আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।
যে ব্যক্তি অন্তরে কুফর অর্থাৎ অবিশ্বাস লুকিয়ে রেখে যবান দ্বারা ইসলাম প্রকাশ করে তাকে মুনাফিক বলে । (আল মুনজিদ -পৃঃ১০৩৮) ।
আজ মিথ্যা আমাদের জীবনে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যেরূপভাবে রক্ত আমাদের শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে আছে ।
চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে যবান থেকে মিথ্যা কথা বের হয়ে যায় । কোন কোন সময় শুধুমাত্র কৈাতুক করে, কোন কোন সময় নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য, কোন কোন সময় নিজের বড়ত্ব প্রকাশের জন্য মিথ্যা বলা হয়ে থাকে । আজকাল মিথ্যা বলাটা একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে । লোকেরা এখন আর মিথ্যা বলাকে না-জায়িজ বা গোনাহ মনে করেনা বরং অকেনের ধারণা যে, মিথ্যা বললে আমাদের নেকীতে কোন আছর হবে না । অথচ মহানবী (সাঃ) মিথ্যা বলাকে মুনাফিকের কাজ বলেছেন ।
কোন মুসলমান মিথ্যা বলতে পারে না ।
হযরত আবু হরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, মুনাফিকের তিনটি নিদর্শন (অর্থাৎ কোন মুসলমানের দ্বারা এমন কাজ সম্ভব নয় । যদি কারো মধ্যে এগুলো পাওয়া যায়, তাহলে মনে করতে হবে সে মুনাফিক) - আর তা হলো
১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ।
২. যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে ।
৩. আর যখন তার নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হয় , তখন সে খিয়ানত করে ।
কোন কোন বর্ণনায় একথাও আছে যে, যদিও সে নামায পড়ে, রোযা রাখ এবং একথার দাবী করে যে সে মুসলমান । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে মুসলমান নয়, কেননা মুসলমান হওয়ার জন্য যে মৌলিক গুণাবলীর প্রয়োজন সেগুলো সে ছেড়ে বসে আছ ।
যুগে যুগে ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতি মুনাফিকদের দ্বারাই হয়েছে । মহানবী (সাঃ) কে মুনাফিক সম্প্রদায়ই সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছে । কারণ কাফির সম্প্রদায় যেহেতু প্রকাশ্য মুসলমানদের বিরোধিতা করত, তাই তাদের অনিষ্ট থেকে বেচে থাকা সহজ ছিলো ।
পক্ষান্তরে মুনাফিক সম্প্রদায় মুসলমান পরিচয় দিয়ে মুসলমানদের ধোকায় ফেলে তাদের বিরুদ্ধে গোপন যড়যন্ত্রে লিপ্ত হতো ।
মুনাফিকদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না । (সূরা- নিসা/১৪৫)
"ইহা তোমার প্রতিপালকের অপরিহার্য নির্ধারিত সিদ্ধান্ত । অতঃপর আমি মুত্তাকীদিগকে মুক্তি দান করিব আর জালেমদিগকে অধঃমুখ করিয়া ইহাতে ছাড়িয়া দিব । " (সূরা মারইয়াম ৭১-৭২)
হাশরের ময়দানে জাহান্নামের ফেরেশ্তাদের মধ্য হইতে এক ফিরিশ্তা উচ্চ স্বরে ঘোষণা দিতে থাকিবে যে, অমুকের পুত্র অমুক কোথায় ? সে তো দুনিয়াতে থাকা অবস্হায় দীর্ঘ আশা পোষণ করিত ।
আখেরাতের অবস্হা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করিত । অবৈধ কার্যে নিজের জীবনটি ধ্বংস করিয়াছে । অতঃপর ফিরিশ্তা লোহার গুর্জ্জ লইয়া তাহার উপর আক্রমণ করিবে । তাহাকে ধমক দিয়ে অধঃমুখ করিয়া জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবে আর তিরস্কারের সহিত বলিতে থাকিবে যে, তুমি তো দুনিয়াতে নিজেকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান মনে করিতে । এখন একটি সংকীর্ণ, অন্ধকার ও ধ্বংসাত্নক ঘরে পড়িয়া থাক ।
এই ঘরে যে প্রবেশ করে সে চিরদিন এই ঘরেই থাকে এবং আগুনে পুড়িতে থাকে । ইহাতে বন্দীদিগকে গরম ফুটন্ত পানি পান করিতে দেওয়া হয় । এরপর আগুনের ফেরেশ্তারা তাহাকে পৃথকভাবে গুর্জ্জ মারিতে থাকে এবং আগুন তাহাকে জড়াইয়া ধরে ।
সে মৃত্যু কামনা করিতে থাকে । কিন্তু কোথায় মৃত্যু ? তাহার পদদ্বয় মাথার কেশের দ্বারা বাধিয়া রাখা হইবে ।
গোনাহের অন্ধকারে তাহার মুখ মন্ডল কৃষ্ঞ হইয়া যাইবে । অ্গ্নির জিজ্নিজির গলায় পরিয়া দেওয়া হইবে । সামনে, পিছনে, ডানে, বামে শুধু আগুন আর আগুন । খাদ্য হইবে আগুন, পানীয় হইবে আগুন এবং পোশাক হইবে আগুন । হাতে পায়ে ভারী বেড়ী থাকিবে ।
জাহান্নামের সংকীর্ণ রাস্তাতে চিৎকার করিতে করিতে দৈাড়াইতে থাকিবে । মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢালিয়া দেওয়া হইবে । তাহার নাড়ী-ভুড়ি চামড়া গলিয়া গলিয়া পড়িতে থাকিবে । পিপাসার কারণে কলিজা ফাটিয়া চৈাচির হইয়া যাইবে । তাহার শুধু মৃত্যু কামনা করিবে কন্তিু মৃত্যু হইবেনা ।
সূত্রঃ আখিরাত- ইমাম গাজ্জ্বালী (রহঃ), মুমিন ও মুনাফেক - মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।