এসো নীপবনে
সক্রেটিস এর কিছু কিছু গুণ রয়েছে হিমুর মাঝে। একসময় মনে হলো এমন নয়তো এই যে হিমুর রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটা সক্রেটিস থেকে ধার নেয়া। হতেই পারে। নাও পারে। তবে হিমুকে যখন দেখি সক্রেটিসের মতোই খালি পায়ে হাটছে ঢাকা শহরের অলি-গলি রাজপথ তখন কেন জানি সক্রেটিসের কথাই মনে পরে।
তিনিও হাটতেন এথেন্সের পথ থেকে পথে।
হিমু এক প্রহেলিকার নাম। তিনি কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হন নি। প্রশ্রয় দেন নি কোনো মায়া-মমতাকে। বরঞ্চ এই মায়া মমতা থেকে দূরে থেকেছেন।
কি অসীম তার ক্ষমতা! না নিজে তেমন কেউকেটা নন। যারা তাকে চিনেন তারা কেউকেটা। যারা তাকে চিনেন তারা হিমুর জন্য নিবেদিত প্রাণ।
এ যেন অনেকটা সক্রেটিসেরই অন্য রূপ। পান করছেন, কিন্তু কখনো মাতাল হচ্ছেন না।
এমন না যে তিনি কম পান করছেন বরংঞ্চ অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই পান করছেন। তিনি নিজে তেমন কিছু নন। কিন্তু ছাত্রবৃন্দরা ছিলেন যথেষ্ট নামজাদা বিখ্যাত আর সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। সক্রেটিসের জন্য করতে পারেন না এমন কিছু নেই।
হিমুর নিজের কোনো বানী নেই।
সব তার বাবার নীতিবাক্য। তিনি শুধু মেনে গেছেন। তার জীবন-যাপনের ধরনই যেন একটা দর্শন। সক্রেটিসের ও তাই। তিনি নিজে কোনো দর্শন দিয়েছেন এমন নয়।
যেন তার কথা-বার্তা, চাল-চলন, চিন্তা-চেতনা এই সবই যেন একটা দর্শন।
হিমু কি করতেন? এক কথায় কিছুই না। রাস্তায় হাটা-হাটি ছাড়া। সক্রেটিস ও তাই, তিনি হাটে-বাজারে, মেলায়-উৎসবে মানুষের সাথে কথা বলা ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে দেখা যায় না।
আসুন হিমুর সাথে যদি সক্রেটিসের দেখা হতো তবে তাদের সাথে কি কথা হতো?
হিমুঃ আপনিই মহান সক্রেটিস?
সক্রেটিসঃ আমিই সক্রেটিস, তবে মহান কিনা এটাতো বলতে পারবোনা।
তুমি কে?
হিমুঃ আমি হিমু। হিমালয় থেকে হিমু।
সক্রেটিসঃ হিমালয়টা কি?
হিমুঃ হিমালয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বতশৃঙ্গ।
সক্রেটিসঃ পর্বতশৃঙ্গ না পর্বতমালা?
হিমুঃ একটা হলেই হলো।
সক্রেটিসঃ ধর কেউ তোমাকে বললো, বাংলাদেশের রাজধানী মতিঝিল, কিন্তু তুমিতো জানো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
তবু তুমি কি বলবে, একটা হলেই হলো?
হিমুঃ তা না, তবে…
সক্রেটিসঃ তুমি কি বলতে চাচ্ছ যে আসলে যেহেতু মতিঝিল ঢাকার প্রানকেন্দ্র, তাই মতিঝিল বাংলাদেশের রাজধানী হতে দোষ নাই।
হিমুঃ না ঠিক তাও না…
সক্রেটিসঃ নাকি তুমি আসলে জানোই না হিমালয়- পর্বতমালা না পর্বতশৃঙ্গ?
হিমুঃ পর্বতশৃঙ্গ শব্দটা সুন্দর। পর্বতের আবার মালা কি? মালা হবে ফুলের। সেই মালা একটি ছেলে আর মেয়ের মধ্যে বদল হলেই বিয়ে সম্পন্ন হলো। এরপর তাহারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে থাকিবে।
সক্রেটিসঃ হিমু, তুমি কি পর্বতশৃঙ্গ মানে জানো? হিমালয়ের যেমন পর্বতশৃঙ্গ আছে, তেমনি এই কেওকেরাডং এর ও পর্বতশৃঙ্গ আছে, আমাদের দেশের অলিম্পাসের ও আছে। শৃঙ্গ মানে কি জানো তো। শৃঙ্গ মানে শিং। যেমন ধরো গরুর শিং, কিংবা ছাগলের শিং। শিং এর উপরে কি আর কিছু আছে?
হিমুঃ না।
সক্রেটিসঃ তার মানে কি হলো? পর্বতশৃঙ্গ মানে হলো পর্বতের সেই জায়গা যার উপর আর কিছু নেই। বুঝলে?
হিমুঃ জ্বি। কিন্তু আমি একটা জিনিস এখনো বুঝতে পারি নাই।
সক্রেটিসঃ সেটা কি?
হিমুঃ চলুন মহান সক্রেটিস আপনাকে একটা চমৎকার জিনিস দেখাই।
সক্রেটিসঃ চলো।
হিমুঃ এই যে গাছটা দেখছেন, গাছে হলুদ হলুদ থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে এগুলোর নাম কদম ফুল।
সক্রেটিসঃ বাহ, সুন্দর তো!
হিমুঃ হুম, খুব সুন্দর। এই দেখুন উপরে এর পরাগগুলো কি সুন্দর! এই পরাগ গুলো যদি ফেলে দেই, তবে এইটা কি একধরনের ফল এর মতো বের হচ্ছে।
সক্রেটিসঃ আরে, তাই তো!
হিমুঃ আচ্ছা আপনিই বলেন- ফুল আর ফল কি এক?
সক্রেটিসঃ না। কখনো না।
আগে ফুল, তারপর ফল।
হিমুঃ আচ্ছা এমন কি হতে পারে একটা ফুল একই সাথে ফল।
সক্রেটিসঃ না, প্রকৃতিতে তো এমন কোনো নজির নেই। একজন মানুষ কখনো একই সাথে ভালো অভিনেতা আবার ভালো ডাক্তার হতে পারে না।
হিমুঃ মহান সক্রেটিস আমিও তাই বলি, এটা আসলে কি? কদম কি ফুল না ফল?
সক্রেটিস আর কোনো কথা বলছেন না।
তিনি চিন্তা করছেন। কদম ফুল না ফল এর উত্তর তার জানতেই হবে। না জানা পর্যন্ত তার নড়ন-চড়ন নেই। হিমু একটা কদম গাছের নিচে সক্রেটিসকে রেখে পা বাড়ালেন। সক্রেটিস মহান ব্যক্তি।
চিন্তার মতো জটিল বিষয় তাকে মানায়, হিমুকে নয়।
(হিমু মনে মনে বললো, মহান সক্রেটিস, হিমালয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বতশৃঙ্গ, কেননা, তার উপরে আর কেউ নেই। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।