আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেটে গেছি বিরান পথে! আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প; কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়!
ফটোগ্রাফিতে টাইমিং খুব জরুরী। টাইমিং ঠিক না হলে একটা ছবি যেমন আনতে চাওয়া যায় তেমন নাও আসতে পারে। ফটোগ্রাফিতে হয়তো এটাকেই বলে, ব্যাড টাইমিং। কিন্তু আমার ব্যাড টাইমিং ঘটল অন্যভাবে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থাপনা নিয়ে একটা ফটো ব্লগ লিখার ইচ্ছে ছিল, তাই বিভিন্ন স্থাপনার ছবি তুলে বেড়াচ্ছি কয়েকদিন ধরে।
আজ গিয়েছিলাম নব নির্মিত স্টেডিয়ামের ছবি তুলতে, সামনে মাসে নাকি ওটা প্রধান মন্ত্রী উৎবোধন করবেন। ফোটু যেন ভাল আসে, তাই উঠলাম দেয়ালের উপর। ফোডু তুলে যখন ব্যাক আসছি, এমন সময় চার পাঁচ জন লোক এসে ঘেরাও করল। “এই আপনারা কোথাদিয়ে ঢুকলেন, দেয়ালের ওপর কি করছিলেন? জানেন আপনাকে এখন গ্রেফতার করতে পারি। ” মেজাজটা খিচড়ে গেল, কোথাকার কে, দেয়ালে উঠে ছবি তুলার জন্য গ্রেফতার করার হুমকি দেয়।
একটু রাফ ভাবেই উত্তর দিলাম, “গ্রেফতার করলে করেন, দেয়ালে উঠেতো কোন অন্যায় করিনি। কয়েকটা ছবি তুলেছি শুধু। ” আমি কি আর জানি, স্টেডিয়ামের পেছনে একটা বোমা পুতা আছে, যেটা এখনও ডিফিউজ করা হয়নি; আর এরা সিভিল ড্রেসে র্যাব!!! একেবারে উদ্ধত ভাষায় প্রশ্ন, “ছবি তুলছেন মানে! আপনারা কি মিডিয়ার লোক? আইডি দেখি। ” “না আমরা মিডিয়ার লোক না, আইডি নাই। আর আপনারা জেরা করার কে?” একজন সাথে সাথে একটা পিস্তুল বের করল, আমি ভাবলাম খাইছে; দিনদুপুরে ছিনতাই কারী! ফাকা স্টেডিয়াম কিছু করার নাই, আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড সংগে বাইক, দুই জনের দুটি করে চারটি মোবাইল, আর আমার সনি ডি.এস.সি.এইচ৩ মডেলের ডিজিটাল ক্যামেরা; সব কিছু দিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু তার পরে যখন আইডি বের করে দেখাল তারা র্যাব। একটু সস্থি পেলাম। যাক অন্তত ছিনতাই হচ্ছে না। পরিচয় দেয়ার পর তাদের পাওয়ার বেড়ে গেছে, আর আমি ভেজা বেড়াল, “কি করিস?” “জ্বি, স্টুডেন্ট। ” “কোথায়?” “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
” “কি!!! কুষ্টিয়া?” “জ্বি। ” পাশের লোকটাকে বলল, “এই দেখতো লিফলেটে কুষ্টিয়ার ব্যাপারে কিছু লেখা আছে নাকি?” তখনও ব্যাপারটা বুঝতে আমার অনেক দেরি, বোমার পাশে ‘মুক্তির পথ’ নামে একটা লিফলেট পাওয়া দেছে। শালা আমার ভাগ্য লেখাপড়া করি, শিবিরের ঘাটিতে, আর কুষ্টিয়া মানেই চরমপন্থি। “বোমার ব্যাপারে কি জানিস?” “বোমা!!! লিফলেট!!! এসব কি বলছেন? আমি কিছুই জানি না এ ব্যাপারে। ” “জাননা না, দেখি কিসের কিসের ছবি তুলছ।
” ডিজিটাল ক্যামেরা সো ছবি দেখাতে প্রবলেম নাই, কিন্তু ছবি দেখে একজন বলে, “স্যার চাঁপাই এর সব বড় বড় স্থাপনার ছবি; জঙ্গিরা এগুলো বিল্ডিং টার্গেট করেছে। ” আমি হাসব না কাঁদব বুঝে পাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত যা হল দুই ঘন্টা যাবত জিজ্ঞাসা করে ছেড়ে দিল। অবশ্য নাম ঠিকানা নিয়ে রাখল। বাড়ি ফিরছি আর মনে মনে ভাবছি, ফটোগ্রাফির ব্যাড টাইমিং!
এখনকার মত ছেড়ে দিলেও ব্লগাররা দোয়া করেন, আমার ব্যাড টাইমিং এখানেই যেন শেষ হয়ে যায়, ভবিষ্যতে যেন এটা নিয়ে আর ঝামেলা না হয়।
বেশ টেনশিত আছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।