আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন
প্রিয় অন্যজন,
কি খবর? বছর কয়েক দেখা নেই। বেশ ফুলেফেঁপে উঠেছো দেখি! যে কয়দিন অনুপস্থিত ছিলাম তাতে তোমার এরকম বদলে যাওয়াটা টের পাই নি।
ঘরের এককোনায় তিনটে ধুলোজমা গিটার পড়ে আছে দেখা যায়। গিবসনের ফ্রেডবোর্ডটা বেঁকে গেছে, নাম না জানা ইন্ডিয়ানটা প্রায় মৃত আর এককালে আমাদের প্রিয় নীল সিগনেচারটার কি অবস্থা! মরচে ধরা তার আর ভাঙ্গা নবগুলো দেখে মন মেজাজ দুটোই বিগড়ে গেল, এজন্যে পস্তাতে হবে বলে দিচ্ছি। উইপোকারা দেখি একেকটা কবি হয়ে উঠেছে বইগুলো খেতে খেতে! তা উঠুক, ইদানীং কবিদের সংখ্যা পড়তির দিকে; নতুন করে জন্ম নেয় না আর।
তুমি বরং পুরনো তানপুরা আর তবলার কথা স্মরণ কর...
শুনলাম তামাক পুড়িয়ে শান্তি পাচ্ছ না নাকি ইদানীং; বুকের ভেতর ডিজেল ইঞ্জিনগুলো তুমুল ব্যস্ততায় সীসে জমাচ্ছে। ভালো ভালো! ওটা নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফ্যালো নাহয়। তারপর সবাইকে পড়ে শোনাও, লোকে আহা উহু করুক। তারপর জাতে উঠে তুমি খুশি মনে ঘাড় দোলাবে। বেশি কর্কশ হয়ে গ্যালো নাকি? আচ্ছা আচ্ছা...
হলুদ কামিজ-শাদা ওড়নাকে নিয়ে কিছু বলি, ওর নম্বরটা মনে আছে? ভাবছি ওকে একটা কল দেবো।
ওপাশ থেকে "হ্যালো" শোনামাত্রই যা যা বল নি বলে দেবো। ও কিনা অনেককিছুই ভুল ভেবে বসে আছে। ভয় পেয়ো না, বেশিক্ষণ কাঁদবে না সে। গুজব শুনলাম চোষার জন্য নতুন আইসক্রীম পেয়েছে নাকি।
দুঃখ পেলে।
তা পাবারই কথা, ওভাবেই বলছি। ওই তেপ্পান্নজনের কথা মনে আছে? যারা কিনা অজান্তে তোমার আমার চেতনায় সার দিয়েছিলো বিনে পয়সায়! অকৃতজ্ঞের মতো ওদের কথা ভুলে গেছো। তোমাকে খোঁজা হয়েছিলো গত চার বছরে কতবার, কিন্তু তুমি কাঁচের দেয়াল আর শিশ্ন পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলে। ওরাও হতাশ হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। নতুন যাদের জুটিয়েছ তারা চমৎকার মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়।
টের পাও নি!
ধারণা করি মাখন হবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে তোমার শিরদাঁড়ার হাড়গুলো। আগে আমরা বাতাসে কিছু চড়থাপ্পড় ছুঁড়ে দিতাম, এখন তুমি নাকি গর্ত খোঁড় মৃদু ঝড়ের পূর্বাভাসেই। এত আগুন কি উদ্যোমেই না ঝরাচ্ছো! অথচ আগুনগুলো আমিই জ্বালিয়ে গিয়েছিলাম। জানতাম সঠিক পরিচর্চা না করলে নিভে যাবে, তাই হলো। ধোঁয়া উঠছে শুধু, এটাও খেয়াল কর নি!
পঞ্চাশোর্ধ অধ্যাপিকার কথা কি মনে পড়ে? উনি কিনা প্রতিরাতে আমাদের স্মরণে তথাকথিত ঈশ্বরের কাছে দু'হাত তোলেন।
ভাগ্যিস রক্তমাংসগুলো এত বছর আগে ধারে দেন নাই, সুদে আসলে শোধ করতে গেলে দু-তিনটে সমুদ্র বেচে দিতে হবে। আমি অবশ্য রুই মাছ আর ফুলকপির স্বাদের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। তারুণ্য বেচে পয়সা পাবার সময় এসেছে, এজন্যেই উনাকে মনে পড়ছে একটু বেশি করেই।
কৈশোরের জন্মলগ্ন থেকে যে নদীটা অস্তিত্বে প্রলেপ দিচ্ছিলো তার কথাও ভুলে গেলে? দশ বছর ধরে ওর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখেছিলাম। মারা যাচ্ছে সে নাকি, পলল ক্ষোভে।
শেষবার দেখা করতে যাবে না? আমি যাবো। কিংবা জেলখানার পাশের রাস্তা নইলে ওই ব্রিটিশ আমলের গন্ধওয়ালা প্লাষ্টারবিহীন দালানগুলোর প্রয়োজনীয়তাও আমার কাছে শেষ হয় নি। অনন্তকাল ধরে ওদিকে হাঁটার প্রতিশ্রুতি আছে আমার।
তোমাকে সারিয়ে তুলবার জন্য নয়, বেঁচে থাকবার তাগিদেও নয়। এমন কি দয়া করেও নয়... শুধুমাত্র সময়ের অনুযোগেই আমি ফিরছি।
শীঘ্রই ফিরে যাবার সম্ভাবনাও নেই। তাই বলছি, লুকোনোর জায়গা খুঁজে লাভ নেই। তড়িঘড়ি করে কবর খোড়ো, বিদায় নেবার সময় এসেছে। কারণ,
I'm back, you fuckin' pretentious bastard! I'm back...
-praxis
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।