যখন যেখানে যেমন তেমন
পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ এ বছর শুরু হতে পারছে না। যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ডিসেম্বরের মধ্যে এই সেতু নির্মাণের বাস্তব কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি বার বার দিলেও দুর্নীতির মাধ্যমে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করতেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতেই অন্তত আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মার্চের আগে সম্ভব নয়। পরামর্শক ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ দিতে গড়িমসি চলছে অবৈধ লেনদেন চূড়ান্ত করার জন্য। কার্যাদেশ দিতে দেরি হওয়ার কারণে স্বপ্নের সেতু নির্মাণের ব্যয়ও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহলের বিদেশী এ্যাকাউন্টে মোটা অংকের টাকা যাওয়ার পরই নাকি কার্যাদেশ দেয়া হবে।
এমনটিই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে পদ্মা সেতু। এমনটি ধরে নিয়েই দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই সেতু বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে সেতুর মূল নকশার খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন জাতীয় সংসদে গত জুলাইতে সমাপ্ত ৫ম অধিবেশনে দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন যে, চলতি ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ২০১৩ সালের মধ্যেই অর্থাৎ বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদের মধ্যেই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
কিন্তু এই ছক বাধা সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছে না। সুতরাং শেষ করাও সঠিক সময়ে সম্ভব হবে না। ফলে নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল এইকম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এইকম নামে কাজ করছে। এই বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ২২ মাসের চুক্তিতে নকশা প্রণয়নের কাজ পায়।
সরকারের তড়িঘড়ির কারণে আরো অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করে ২২ মাসেরও কম সময়ে নকশার কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অর্থ বিনিয়োগকারী সংস্থার সময়ক্ষেপণ, নানা বিষয়ে অনুমোদন পাওয়াসহ অদৃশ্য কারণে ২২ মাসের কম সময়ে আর নকশার কাজ শেষ করা যায়নি। লালন শাহ সেতুর তদারককারী প্রতিষ্ঠান ওরলী এইকম ঐ সেতুর নকশাও প্রণয়ন করে। বর্তমানে পদ্মা সেতুর জন্য দুইটি কন্ট্রাক্ট একেবারেই নিকটবর্তী। একটি হলো পরামর্শক নিয়োগ আরেকটি হলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তকরণ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) গত মার্চ মাসে এজন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। ৪৫ দিনের মধ্যে দরপত্র জমা দেয়ার সময় ছিল। ১৩ মে ঐ সময় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহলের পছন্দের কাউকে সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়। এতে করে ৩০ জুন পর্যন্ত দরপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল।
এ ধরনের অদৃশ্য কারণে দরপত্র জমাদানের সময়ই দেড় মাস পিছিয়ে গেল। তারপরও ইতোমধ্যে আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কারিগরি প্রস্তাবে কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে তা জানা যায়নি। কারিগরি প্রস্তাবের পরে আসবে অর্থনৈতিক প্রস্তাব।
ওদিকে মূল সেতুর প্রাক বাছাই গত ১৩ এপ্রিল শুরু হয় এবং ৪ জুন শেষ হয়।
এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত ১৭ জুলাই জমা দিয়েছে। পরবর্তীতে আরো দুই মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তার অনুমোদন মেলেনি। এই অনুমোদন ব্যতিরেকে নির্মাণ প্রস্তাবও দেয়া যাবে না। এর জন্য সময় লাগবে আরও ৪ মাস। সব মিলিয়ে ২/১ দিনের মধ্যেও যদি অনুমোদন দেয়া হয় তবুও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা আগামী ফেব্রুয়ারির আগে কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
অনুমোদন পেলে নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য কয়েক মাস প্রস্তুতিমূলক সময় লাগে। সব মিলিয়ে এখন থেকেও যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবুও আগামী মে-জুন মাসের আগে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র।
পরামর্শক ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করতে অহেতুক বিলম্বের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে এর পেছনে রয়েছে বড় ধরনের কমিশনের সম্পর্ক। কোন মন্ত্রী, এমপি না হয়েও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির ঘনিষ্ঠজনের বিদেশী এ্যাকাউন্টে মোটা অংকের কমিশন গেলে তবেই নাকি কার্যাদেশ চূড়ান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত একটি জাপানী কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিলেই ঐ কমিশনের টাকাটা ক্ষমতাধর ব্যক্তির লন্ডনের এ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
অথচ ঐ কোম্পানির অভিজ্ঞ লোকবলের অভাব রয়েছে। এ ধরনের সেতু তদারকীর জন্য কমপক্ষে দেড়শ দেশীয় অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর প্রয়োজন যাদের আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে কম দরদাতা খোঁজার চেয়ে মান নিশ্চিত করতে পারবে যে প্রতিষ্ঠান তাদেরই কাজ দেয়া উচিত। অন্যথায় যমুনা সেতুর মত ১০০ বছরের স্থলে মাত্র ২০ বছরেই ফেটে যাওয়ার মত দুর্ভাগ্য আবার জাতির ঘাড়ে চেপে বসবে। অথচ এই সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংক, জাপান সরকার বা যেই অর্থ বিনিয়োগ করুক তার পুরো অর্থই সুদে আসলে পরিশোধ করতে হবে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে।
বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের জন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও তদারককারী প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করতে সময় বেশি লাগলে সেতু নির্মাণের সময়ও পিছিয়ে যাবে। ফলে নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩শ ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় হবে নদী শাসন ও সংযোগ সড়কসহ ১ হাজার ৮শ ৯৪ মিলিয়ন ডলার। ইঞ্জিনিয়ারিং কস্ট ৭৬ মিলিয়ন ডলার, জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ১৫০ মিলিয়ন ডলার এবং টোলপ্লাজা নির্মাণসহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যদি সময়ক্ষেপণ করা হয় তবে এই ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
সুত্রঃ সংগ্রাম।
বোল্ড করা লাইন গুলো পড়ে কেন যেন আমারও মনে হচ্ছে আমরা আরেকটি যমুনা সেতু পেতে যাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।