।
যদি তাই এসে থাকে তবে ধর্মে নয় কেন?
=ধর্মাবতার এই নালায়েক ধর্মকে পোষাকের সাথে তুলনা করেছে। এই লোক ইশ্বরের কাজের উপর প্রশ্ন তুলছে ধর্মাবতার। এই লোক কে যোগ্যত্ম সাজা দেবার আহ্ববান জানাচ্ছি।
=মাননীয় ব্যরিস্টার মহাশয়, আমি জানি আপনি আমার চেয়ে একজন বিদগ্ধ মানুষ। তো একজন মুসলিম কে আলাদা করেছেন তার দাড়ি, টুপি, জোব্বা দিয়া।
হিন্দুকে আলাদা করেছেন তার পৈতে আর ধুতি দিয়ে। বোদ্ধকে আলাদা করেছেন তার গেরুয়া বসন বৈরাগ্য দিয়ে। তা হলে ধর্ম আর পোষাকের মাঝে পার্থক্য কোথায়। ধর্ম মানেই তো পোষাকী আচার ব্যবস্থা। কিছু মানুষের টু পাইস কামানোর সুযোগ।
অবজেকশন ধর্মাবতার, এই আসামী আমার ধর্মানুভুতিতে আঘাত করছে।
অবজেকশন ওভাররুলড।
= ধর্মাবতার ধর্ম মানুষ কে দিয়েছে আধুনিকতা। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে আলোর পথ, কিন্তু ধর্ম নিজেই আজ আইয়্যামে জাহেলিয়াতে পতিত হয়েছে। আমরা মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, প্যাগোডা ভাঙি না।
আমরা নাস্তিক। আর যারা ভাঙ্গে তারা আস্তিক। কুরানে আল্লাহ বলে দিয়েছেন “তোমার ধর্ম তোমার আমার ধর্ম আমার। ” সেখানে আমাকে নাস্তিক বলাটা কি কুরানের অবমাননা নয় ন্যায়াধীষ।
জনাব সক্রেটিস আপনি তো ইশ্বরেই বিশ্বাস করেন না।
তা হলে ধর্ম গ্রন্থ থেকে কেন রেফারেন্স দেন? আপনি তো নিজের অজ্ঞাতসারে একজন আস্তিক।
=দেখুন। আমি কখনো বলি নি ইশ্বর নেই। আমি বলেছি ইশ্বরের অস্তিত্ব সন্দেহাতীত নয়। ইশ্বর মাত্রই কবি অথবা ধর্ম প্রনেতার মেটাফোর অথবা তার আকঁড়ে ধরে থাকার চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ ব্যাতিত আর কিছুই নয়।
দেখুন বৌদ্ধ ধর্মে ইশ্বরের কোন স্থান নেই। তার পর ও তারা অলৌকিকতাকে আপ্ন করে নিয়েছে। কারণ ধর্ম এখন আর জ্ঞান নয়, একটি ভালো ব্যবসা। ইনভেস্ট লাগে না। শুধু আয় আর আয়।
=ধর্মাবতার আমি এই লোকটির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এই লোকটি ধর্মকে ব্যবসার সাথে তুলনা করেছে। একে মৃত্যুদন্ড দিন। সকল ধর্মে এই বিধান ই আছে।
=ধর্মাবতার আমি একটি ছোট্ট গল্প বলার অনুমতি চাইছি।
=অনুমতি দেয়া হলো।
=একদিন বুদ্ধ তার শিষ্যদের নিয়ে ভ্রমনে বের হলেন। তিনি শিষ্যদের বলে দিলেন, এ ভ্রমণের সময় তোমরা নারী সংস্পর্শ পরিহার করো। এর পর তিনি চলা শুরু করলেন। চলতে চলতে এক নদীর তীরে পৌঁছুলেন।
বুদ্ধ দেখলেন এক বৃদ্ধা নদীর পাড়ে বসে আছে। নদী পেরুবে বলে। বৌদ্ধ সেই বৃদ্ধাকে কাঁধে করে নদী পার করে দিলেন এবং ফিরে এলেন। এক শিষ্য তাকে প্রশ্ন করলেন, হে মহান বুদ্ধ, আপনি তো নারী সংস্পর্শ পরিত্যাগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু আপনি নিজেই তো এক নারীকে নদী পার করে দিলেন।
বুদ্ধ মৃদু হাস্যে বললেন। আমি তো আমার বোঝা নামিয়ে দিয়ে এসেছি, তুমি দেখি এখনো সে বোঝাই বয়ে বেড়াচ্ছো। অর্থাৎ বুদ্ধ বলতে চাচ্ছেন, তিনি সময়ের প্রয়োজনেই বৃদ্ধাকে কাঁধে তুলে নামিয়ে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু তার শিষ্য এখনো সেই আদেশ কাঁধ থেকে নামাতে পারে নি। ময়াননীয় ব্যরিস্টার বন্ধুর ও এই সমস্যাই হয়েছে।
তিনও আদেশের তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারেন নি। তায়েফে মুহাম্মদ (সা) আহত হয়েও তাদের ক্ষমা করেছিলেন। তাঁর শারীরিক লাঞ্ছনা বিশ্চই আপ্নার ধর্মানুভুতির চেয়ে বেশি। জিসাস ক্রাইস্ট সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। জল্লাদকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
তারা তো আর পাথরের দেবতা নন। তারাও মানুষ ছিলেন। ক্রোধ, দ্বেশ তাদের ও ছিলো। কিন্তু তাদের অনুভুতিতে আঘাত না লাগলে আপনার অনুভুতির মুল্য কতখানি আমি জানি না উকিল সাহেব।
= [বিচারক বলে উঠলেন] ওয়ার্ডার ওয়ার্ডার, বিচার কার্য, আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতুবি রইলো।
সক্রেটিস চিৎকার করে গেয়ে উঠলো,
এই শিকল পড়া ছল, মোদের এই শিকল পড়া ছল।
এই শিকল পড়া ছল, মোদের এই শিকল পড়া ছল।
এই শিকল পড়েই শিকল তোদের করবো রে বিকল।
এই শিকল পড়া ছল, মোদের এই শিকল পড়া ছল। ।
তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়। ।
ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন ভয়।
এই বাধন পড়েই বাধন ভয়কে করবো মোরা জয়
এই শিকল বাঁধা পা নয় রে এই শিকল ভাঙ্গা কর,
এই শিকল পড়া ছল, মোদের এই শিকল পড়া ছল। ।
তোমরা বন্ধ কারার বন্ধবনীতে করছো বিশ্ব গ্রাস,
আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছো বিধির শক্তি হ্রাস। ।
সেই ভয় দেখানো ভুতের মোরা করব সর্বনাশ ......। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।