পাখি এক্সপ্রেস
ভাবলাম আমি যদি নষ্ট হতে চাই তাহলে খুব সহজেই নষ্ট হতে পারি। “ভালো হতে পয়সা লাগে না” কিম্বা “নষ্ট হতে সময় লাগে না” এ ধরনের কথাগুলো নিছক আ’কথা বা কু’কথা না। অনেক কথার কথা মাড়িয়ে এসে এ কথাগুলো বিশেষ কথা হিসেবে মস্তিষ্ক ভ্রমন করে। আর যাদের মুখে এসব কথা শুনতাম, তাদের ভাবনার সীমানা যে কোটেশন সাইনের বাইরে যায় না, তাও বুঝতে পারতাম। তবুও ভাবি কিভাবে কত সহজে নষ্ট হওয়া যায়, ভাবনার দেমাগে পতিতা হওয়া যায়?
একটি গলির মাথায় দাড়িয়ে আছি।
সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আরেকজন মানুষ। হাঁটার গতি দেখে সুস্থ মানুষ ধারনা করে নিবে লোকটির হয়তো গরু বা গাধা হারানো গেছে। অথবা কোন বিপদে পড়েছে কিম্বা কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে যাচ্ছে। ধুর! এসব ভাবনার কোন টাইম নেই। লোকটি আসলে কোন রূপসীর বাড়ি যাচ্ছে তার সাথে অবৈধ যৌন ইচ্ছার কবুল ঘটাতে।
এমনকি লোকটি এখনও সিটিং কমোডে পায়খানা করতে পারে না। আবার বসুন্ধরা টয়টেল টিস্যুও ব্যবহার করে না। লোকটি একটি ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ লম্পট জোচ্চুর। যা শালা আমি তার সাথে কথাই বলবো না। এমনকি জীবনেও এ লোকের সাথে চা খাবো না।
- এরকম ভাবার পর কি খুব সার্থকভাবে নষ্ট হতে পেরেছি? পারার যথেষ্ট কারণ আছে। যেহেতু আমি একবারও ভাবিনি আমার সাথে কথা বলার মতো সময় লোকটির আছে কিনা! সেহেতু মনে হয় ভাবনার মামলায় বেশ্যা হতে পেরেছি। কিন্তু আসলেই যে নষ্ট হতে কিছু সময় লেগেছে। এটি মেনে নেয়া যাচ্ছে না। খুব সুবিধা হতো, যদি না আরো শর্টকাটে নষ্ট হওয়া যায়।
ভালো করে মনে করার চেষ্টা করলাম পৃথিবীর ক’জন দার্শনিকের নাম জানি, কয়টা ধর্ম গ্রন্থকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিতে জানি, কয়টি মতবাদের সুস্পষ্ট সমালোচনা করতে পারি, কতজন বিখ্যাত লেখকের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানি, এ পর্যন্ত কত হাজার বই পড়েছি? ভেবে দেখলাম প্রায় প্রতিটির উত্তরেই একটি ঈর্ষনীয় সংখ্যা বেরিয়ে আসছে। ও খোদা! তার মানেতো অনেক কিছুই জানি। এবার ভেবে দেখি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ পৃথিবীর সব ক’টি বিখ্যাত যুদ্ধে নির্যাতিতদের পক্ষে আমার দীর্ঘশ্বাস আছে কিনা? এবারও দেখলাম মানবতার পক্ষে কথা বলতে বলতে আমার মোটা জিহ্বা ক্ষয়ে ক্ষয়ে জামদানি শাড়ির মতো পাতলা হয়ে যাচ্ছে। তার মানেতো আমার সুপ্রশস্থ একটি আত্মা আছে, যা যথেষ্ট সৎ। এবার আরো কম সময়ে নষ্ট হওয়া যায়।
এবার বলবো সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরী। শ্রমের সুষ্ঠু অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কিছু শ্রমিকের বেওয়ারিশ কুত্তার মতো লাশ হবার প্রয়োজন আছে। এদের শরীরে মৃত্যুর জোশ আনার জন্য প্রয়োজন কিছু শ্লোগান, বক্তব্য, কবিতা ইত্যাদি রচনা করা। কারণ দীর্ঘ জ্ঞান আহরনের পর দেখলাম সংগ্রামই আসল অন্ন। - এসব করে কি আসলেই কম সময়ে নষ্ট হওয়া গেলো? বুঝতে পারছি না।
না, নষ্ট হওয়ার পক্রিয়ায় ধাপসমূহ আরো কমিয়ে আনতে হবে। এবারও একটি গলির মুখে দাড়িয়ে আছি। পরিচিত এক মানুষ একটি মেয়ে নিয়ে ইলেক্ট্রিসিটিহীন গলির মাথায় চটপটির দোকানের পাশে (আড়ালে) গিয়ে দাড়ালো। হা হা হা! ছেলেটি কেন মেয়ে নিয়ে হাটে, তাতো আমি জানি! আরো জানি সে কেন অন্ধকারে দাড়িয়ে আছে। নষ্ট হয়ে গেছে, সব নষ্ট হয়ে গেছে।
ছেলেটি এ মেয়েকে বিয়ে করবে। শীত আসার আগে আগে ভাদ্র মাসের কুত্তার মতো কিছু পোলাপান বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এ পোলারেও শীতের রোগে পেয়েছে। নিশ্চিত আসার পথে রিকশায় বসে বসে এ ছেলেটি সাথে থাকা মেয়েটির স্তন পিষিয়েছে, কোমরের উপর ঝুলে থাকা মাংস টিপেছে এমনকি তলপেটেও হাত দিয়ে চাপ দিয়েছে। থু! এস পোলাপানের মুখে থু মারি।
এসব পোলাপানের কারণেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এত কম এবং জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনও এদের নষ্টামির কারণে। এসব চরিত্রহীন রাস্কেলের জন্যই জাতি এতো পিছিয়ে আছে। আমার মোটা ভুড়ির তলে চেপে ধরে এসব পাপিষ্ঠকে দম বন্ধ করে মারা দরকার। তার আগে একবার ভেবে নিই- আমি কি এবার কামিয়াব হতে পারলাম? নাহ! এবারও তৃপ্তি পাওয়া গেলো না। মনে হয় সময় আরো কমিয়ে আনা যায়।
কিন্তু কিভাবে? পন্থা বের করার জন্য এখন একটি সিগারেট এবং এক কাপ চা খাওয়া জরুরী। জুনিয়র বন্ধু মোতালেবকে ফোন করা দরকার। ছেলেটি অত্যন্ত ভালো। আমাকে খুব শ্রদ্ধা করে এবং প্রয়োজনের সময় পরামর্শ নেয়। আসলে সে জ্ঞানী লোককে মোশায়িদা করতে জানে।
মোতালেব আমাদের আড্ডায় প্রায়ই চা’খরচ চালিয়ে দেয়। পকেটের টাকা খরচ করতে তার হাত কাঁপে না। এমন ভালো ছেলে আসলেই এ মহল্লায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু মোতালেব কি তাড়াতাড়ি আসতে পারবে? নাকি সেও কারো ঘরের বৌ নিয়ে শুয়ে শুয়ে মাংস বিলাসে ব্যস্ত? বলাতো যায় না, যে হারে ইয়ং পোলাপান আদর্শচ্যুত হচ্ছে!
এখনকার কিছু পোলাপান মার্কসবাদ আর লেলিনবাদ নিয়ে লাফালাফি করে। আশ্চর্য এদের হাবভাব।
কিন্তু আমি খালি ভাবি তাদের বোকামি নিয়ে। নি:সন্দেহে মার্কসবাদ ইত্যাদি তার আবেদন হারিয়েছে। কারণ মার্কসবাদীরা এখন আর আগের ট্র্যাকে নেই। তারা এখন গেজ পরিবর্তন করে ননগেজ লাইনে চলে। একটি নতুন মতবাদ সৃষ্টির আবেদন কেন এদের মাথায় ঢুকে না।
পৃথিবীর সব পুরাতন ইজম ভ্যানিশ করে নতুন ইজম ক্রিয়েট না করলে অদূর ভবিষ্যতে এলিয়েনরা এ পৃথিবী দখল করে নিবে। এতে কোন সন্দেহ যে নেই, এটা বুঝাতে আর পারলাম কই! আমি অবশ্য আমার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে কড়ায়গন্ডায় জ্ঞান নিয়ে নিজস্ব অথচ সর্বশেষ্ঠ মতবাদ নিয়ে চলি। মলত্যাগ থেকে শুরু করে প্রেমিকাকে চুমু খেতে গেলেও অত্যন্ত সততার সাথে পারসোনাল ইজমের প্র্যাকটিস করি। এভাবেই আমি সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। একটি ভালো, জ্ঞানী ইত্যাদির তালিকা করা দায়িত্ব পেলে অবশ্যই একমাত্র নিজের নাম দিয়েই তালিকা প্রকাশ করবো।
আমার অনেক বন্ধু আছে, থাকতে পারে। কিন্তু যেই বন্ধুরা যদি আমার ইজমের বাইরে মন্তব্য করে কিম্বা পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করে, তাহলে কিভাবে আর বন্ধুর লিস্টে থাকে! এসব কুলাংগারের সাথে কোন সদভাবই থাকতে পারে না। এরা চরমভাবে অধপতিত, তীব্রভাবে পথভ্রষ্ট এবং ভয়ংকরভাবে নষ্টমতে নিক্ষেপিত। যেহেতু আমি বাকপটু এবং ধূর্ত, সেহেতু আমার প্রচুর বন্ধু সমাগম ঘটবে। আবার যেহেতু আমি একটি মতবাদের প্রবক্তা, সেহেতু আমার বিরোধী থাকবেই।
এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
এবার মনে হয় নষ্ট হতে গিয়ে ব্যবহৃত সময়ের পরিমান একেবারেই কমিয়ে আনা গেলো। আলহামদুলিল্লাহ আমি কামিয়াব হয়েছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।