আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুনদেশের ঈদসংখ্যায় চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন পূরবী বসু



নতুনদেশের ঈদসংখ্যায় চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন পূরবী বসু গল্পটা শেয়ার করলাম। প্রতিদিন কাহারো সমান নাহি যায় পূরবী বসু সোমবার চোখ খুলে শিয়রের কাছে তাকিয়ে দেখি ছ’টা পাঁচ। তিন মিনিটের মধ্যেই হুস হুস করে ছ’টা দু ই-এর ট্রেনটা চলে যায়। ছ’টা দশে খবরের কাগজের ছেলেটি এসে বন্ধ গেটের ওপর দিয়ে দৈনিক কাগজটা ছুঁড়ে মারে ভেতরের বাগানে। বাড়িওয়ালার পরিবার থাকে সেখানে।

দোতলার এ ঘর থেকে মাটিতে পড়ে থাকা কাগজটা দেখতে পাই না আমি। ফলে জানি না কী কাগজ রাখে ওরা। ওদের রাজনৈতিক বিশ্বাস জানার আগ্রহ বোধ করি না এজন্যে যে ভয় হয়, জানলে এই বাড়ির-ই একটা অংশে আমার প্রিয়জনেরা থাকে এটা মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে আমার। আমি বিছানার ওপর জোড়াসন কেটে বসে একটু যোগ ব্যায়াম করার চেষ্টা করি। বহুদিনের অভ্যেস, যদিও সবগুলো মুদ্রা আগের মতো আর করতে পারি না।

শরীর কিছুটা ভারি হয়ে এসেছে। তাছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতেপায়ে গাঁটে গাঁটে কীরকম যেন অতিরিক্ত ঋজুতা টের পাই। আগের মতো শরীরটা ইচ্ছেমতো আর বাঁকাতে পারি না। মনে হয় ওটা আর আমার আয়ত্বে নেই। আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে - না হলেও ন্যুনতম স্বায়ত্বশাসন ঘোষণা করে বসে আছে।

আমার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ যেন আর মেনে নিতে চায় না তারা। মাঝে মাঝে এটা স্বীকার করতে কষ্ট হয়। তবু, এই বোধটা মনের ভেতর চেপে বসে থাকেই - মনে হয়, এটা আমার নিজের শরীর নয়, অন্য কারোর দেহ যেন বহন করে চলেছি। কেমন অপরিচিত মনে হয় নিজেকে। ছ’টা বিশ।

পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় লম্বা ছিপছিপে শ্যামলা বৌটি। সদ্য ঘুম থেকে জেগেছে বোঝা যায়। কাপড়চোপড়ে যথেষ্ট ভাঁজ। কপালের সিঁদূর লেপ্টে আছে মাঝখানের সম্পূর্ণ কপাল জুড়ে। সামনের ছোট ছোট চু লগুলো কিছুটা এলোমেলো।

সে একটা বদনার মত প্লাস্টিকের পাত্র থেকে আস্তে আস্তে জল ঢেলে দেয় সারি সারি তার বেশ কয়েকটি ফুলের টবে। তারপর রেলিং ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, আকাশ দেখে, দেখে নীচে সরু রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা। একটা ন্যাকড়া দিয়ে বারান্দার রেলিং, খাম্বা মোছে। তারপর আবার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। ছ’টা আঠাশ।

বৌটার গাট্টাগোট্টা বরটি ঘর থেকে চোখ কচলাতে কচলাতে বেরিয়ে আসে। কী কথা হয় দুজনের মধ্যে। লোকটি বৌটির ঘাড়খানা ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে তাকে ঠেলতে ঠেলতে ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে যায়। দরজা বন্ধ হয়ে যায় দড়াম করে। ছ’টা পঁয়ত্রিশ।

বৌমা আমার জন্যে চা আর টোস্ট বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢোকে। ‘বাবা, আপনার চা। ’ ‘ডালপুরি, ডালপুরি’ , ‘গরম গরম ডালপুরি’ বলতে বলতে সেই লম্বা-দাড়িওয়ালা লোকটি মাথায় ঝাঁকা নিয়ে চলে যায় সামনের রাস্তা দিয়ে। দুতিন বার চায়ে চুমুক দিতে না দিতেই বাইরে কড়া নড়ে ওঠে। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আমি এসে ওদের বাইরের ঘর যেহেতু দখল করে রয়েছি, বৌমা বা আকাশ আসার আগে নিজে গিয়েই দরজা খুলে দিই।

বাড়ির ঠিকে কাজের মেয়ে জবা ঘরে ঢোকে প্রাত্যহিক ভোরের কাজ করবার জন্যে। আমি চা ও টোস্টে মনোনিবেশ করি। ‘বাবা, ঘুম হয়েছিল ঠিকমতো?’ আমার একমাত্র পুত্র আকাশ দরজায় উঁকি মেরে প্রশ্ন করে। ‘হ্যাঁ, খুব ভালো ঘুমিয়েছি। ’ ছ’টা বিয়াল্লিশ।

চা প্রায় শেষ। আমি আবার ঐ লাগোয়া দোতলাটির দিকে তাকাই। দেখি, সেই অল্পবয়সী শ্যামলা বৌটি আট দশ মাসের একটি বাচ্চাকে কোলে করে বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে। তারপর তার সাজানো ফুলের টবগুলোর পাশে একটা মোড়া টেনে বসে। শাড়ির নীচে হাত ঢুকিয়ে ব্লাউজের বোতাম খু লে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করে।

তার বরটিকে অনেকক্ষণ ধরে আর দেখা যায় না। হয় সে আবার ঘুমুচ্ছে, অথবা বাজারে গেছে, নয় শেভ করছে- চান করছে, কিংবা অফিসের অন্য কোন কাজে- লেখালেখির অথবা কম্পিউটারে, যেমন করে প্রতিদিন আমার ছেলে, ব্যস্ত রয়েছে। এদিকে আর সে আসে না। এই নিভৃতিতে মা ও শিশু পরস্পরের আরো কাছে চলে আসে। বৌটির বক্ষসহ বাচ্চাটির পুরো মাথা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালো করে ঢাকা।

বেলা তখন সাতটা বাজতে দশ মিনিট বাকি। আমি মুগ্ধ হয়ে দূর থেকে বসে বসে এই ম্যাডোনা-রূপ দেখি। দেখতে দেখতে সাতটা-সোয়া সাতটা বেজে যায়। আমি নিশ্চল বসে থাকি খাটের ওপর। সকাল সাড়ে সাতটা।

রাস্তার উল্টোদিকের কিন্ডারগারটেন স্কুলের গেইট খোলার ঘড়্‌ ঘড়্‌ শব্দ। আমি সচকিত হই। দেখি, মাঝে মাঝে হাত-পা ছুড়তে ছুঁড়তে ম্যাডোনার সন্তান তখনও মায়ের শরীর শুষে নিয়ে পুষ্ট হবার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার চোখ খুলে শিয়রের কাছে তাকিয়ে দেখি ছ’টা তিন। ছয় মিনিটের মধ্যেই ছ’ টা দুই-এর ট্রেনটা হুস হুস করে চলে যায়।

ছ’টা বারোতে খবরের কাগজের ছেলেটি এসে বন্ধ গেটের ওপর দিয়ে দৈনিক কাগজটা ছুঁড়ে মারে ভেতরের বাগানে। বাড়িওয়ালার পরিবার থাকে সেখানে। দোতলার এ ঘর থেকে মাটিতে পড়ে থাকা কাগজটা দেখতে পাই না আমি। ফলে জানি না কী কাগজ রাখে ওরা। ওদের রাজনৈতিক বিশ্বাস জানার আগ্রহ বোধ করি না এজন্যে যে ভয় হয়, জানলে এই বাড়ির-ই একটা অংশে আমার প্রিয়জনরা থাকে এটা মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে আমার।

আমি বিছানার ওপর জোড়াসন কেটে বসে একটু যোগ ব্যায়াম করার চেষ্টা করি। বহুদিনের অভ্যেস, যদিও সবগুলো মুদ্রা আগের মতো আর করতে পারি না। শরীর কিছুটা ভারি হয়ে এসেছে। তাছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতেপায়ে গাঁটে গাঁটে কীরকম যেন অতিরিক্ত ঋজুতা টের পাই। আগের মতো শরীরটা ইচ্ছেমতো আর বাঁকাতে পারি না।

মনে হয় ওটা আর আমার আয়ত্বে নেই। আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে - না হলেও ন্যুনতম স্বায়ত্বশাসন ঘোষণা করে বসে আছে। আমার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ যেন আর মেনে নিতে চায় না তারা। মাঝে মাঝে এটা স্বীকার করতে কষ্ট হয়। তবু, এই বোধটা মনের ভেতর চেপে বসে থাকেই - মনে হয়, এটা আমার নিজের শরীর নয়, অন্য কারোর দেহ যেন বহন করে চলেছি।

কেমন অপরিচিত মনে হয় নিজেকে। ছ’টা সতেরো। পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় লম্বা ছিপছিপে শ্যমলা বৌটি। সদ্য ঘুম থেকে জেগেছে বোঝা যায়। কাপড়চোপড়ে যথেষ্ট ভাঁজ।

কপালের সিঁদূর লেপ্টে আছে মাঝখানের সম্পূর্ণ কপাল জুড়ে। সামনের ছোট ছোট চু লগুলো কিছুটা এলোমেলো। সে একটা বদনার মত প্লাস্টিকের পাত্র থেকে আস্তে আস্তেজল ঢেলে দেয় সারি সারি তার বেশ কয়েকটি ফুলের টবে। তারপর রেলিং ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, আকাশ দেখে, দেখে নীচে সরু রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা। একটা ন্যাকড়া দিয়ে বারান্দার রেলিং , থাম্বা মোছে।

তারপর আবার দাঁড়িয়ে থাকে রেলিং ধরে। ছ’টা ত্রিশ। লুঙ্গি পরা বৌটার গাট্টাগোট্টা বরটি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। কী কথা হয় দু জনের মধ্যে। লোকটি বৌটির দুই গালে পর পর কয়েকটি চড় বসিয়ে দেয়।

সেই সঙ্গে চিৎকার করে বলে কিছু- শব্দগুলো শুনতে না পারলেও মুখোভঙ্গি থেকে বুঝি খিস্তি করা হচ্ছে। বৌটি কিছু বলার চেষ্টা করে। তখন লোকোটি তার ডান হাত দিয়ে মেয়েটির ঘাড়টি চেপে ধরে করে তাকে ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে যায়। দরজা বন্ধ হয়ে যায় দড়াম করে। ‘ডালপুরি, ডালপুরি’ , ‘গরম গরম ডালপুরি’ বলতে বলতে সেই লম্বা-দাড়িওয়ালা লোকটি মাথায় ঝাঁকা নিয়ে চলে যায় সামনের রাস্তা দিয়ে।

ছ’টা সাঁইত্রিশ। বৌমা আমার জন্যে চা আর টোস্ট বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢোকে। ‘বাবা, আপনার চা। ’ কয়েকবার চায়ে চুমুক দিতে না দিতেই বাইরে কড়া নড়ে ওঠে। তিন সপ্তাহ ধরে আমি এসে ওদের বাইরের ঘর যেহেতু দখল করে রয়েছি, বৌমা বা আকাশ আসার আগে, নিজে গিয়েই দরজা খুলে দিই।

বাড়ির ঠিকে কাজের মেয়ে জবা ঘরে ঢোকে প্রাত্যহিক ভোরের কাজ করবার জন্যে। আমি চা ও টোস্টে মনোনিবেশ করি। ‘বাবা, ঘুম হয়েছিল ঠিকমতো?’ আমার একমাত্র পুত্র আকাশ দরজায় উঁকি মেরে প্রশ্ন করে। ‘হ্যা, খুব ভালো ঘুমিয়েছি। ’ ছ’টা পঁয়তাল্লিশ।

চা প্রায় শেষ। আমি আবার ঐ লাগোয়া দোতলাটির দিকে তাকাই। দেখি, সেই অল্পবয়সী শ্যামলা বৌটি আট দশ মাসের একটি বাচ্চাকে কোলে করে বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে। তারপর তার সাজানো ফুলের টবগুলোর পাশে একোটা মোড়া টেনে বসে। শাড়ির নীচে হাত ঢুকিয়ে ব্লাউজের বোতাম খু লে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করে।

এরপর তার বরটিকে অনেকপক্ষণ ধরে আর দেখা যায় না। হয় সে আবার ঘুমুচ্ছে, অথবা বাজারে গেছে, নয় শেভ করছে- চান করছে, কিংবা অফিসের অন্য কোন কাজে- লেখালেখির অথবা কম্পিউটারে, যেমন করে প্রতিদিন আমার ছেলে, ব্যস্ত রয়েছে। এদিকে আর আসে না। এই নিভৃতিতে মা ও শিশু পরস্পরের আরো কাছে চলে আসে। বৌটির বক্ষসহ বাচ্চাটির পুরো মাথা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালো করে ঢাকা।

বেলা তখন সাতটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। আমি মুগ্ধ হয়ে দূর থেকে বসে বসে এই ম্যাডোনা-রূপ দেখি। দেখতে দেখতে সাতটা- সোয়া সাতটা বেজে যায়। আমি নিশ্চল বসে থাকি খাটের ওপর। সকাল সাড়ে সাতটা।

রাস্তার উল্টোদিকের কিন্ডারগারটেন স্কুলের গেইট খোলার ঘড় ঘড় শব্দ। আমি সচকিত হই। দেখি, মাঝে মাঝে হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে ম্যাডোনার সন্তান তখনও মায়ের শরীর শুষে নিয়ে পুষ্ট হবার চেষ্টা করছে। বুধবার চোখ খুলে শিয়রের কাছে তাকিয়ে দেখি কাঁটায় কাঁটায় ছ’টা। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ছ’ টা দুই-এর ট্রেনটা হুস হুস করে চলে যায়।

ছ’টা আটে খবরের কাগজের ছেলেটি এসে বন্ধ গেটের ওপর দিয়ে দৈনিক কাগজটা ছুঁড়ে মারে ভেতরের বাগানে। বাড়িওয়ালার পরিবার থাকে সেখানে। দোতলার এ ঘর থেকে মাটিতে পড়ে থাকা কাগজটা দেখতে পাই না আমি। ফলে জানি না কী কাগজ রাখে ওরা। ওদের রাজনৈতিক বিশ্বাস জানার আগ্রহ বোধ করি না এজন্যে যে ভয় হয়, জানলে এই বাড়ির-ই একটা অংশে আমার প্রিয়জনেরা থাকবে এটা মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে আমার।

আমি বিছানার ওপর জোড়াসন কেটে বসে একটু যোগব্যায়াম করার চেষ্টা করি। বহুদিনের অভ্যেস, যদিও সবগুলো মুদ্রা আগের মতো আর করতে পারি না। শরীর কিছুটা ভারি হয়ে এসেছে। তাছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতেপায়ে গাঁটে গাঁটে কীরকম যেন অতিরিক্ত ঋজুতা টের পাই। আগের মতো শরীরটা ইচ্ছেমতো আর বাঁকাতে পারি না।

মনে হয় ওটা আর আমার আয়ত্বে নেই। আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে - না হলেও ন্যুনতম স্বায়ত্বশাসন ঘোষণা করে বসে আছে। আমার নিয়ন্ত্রণ যেন আর মেনে নিতে চায় না তারা। মাঝে মাঝে এটা স্বীকার করতে কষ্ট হয়। তবু, এই বোধটা মনের ভেতর চেপে বসে থাকেই - মনে হয়, এটা আমার নিজের শরীর নয়, অন্য কারোর দেহ যেন বহন করে চলেছি।

কেমন অপরিচিত মনে হয় নিজেকে। ছ’টা বিশ। পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে আজ দাঁড়ায়নি সেই লম্বা ছিপছিপে শ্যমলা বৌটি। ছ’টা চব্বিশ। পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে এখনো দাঁড়ায়নি লম্বা ছিপছিপে শ্যমলা বৌটি।

ছ’টা ত্রিশ। পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে এখনো দাঁড়ালো না লম্বা ছিপছিপে শ্যমলা বৌটি। ছ’টা চৌত্রিশ। বৌমা আমার জন্যে চা আর টোস্ট বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢোকে। ‘বাবা, আপনার চা।

’ ছ’টা একচল্লিশ। পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে এখনো দাঁড়ালো না লম্বা ছিপছিপে শ্যমলা বৌটি। ‘ডালপুরি, ডালপুরি’ , ‘গরম গরম ডালপুরি’ বলতে বলতে সেই লম্বা-দাড়িওয়ালা লোকটি মাথায় ঝাঁকা নিয়ে চলে যায় সামনের রাস্তা দিয়ে। চায়ে চুমুক দেওয়া হয় না আমার। আমি চুপচাপ বসে থাকি।

বাইরে কড়া নড়ে ওঠে। তিন সপ্তাহ ধরে আমি এসে ওদের বাইরের ঘর যেহেতু দখল করে রয়েছি, বৌমা বা আকাশ আসার আগে, নিজে গিয়েই দরজা খুলে দিই। বাড়ির ঠিকে কাজের মেয়ে জবা ঘরে ঢোকে প্রাত্যহিক ভোরের কাজ করবার জন্যে। আমি চা ও টোস্টের দিকে তাকাই। বুঝি, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চা।

তবু ছুঁয়ে দেখি না। ‘বাবা, ঘুম হয়েছিল ঠিকমতো?’ আমার একমাত্র পুত্র আকাশ দরজায় উঁকি মেরে প্রশ্ন করে। ‘হ্যাঁ, খুব ভালো ঘুমিয়েছি। ’ ছ’টা পঞ্চাশ। পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় না লম্বা ছিপছিপে শ্যমলা বৌটি।

কিন্তু তার লুঙ্গি পরা গাট্টাগোট্টা বরটি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। কোলে সাত আট মাস বয়সের সেই শিশু। উচ্চস্বরে কাঁদছে বাচ্চাটা। শিশুটিকে নাড়িয়ে, ঝাঁকিয়ে দলামোচড়া করেও কোন মতেই ওর কান্না থামাতে পারছে না লোকটি। আমি এখান থেকে শিশুটির কান্না ও লোকটির তাকে শান্ত করবার বিভিন্ন প্রচেষ্টার অস্পষ্ট শব্দাবলী শুনতে পাচ্ছি।

সাতটা বাজে। পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে এখনো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো না সেই লম্বা ছিপছিপে শ্যমলা বৌটি। সকাল সাড়ে সাতটা। রাস্তার উল্টোদিকের কিন্ডারগারটেন স্কুলের বিশাল গেট খোলার ঘড় ঘড় শব্দ। আমার চা ঠান্ডা হয়ে যায়।

আমি তাকিয়ে থাকি। অপেক্ষা করি। কিন্তু পাশের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় না আজ সেই লম্বা ছিপছিপে শ্যামলা বৌটি। http://www.notundesh.com/shahitta_news7.html

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।