আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সক্রেটিসের জীবন দর্শন

সুস্থবিজ্ঞানের চর্চা করতে চাই সক্রেটিসের যে নিজস্ব দর্শন ছিল, তা থেকে কোনদিন সরে দাড়ান নি। আত্নপক্ষ সমর্থন করে তিনি আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তাতে এই তার দর্শন ব্যক্ত হয়েছে। এই দশর্নের জন্য তিনি তার মৃত্যুদন্ডাদেশ পর্যন্ত বরন করে নিয়েছিলেন, এমনকি এর জন্য তিনি কখন দ্বিধাবোধও করেনি। দর্শনের সেই আপোসহীন সৈনিক আদালতে জবান বন্দি দিয়েছিলেন....তারই কিছু এখানে উল্লেখ করা হল: ১. তখনই সত্যিকারের জ্ঞানী হওয়ার পথে তুমি এগুতে পার যখন তুমি জানবে যে তুমি কি জান না। দেবতা ‌আপোলোর মন্দির ডেলফিতে দৈববাণী হয়েছিল যে সক্রেটিসই হচ্ছে জীবিতদের মধ্যে সবচাইতে জ্ঞাণী পুরুষ।

তাই সক্রেটিস জুরিদের উদ্দেশ করে বলেছেন, আমি প্রমাণ করতে চাইলাম যে দৈববানী ভুল, তাই আমি প্রথমে গেলাম রাষ্ট্রপরিচালকদের কাছে এবং দেখলাম যাদেরকে সবচাইতে জ্ঞানী বলে মনে হয় তারাই সবচাইতে বেশি মূর্খ। তখন আমি বুঝলাম আমি তাদের চাইতে বেশি জ্ঞানী , কারন আমি অন্তত এটুকু জানি যে আমি কিছু জানি না। তারপর আমি কবিদের কাছে গেলাম এবং দেখলাম তারা জ্ঞানের সাহায্যে নয় বরং দৈবজ্ঞানীদের মতো অনুপ্রানিত হয়ে কাব্য রচনা করেন, তারা অনেক চমৎকার কথা বলেন কিন্তু যা বলেন তার কিছুই বোঝেন না। তথাপি কবিরা মনে করেন যে তারাই সর্বশ্রেষ্ট জ্ঞানী। তারপর আমি গেলাম কারিগরদের কাছে, দেখলাম তার অনেক কিছুই জানেন যা আমি জানি না, যেমন জাহাজ কিংবা জুতো তৈরী করা; কিন্তু কবিদের মতোই তারা বিশ্বাস করেন যে তাদের জানা বিষয়গুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন , যেমন জুতো তৈরি করা।

এই বিশ্বাস তাদেরকে জ্ঞানী হতে বাধা দেয়। এ সব দেখেশুনে আমি সিদ্ধান্তে এলাম যে আসলে কেউই জ্ঞানী নয়—রাষ্ট্রপরিচালকরা নয়, কবিরা নয়, কারিগররা নয়, এমনকি আমিও নই, যার সম্পর্কে ডেলফিতে দৈববাণী শোনা গিয়েছিল; কিন্তু আমি অন্তত এটুকু জানি যে আমি কিছু জানি না। ২. সক্রেটিসের জবানবন্দীতে পাওয়া দ্বিতীয় দার্শনিক সূত্র হল, জ্ঞান ও সত্য চর্চার মাধ্যমে আত্মার উন্নয়ন বা পরিচর্যা করা। সে জন্যই তিনি বলেছেন , আমি এথেন্সের ছোটবড় সবাইকে বলি –তোমরা তোমাদের শরীর কিংবা অর্থের পিছনে ছুটোনা, তোমারদের প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত আত্মার উন্নয়ন সাধন। যতদিন পযর্ন্ত সত্য ও জ্ঞানের খোজ না পাও ততদিন পযর্ন্ত অর্থ, যশ বা প্রতিপত্তির কথা চিন্তা করোনা।

সততা অর্থ থেকে আসে না বরং সততাই অর্থ ও অন্যান্যা ভালো জিনিস টেনে আনে। এটাই আমার শিক্ষা। আমার এই মতবাদ যদি এথেন্সের যুবসমাজকে কুপথে নেয় তা হলে আমি দোষী। যদি কেউ বলে এসব ছাড়া আমি অন্যকিছু শিখিয়েছি, সে মিথ্যুক। ৩. সক্রেটিস এরপর এথেনীয়দের উদ্দেশ করে বলছেন, তোমরা যদি আমাকে দোষী সাব্যস্ত কর, তা হলে যারা আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন সেই দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করে পাপ করবে।

আমি একটি ডাশঁ(যেসব মাছি গরু-ঘোড়ার ইত্যাদি প্রানীর রক্ত পান করে) মাএ, যাকে দেবতারা এই রাষ্ট্রে পাঠিয়েছেন। কারন রাষ্ট্র হচ্ছে একটি বিশাল ঘোড়ার মতো, বিশাল বপুর জন্য এটা অলস ও মন্থরগতি সম্পন্ন হয়ে পড়ে। আমার দায়িত্ব হচ্ছে হুল ফুটিয়ে এটাকে চাঙ্গা করা। এ জন্যই সব সময় সব জায়গায় আমি তোমাদের আলোকিত করে জাগানোর চেষ্টা করি এবং র্ভৎসনা করি। তোমরা আমার মতো আর কাউকে এত সহজে খুঁজে পাবে না, অতএব আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি।

৪. সক্রেটিস বক্তৃতার চতুর্থ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হচ্ছে: ‘জ্ঞানেই পুণ্য’। এই নীতি অনুযায়ী ভালোকে জানা মানেই ভালো কাজ করা। মানুষ খারাপ কাজ করে শুধুমাএ তার অজ্ঞতার জন্য। যদি জ্ঞানেই পুন্য লাভ হয়, ভালোকেই জানার অর্থ যদি হয় ভালো কাজ করা, তা হলে একজন লোক তখনই কুকর্মে ব্যাপৃত হবে যখন সে ভালোকে জানতে ব্যর্থ হবে। এখানেই সক্রেটিস সেই বিখ্যাত করেন: ‘কেউ স্বেচ্ছায় কুকর্ম করে না।

’ ভালো কে জানার পর কেউ স্বেচ্ছায় মন্দ বেছে নেয় না। কিন্তু আমরা প্রায়শই বলি –“জেনেশুনে অন্যয় কাজটি করলাম। ”অথবা চাইলেই ভালো কাজটি করতে পারতাম। সক্রেটিসের বিবেচনায় এটা একেবারেই অসম্ভব; যদি কেউ সত্যিই কেউ ‘ভালো’ কে জানে তা হলে সে ভালো কাজটিই করবে । তুমি যা করেছ তার চেয়ে যদি উত্তম বিবেচনাবোধ তোমার থাকত, হা হলে তুমি সেটাই করতে।

সক্রেটিস আর বলেছেন, যখন কেউ কোনো খারাপ কাজ করে তখন এই আশায় করে যে এর ফলে সে উপকৃত হবে,লাভবান হবে। একজন চোর জানে যে চুরি করা অন্যায় , কিন্তু যখন সে একটি হীরার হার চুরি করে, সে হয়তো এই আশায় চুরি করে যে এর বিনিময়ে সে তার কাঙ্খিত রমনীর যৌনানুগ্র লাভ করবে, এই চোরের মতো প্রায় সবাই জীবনপাত করে ক্ষমতা, প্রতিপত্তি বা অর্থে পেছনে ছোটে, কারন তারা মনে করে যে এসবই ভালো এ সবের মধ্যে তারা সুখ খুজে পাবে। কিন্তু তারা জানে না কোনটি ভালো। তারা জানে না এ সবে মধ্যমে সে কখনও সুখ খুঁজে পাবে না। মানুষের জন্য কী ভালো এবং কিসে মানুষের সুখ, তার জীবনযাপন পদ্ধতি কী হওয়া উচিত এবং কীভাবে সে সেটা আয়ত্ত করবে তা জানার জন্য প্রথমে মানবচরিত্র বুঝতে হবে।

মানুষ যদি তা বোঝার চেষ্টা না করে, যদি কোনো দিন না জানে কোনটি তার জন্য ভালো হা হলে সুখী হওয়ার সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হবে। এই ধরনের জীবনকে সক্রেটিস অপরিক্ষীত জীবন বলে উল্লেখ করেছেন। তার অন্যতম বিখ্যাত উক্তি: “অপরিক্ষিত জীবন ভালো জীবন নয়। ” তথ্যসূএ: প্লেটো দর্শন ও রাষ্টচিন্তা বইটি, ছবি সূত্র: উইকিপিডিয়া.ওআরজি. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.