যুদ্ধের দামামা বাজাঁতে বাজাঁতে বাঙলা সাহিত্যে আবির্ভাব ঘটে কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯ - ১৯৭৬)। সমকালের সব অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বেঁজে উঠে তাঁর বীণায়। যুগ স্রষ্টা এই নজরুলকে বরণ করে নিতে দেরী করেনি তৎকালীন বাঙালী সমাজ। এবং তা নজরুলের আশ্চর্য প্রতিভার কারণেই ঘটেছিল। নজরুল জেলে থাকার সময় অপরাজেয় কথা শিল্পী শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক চিঠিতে লিখেছিলেন, বর্তমানে রবিবাবু ছাড়া নজরুলের চেয়ে বড় কবি আর কেউ নেই।
কিন্তু নিন্দুকের অভাব কোন কালেই ঘটেনা। নজরুলের সমকালেও ঘটেনি। নিন্দুকেরা নজরুলকে বিভিন্ন ভাবে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতো, তাকে ‘হুজুগের কবি’ বলে অভিহিত করেছিল। নজরুল ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায় তার একটা কৈফিয়তও দিয়েছিলেন। নজরুল মোটামুটি ভাবে দীর্ঘ জীবন লাভ করলেও তার সাহিত্যিক জীবন মাত্র বাইশ বছরের।
তিনি ১৯৪২ সালের পর আর কিছুই রচনা করননি। প্রায় আটষট্টি বছর পূর্বে নজরুলের সাহিত্য জগত থেকে অন্তর্ধান ঘটে। নজরুল অসামান্য সৃজনী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন নিঃসন্দেহে। তার সৃষ্টির কালের ভ্রুকূটি উপো করে টিকে থাকার পৌরুষ যথেষ্টই আছে, কিন্তু বর্তমানে নজরুল নামের যে উন্মাদনা, জন্ম - মৃত্যু দিবস পালনর যে আড়ম্বর তা বাঙালীর হুজুগেরই বহিঃপ্রকাশ। এখনো নজরুল ‘হুজুগের কবি’।
নজরুল রচনার যে আন্ত সৌন্দর্য আছে তা থেকে অনেকেই দূরে সড়ে গেছে। এখনও নজরুলকে সেভাবে আর মূল্যায়ণ করা হচ্ছেনা, তারপরেও নজরুল জন্ম - মৃত্যু দিবসে এত সব আয়োজন, অনুষ্ঠান, পত্র পত্রিকায় নজরুল সংখ্যা করার কারণ হলো বৈশাখে প্রথম সকালে রমনায় পান্তা - ইলিশ খাওয়ার মতোই এটিও দেখানো কালচারে পরিণত হয়ে গেছে। নজরুলকে না জেনে, নজরুলের কবিতা না পড়ে নজরুলের ছবি সংবলিত টি-শার্ট পড়া যুবক, নজরুলের কবিতার পংক্তি ব−ক করা শাড়ী পরিহিত যুবতীর দেখা এখন সহজেই মিলবে। নজরুলের গান নিয়ে অনুষ্ঠান হলে সেখানে তার গুটিকয়েক জনপ্রিয় গানই গাওয়া হয়। বেশির ভাগ প্রবন্ধে - নিবন্ধে সেই পুরণো কথাই চর্বিত চর্বণ করা হয় এবং কিছু কিছু লেখা শুধু মাত্র তার জীবন বিত্তান্ত।
এবং আরেকটি কথা অপ্রিয় হলেও সত্য, তা হলো কোথাও কোথাও অসাম্প্রদায়িক এ কবির জনপ্রিয়তার কারণের মূলেরয়েছে সাম্প্রদায়িক মনোভাব। বর্তমানে আমাদের নজরুলের জন্যই নজরুলের মোহ থেকে, হুজুগ থেকে বেরিয়ে এসে নজরুলের সৃষ্টির দিকে নজর দিতে হবে, কারণ জাতির এ ঘোর দুর্দিনে, দুঃসময়ে তাঁর কবিতা গান আমাদের বড় প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।