আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিক ধারার বাণিজ্যে ই-কমার্স

মা বাবার সেবা করা সবচেয়ে বড় ইবাদত

কানাডায় থাকে মোরশেদ, আর কৌশিক জেনেভায়। দু’জনই ইনফরমেশন সোসাইটির বাসিন্দা। ছোট বোন পায়েল। থাকে ঢাকায় মা-বাবার সঙ্গে। প্রতি জন্মদিনে ভাইয়াদের পোস্টকার্ডে শুভেচ্ছা পেত।

এবার পায়নি বলে মন খারাপ। জন্মদিনের সুন্দর সকালে পায়েলের ঘুম ভাঙলে দেখে বড় সাইজের ফুলের তোড়া ও চকলেটের প্যাকেট, ভাইয়ারা পাঠিয়েছে। আসলে এটাই বাস্তবতা। এখন ই-কমার্সের কল্যাণে আপনার কোনো সকাল হয়ে উঠতে পারে সুন্দর থেকে সুন্দরতম। কী এই ই-কমার্স? বিশ্বজুড়ে এখন ‘ই’এর জয়জয়কার।

দিন দিন নতুন নতুন শব্দের আগে ‘ই’ যুক্ত হচ্ছে। কমার্স শব্দের আগে ‘ই’ যুক্ত হওয়ার ঘটনা তাবত্ পৃথিবীর ব্যবসা-বাণিজ্যের সনাতন ধারার পুরনো ধারণা বদলে নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে। শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে ঘটে গেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্যে যে বিষয়টি বেশি ভূমিকা রাখে সেটি হলো আদান-প্রদান। পণ্যের উত্পাদন, বিপণন, প্রচার, ভোক্তা, সরবরাহ—এসব মিলে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।

এ কর্মযজ্ঞের ডিজিটাল সংস্করণই ই-কমার্স। অন্যকথায়—অনলাইনে বেচাকেনা করার পদ্ধতিকে বলে ই-কমার্স। ই-কমার্সের রকমফের বিটুসি: বিজনেস টু কাস্টমার। অনলাইন কেনাকাটায় এ সেবাটি হোম ডেলিভারির মতো। ওয়েবসাইটে পছন্দের জিনিসটি অর্ডার দিয়ে অনলাইনে বিল পেমেন্ট করে দিলে কোম্পানি বাসায় পণ্য সাপ্লাই করে দেবে সঠিক সময়ে।

এখানে বিল পেমেন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ক্রসচেক, নগদ পেমেন্টের সুযোগ আছে। বিটুবি : দুই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনলাইন ট্রেডিং বিটুবি সার্ভিস। বিশ্বে বিটুবি সার্ভিস বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১০ সালে খোদ আমেরিকাতেই ২০ ট্রিলিয়নের বেশি বিটুবি ই-কমার্স ব্যবসা হবে। সিটুসি : দু’জন ক্রেতার মধ্যে অনলাইন বাণিজ্য।

কাস্টমার টু কাস্টমার সার্ভিস। ই-নিলাম, শেয়ার লেনদেন এসব সিটুসি ই-কমার্স। বিশ্বজুড়ে ই-কমার্স আয় বিশ্বে ইন্টারনেটের বদৌলতে ই-কমার্স দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। ২০০৭ সালে ই-কমার্সে আয়ের পরিমাণ ছিল ৮০০ বিলিয়ন ডলার। ধারণা করা হচ্ছে- ২০১০ সালে এর পরিমান ২০০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

সুতরাং সেদিন বেশি দূরে নয় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে পড়বে ই-কমার্সনির্ভর। বিশ্ব যখন সীমানাহীন ইনফরমেশনের অবাধ প্রবাহের ফলে ইন্টারনেট অতি দ্রুত একটি নতুন বিশ্বের দিক এগুচ্ছে। বর্ডারলেস এক বিশ্ব তৈরিতে ইন্টারনেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইন্টারনেটেই আগামী দিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠবে, তার ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে ই-বিজনেস ওয়েব সাইটের সংখ্যা অর্ধ কোটির মতো।

ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কোটি কোটি। এশিয়া-প্যাসিফিক জোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দিনের বিশ্ব চলবে ইন্টারনেটে। সীমানাহীন এক বিশ্ব হবে একটি গ্রাম। ই-কমার্সে লাভ-ক্ষতি প্রযুক্তি বদলায়।

বদলে দেয় মানুষের সমাজ-সভ্যতা। ই-কমার্স সনাতন ধারার ব্যবসা-বাণিজ্যের অর্গল ভেঙে তৈরি করেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্রুত, স্বচ্ছ, সাশ্রয়ী নতুন পথ। ঘরে বসে অনলাইন ট্রেডিং করা যায় বলে যাতায়াত খরচ কমে, সময়ও বেঁচে যায়। সত্যিকার অর্থে ইন্টারনেটের আধিপত্যে এখনো আমেরিকা শীর্ষে। বিশ্বের অর্ধেক ব্যভহারকারী আমেরিকায়।

তাই তাদের কমার্স মার্কেটও অনেক বড়। বিশ্ব বিখ্যাত নেটওয়ার্কিং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিসকো তাদের ৮০ ভাগ কাজের অর্ডার ইন্টারনেটের মাধ্যমে পায়। যা তাদের বাত্সরিক ৬০-১০০ কোটি ডলার খরচ বাঁচিয়ে দেয়। আমেরিকার আমাজন ডটকমকে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জনক বললে ভুল হবে না। তাদের বার্ষিক পণ্য বিক্রির পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার।

অন্যদিকে চেইন সুপার স্টোর ‘বারনেস অ্যান্ড নোবেল’ তাদের ২৩৫টি সুপার স্টোরের বিক্রির পরিমাণ আমাজনের সমান। আমাজনের ওয়েভভিত্তিক দক্ষ মার্কেটিংয়ের ফলে তাদের খরচ কমেছে। ফিক্সড ক্যাপিটালের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি ডলার। বিঅ্যান্ডএন-এর ক্যাপিটাল ৩শ’ কোটি ডলার মাত্র। এ হচ্ছে ভার্চুয়াল বিক্রেতা আর আসল বিক্রেতার লাভ-ক্ষতি।

পার্থক্যটা বলে দেয় আগামী দিনের ব্যবসা-বাণিজ্য কতটা অনলাইননির্ভর হবে। ক্রেডিট কার্ড : ই-কমার্সের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনলাইন ট্রেডিংয়ের একমাত্র বাহন হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। ই-কমার্সের কাঠামোর পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য ক্রেডিট কার্ডই ভরসা। বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের সার্ভিস বিশ্বমানের নয়।

বিশেষ লোকাল সার্ভিসের জন্য যেসব ক্রেডিট কার্ড ইস্যু হয় তা দিয়ে দেশের বাইরে ই-কমার্স সাইট থেকে বাণিজ্য করা সম্ভব নয়। আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসির ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে হয় অনলাইন ট্রেডিংয়ের জন্য। বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে এ ক্ষেত্রে। ই-কমার্সে আমাদের পিছিয়ে থাকতে হবে লোকাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন না হলে। বাংলাদেশের ইন্টারনেট দেশে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে তত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরে ইন্টারনেটের সূচনা হয়।

প্রথম দিকে ধীরগতিতে আগালেও বর্তমানে এর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাড়ায় ১৩ হাজার ৫০০, ২০০৫ সালে ৮৫ হাজার, ২০০০ সালে ৫৫ হাজার, ২০০৬ সালে ১ লাখ ৮৫ হাজার। বর্তমানে প্রায় ১.৫ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকটি দেশিয় ই-কমার্স সাইট হোমভিউ, মুন্সিজি, লিটল বাংলা, গানবাজনা, কুটির বাংলা বাস্কেট, বিডি বাজার, বাংলা বুকস, বাংলা কমার্স, মাল্টিলিংক, ঢাকা গিফট ইত্যাদি নামে কয়েকটি দেশীয় ই-কমার্স সাইট অনেক দিন থেকেই ই-কমার্স বানিজ্যে তাদের সেবা দিয়ে আসছে। অবশ্য দিন দিন বাড়ছে এর সংখ্যা।

চালু হওয়া দরকার ই-সাক্ষরের বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা আছে প্রচুর, সমস্যাও আছে। আমাদের দেশে ই-কমার্স চালু আছে কিন্তু কতিপয় সমস্যাকে আমরা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি। ই-কমার্সের পুরো ব্যবসাটাই কাগজের বা তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। আমরা একটি পণ্য কোথাও পাঠালে প্রকৃত প্রাপক কিভাবে পাবে তার সুনিদৃষ্ট প্রমান পাওয়ার উপায় নেই। এজন্য দেশে ই-সাইন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়া দরকার।

যা এখনো চালু হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সরকার এখনো এ বিষয়টিকে কার্যকর করেনি। এতে ক্রেতামহল বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হলেও এখনও ধীরগতির ইন্টারনেটের কবল থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নতি বলা যায় ই-কমার্স বানিজ্যে সম্প্রসারনে বড় বাঁধা।

এরজন্য ই-কমার্সের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তৈরি করতে হবে ই-কমার্স কাঠামো আমরা আইটি সেক্টর তথা সফটওয়্যার রফতানি, ডাটা এন্ট্রি শিল্পের স্বপ্নের কথা ভাবি তা মূলত নির্ভর করছে ই-কমার্সের উন্নয়নের ওপর। আমরা যদি একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে না পারি, তাহলে আমাদের পিছিয়ে পড়ার দূরত্বটা বেড়ে যাবে অনেক বেশি। সেখানে তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নই থেকে যাবে। তাছাড়া ডব্লিউটিও’র রুট মাফিক চলতে গেলে আমাদের অবশ্যই ই-কমার্স কাঠামো তৈরি করতে হবে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর।

আর কবে আমাদের বোধোদয় হবে? সাবধান হতে হবে সবাইকে এখনই। কেননা আগামী দিনগুলো কিন্তু ই-এভরিথিংসের। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।