কিছু ভূল কিছু স্মৃতি নাড়া দেয় সর্বক্ষণ
স্বপ্নে প্রজাপতির প্রসঙ্গ টেনে চীনের মাওবাদী দার্শনিক চুয়াং জু বিশ্বে এক জটিল প্যারাডক্সের জন্ম দিয়ে গেছেন। স্বপ্নে তিনি একটি প্রজাপতি দেখেন, যার মাঝে নেই ব্যক্তি চুয়াং জু’র অস্তিত্বের অনুভূতি। তিনি জেগেই প্রশ্ন করলেন, ‘আমি কি সেই চুয়াং জু, যিনি প্রজাপতি হবার স্বপ্ন দেখার আগে চুয়াং জু ছিলাম নাকি এখন আমি সেই প্রজাপতি, যে প্রজাপতি চুয়াং জু হবার স্বপ্ন দেখছে?’
সেই প্রজাপতি এখন চীনা বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে। কারণ, পতঙ্গটির ডানার নিচে সোলার কালেক্টরের অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা আগেই পেয়েছেন। আর সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীরা প্রজাপতির পাখার বর্ণিল আলোকচ্ছটা আর ফিনফিনে ডানার গাঠনিক কাঠামো গবেষণার পর বলছেন, আগামী দিনগুলোতে প্রজাপতির ডানার এ অনন্য যান্ত্রিক কৌশল অতি সস্তা ও অধিকতর কার্যকর সোলার সেল উদ্ভাবনে সহায়তা দেবে।
ফটোভল্টিয়াক ইফেক্টকে কাজে লাগিয়ে সোলার সেলের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদন বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রজাপতির ডানার তাপমাত্রা, গাঠনিক কৌশল, লাইট কালেক্টর নিয়ে গবেষণার পর চীনা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, টিটানিয়াম ডাইঅক্সাইড ছড়ানো আলোক সংবেদী সোলার সেল ফটোয়ানেড নামে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্ম দেয়, যা আলোক রশ্মি থেকে সহজেই ফোটন শুষে নিয়ে সেল থেকে ইলেকট্রন ত্যাগে সহায়তা করে। (সূত্র : নিউসায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিন)।
চীনা গবেষকরা প্রজাপতির ডানাকে টিটানিয়াম মেশানো দ্রবণে মেশান। এরপর তারা প্রজাপতির পাখা থেকে টিটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের একটি অবশেষ বা তলানি বের করে আনেন।
এ তলানির সাহায্যে তারা ফটোয়ানেড তৈরি এবং তা সোলার সেলে ব্যবহারের পর দেখতে পান, সেলের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ১০ গুণ বেড়ে গেছে।
সাংহাই জিয়াও তঙ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ডাই ঝাং সোলার সেলের কার্যকারিতা বাড়ানোর কৌশল সম্পর্কে বলেন, ‘প্যারিস পিকক’ নামের প্রজাপতির আলো-শোষক ডানার বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রযৌক্তিক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগানো গেলে অতিসস্তায় অথচ অধিকতর কার্যকর পন্থায় সোলার সেল উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
ওয়েবসাইট থেকে আরও জানা যায়, চীনাদের পাশাপাশি জাপানি বিজ্ঞানীরাও একই প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছেন। তাদের এ গবেষণার জাগতিক সাফল্য অধিকতর বাস্তব হয়ে গেলে বিশ্বে সোলার সেলের প্রসার যেমন বেড়ে যাবে, তেমনি বিশ্বে বিদ্যুত্ সমস্যার একটা সমাধান পাওয়া যাবে বলে গবেষকরা আশা করছেন।
বর্তমানে সৌরবিদ্যুত্ প্ল্যান্টগুলোতে আলোকসংবেদী রং ব্যবহৃত হয়।
মাইকেল গ্রাটজেলের নামানুসারে এসব সেল ‘গ্রাটজেল সেল’ নামেও পরিচিত। ল্যাবরেটরি টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে, সোলার সেলে ব্যবহৃত আলোকসংবেদী রং-এর চেয়ে প্রজাপতির ডানার সোলার কালেক্টর অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে আলো শুষে নিতে পারে।
চীনা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রজাপতির ডানায় থাকা সোলার কালেক্টর বানানো খুব জটিল নয়। আর এ কাজে সফলতা এলে সোলার সেলের বাণিজ্যিক ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যাবে।
একই গবেষণার ফল নিয়ে ‘ক্যামেস্ট্রি অব ম্যাটেরিয়ালস’ নামের অন্য একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে চীনা গবষেকদের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখা হয়েছে—‘প্রজাপতির পাখার গাঠনিক কাঠামো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এমন একটি কার্যকর ফটোয়ানোড উদ্ভাবন করেছি, যা সোলার সেলে প্রথাগত আলোক সংবেদী রঙের পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে।
’
বলা যায়, বর্ণিল ডানা ছড়িয়ে মনের আনন্দে বাতাসে ভেসে চলা অথবা ফুলের কোমল পাপড়িতে মোহনীয় ভঙ্গিতে বসে থাকা প্রজাপতি আগামীতে সবার নজর কাড়বে আরও বেশি করে। কারণ, এ পতঙ্গ শুধু অধিকতর কার্যকর সোলার সেল উদ্ভাবনেই সহায়তা দেবে না, এটা জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারবে।
হাতেগোনা কয়েক প্রজাতির প্রজাপতি ফসলের ক্ষতি করলেও ২৪ হাজার প্রজাতির বাকিগুলো নির্দোষ। ভিজুয়াল আর্ট ও শিল্পকর্মে ‘উড়ন্ত ফুল’ নামে পরিচিত এ পতঙ্গটি এ কারণে বেশ জীবন্ত। সাড়ে তিন হাজার বছর আগে মিসরের হায়ারোগ্লিফিক স্ক্রিপ্টে প্রজাপতির অঙ্কন দেখে এটা বোঝা যায়, এ পতঙ্গটি সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে।
বর্তমানে এটা শিল্পকলা ও অলঙ্কারের ডিজাইন তৈরির জনপ্রিয় মটিফ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এয়ারক্রাফট ও ঘুড়ি তৈরির ডিজাইন নির্মাণে বিজ্ঞানীরা এখন প্রজাপতির পাখার যান্ত্রিক কৌশল নিয়ে বেশ গবেষণায় মেতেছেন। ন্যানোপ্রযুক্তিবিদদের কাছেও এটার বাহারি পাখা গবেষণার বিষয়।
প্রজাপতির বাহারি উড়ে চলা দেখে চার্লস ডিকেন্স বড় আফসোস করে বলেছিলেন, ‘আমি স্বাধীন হতে চাই। আর প্রজাপতি জন্ম থেকেই স্বাধীন।
’ অথচ খুব বেশি দিন বাঁচে না প্রজাপতি। প্রজাতিভেদে এটার আয়ু ৫ দিন থেকে ১০ মাস। দুটো এন্টেনা, দুটি জটিল চোখ আর একটি সুরযুক্ত মুখ নিয়েই এদের অনিশ্চিত পথচলা। বাংলাপিডিয়া মতে, আমাদের দেশে ১২৪ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত হয়েছে। এটা ঘণ্টায় ১২ মাইল থেকে ২৫ মাইল বেগে উড়তে পারে।
বেশি শীতে এরা টিকতে পারে না বলে এন্টার্কটিকা মহাদেশে প্রজাপতি নেই। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এরা ঘুমায় না। বিশ্রাম নেয় মাত্র। এটা কিছু পাখির মতো পরিযায়ী।
দিবাচর এ পতঙ্গটি সাধারণত মধু খেয়ে বাঁচে।
তবে এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ফুলের রেণু, গাছের রস, পচা ফল, গোবর, পচনশীল মাংস, বালি অথবা ময়লায় দ্রবীভূত অবস্থায় থাকা খনিজ পদার্থ। পরিবেশ রক্ষায় এ পতঙ্গটির অবদান রয়েছে। এটা ফুলের পরাগায়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে প্রজাপতির আলোক সংবেদী রঙিন পাখা নিয়েই বিজ্ঞানীরা মেতে আছেন
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।