‘আরিফুল হয়তো এখন টেকনাফের পথে’
(২৪ সেপ্টেম্বরের প্রথম আলো’র ১৩ পৃষ্ঠার একটি লেখা থেকে)
হেঁটে হেঁটে দেশজয় করতে বেরিয়েছে বেয়াড়া ছোকরা
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ বুকে ঝুলিয়ে।
কলা পাউরুটি খেয়ে।
কখনোবা অর্ধাহারে অনাহারে
এগিয়ে চলেছে টেকনাফের পথে।
কত গ্রাম-গঞ্জ, নদী, খালবিল
ইস্টিশন, পেট্রোল পাম্প, কাঁচাবাজার, ক্ষেত খামার
কত ব্রিজ, কালভার্ট, কাঁচাপাকা রাস্তা পেরিয়ে
আরিফুলের এই হেঁটে চলা।
আমরা যেখানে আছি, আমরা যা করছি
তা একটুখানি বদলে দিতে পারলেই যেন
আরিফুলের এ হাজার মাইলের ভ্রমণ,
আরিফুলের এ ঘেমে নেয়ে একাকার হওয়া,
টানটান পেশিতে দিগন্তজোড়া ক্লান্তির পর
প্রতি ভোরে নতুন করে জেগে ওঠা প্রাণশক্তি,
সবই সার্থক হয়ে যাবে।
আরিফুল, তেনাদের শুল্কমুক্ত গাড়িগুলোতো
বড় বেশি বেপরোয়া চলে স্বাধীন হাইওয়ের ওপর
তেনাদের ড্রাইভার, আরদালিরাও অনেক শাসায়
ভয় দেখায়, চোখ রাঙায় তোমাকে-আমাকে, আমাদেরকে।
পাঁচ বছর।
আমরা সবাই মিলে ঈশ্বরকে তুলে দিয়েছি তেনাদের হাতে
স্বয়ং ঈশ্বরও যেন তেনাদের আঙুল কোনদিকে হেলছে
সেদিকেই তাকিয়ে থাকেন।
এই পাঁচ বছরের মধ্যে পনের কোটি আরিফুল
বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে গেলেও
পনের কোটি আরিফুলের ত্রিশ কোটি পায়ের
দগদগে ঘা থেকে রক্ত ঝরে ঝরে
আরো দু’একটি পদ্মা মেঘনার জন্ম হলেও
তেনাদের কিছুই যায় আসেনা তাতে।
যখন কোনো রাস্তার পাশে আরিফুল
রহিমা অথবা মইজুদ্দিনের লাশ পড়ে থাকে
স্থানীয় সাংবাদিকের বদান্যতায়
‘কলারোয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩’ ছাপা হয়
তারপর সব শেষ।
যখন তেনাদের কারো গায়ে ধাক্কা লাগে
তখন না হয় ভিন্ন কথা।
ফোন আসে, ওসি সাহেব ধমক খান
ড্রাইভার পাকড়াও হয় আরো কত কী।
আরিফুল, আমরা তো আর তেনাদের কেউ নই
তো? তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ গেলে কী হবে?
আরিফুল, তুমি হাঁটো, আমি হাঁটি
আমার বান্ধব, স্বজন, সতীর্থ আমরা সবাই হাঁটি
শৈশবে, কৈশোরে, যৌবনে, প্রৌঢ়ত্বে আমরা
হেঁটেই চলেছি।
হেঁটে হেঁটে আমরা চল্লিশ বছর পেরুলাম।
আজ আবারো কাগজে তোমার হেঁটে চলার খবর পড়ে
বাংলাদেশের মানচিত্র খুলে আঁতিপাতি করে খুঁজলাম
আরিফুল তোমার ‘টেকনাফ’ কোথায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।