পর্ব-১
শুক্রবারের জুম্মার নামাজ বাদে অন্য ওয়াক্তগুলোতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মহল্লার মসজিদগুলোতে খুবই অল্প সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে। সর্বোচ্চ দুই কাতার লোক হয়।
অর্থাৎ ওই অল্প সংখ্যক লোকই নিয়মিত নামাজ পড়েন। তাদের মধ্যে যদি জরিপ চালানো হয় তাহলে দেখা যাবে, তাদের কমপক্ষে ৯০ শতাংশ লোক বুইড়্যা এবং স্থানীয় বাড়ির মালিক। তাদের এক পা এরইমধ্যে কবরে গিয়ে বসে রয়েছ।
এদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলা, কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ী ছিলেন। যৌবনকালে তারা ঘুষসুদ খেয়েছেন সমানে, অন্যান্য আকাম কুকামও বাদ যায় নি। দুনিয়াতে সন্তানদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করে শেষ বয়সে তারা এসেছেন পরোকালের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে। বাকী ১০ শতাংশের ৯ শতাংশ দেখা যাবে তারা ঘুষসুদ খাওয়ার সুযোগ পান নি। পেলে নিশ্চিতভাবেই খেতেন।
১ শতাংশ তূলনামূলক ভাল মানুষ পাওয়া যেতে পারে। তবে এলাকাভেদে এ হার কমবেশী হতে পারে। আমার কথা যারা বিশ্বাস করলেন না তারা ফজরের ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে দেখতে পারেন।
আর ঈমামরা নিয়মিত নামাজি কারন ওটাই তাঁদের পেশা। জুম্মার নামাজে হুজুরদের বয়ানের একটা বিরাট অংশ থাকে মসজিদের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি।
এর মধ্যেও ব্যক্তিগত সুবিধার ব্যাপার রয়েছে। মসজিদকেন্দ্রিক হুজুরদের বসবাস। মসজিদ পাকাপোস্তা হলে এক পর্যায়ে তাদের থাকার ব্যবস্থাও উন্নত হয়। তাই তারা বহুকাল ধরেই ধর্মের দোহাই দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। এতো গেল নিয়মিত নামাজি ভণ্ডদের কথা।
সমাজে আর এক শ্রেণীর ভণ্ড রয়েছে, যারা নামাজ কেন ইসলামের কোনো নির্দেশই ঠিকমত পালন করেন না, অথচ ইমান তাদের ষোলআনা । এই শ্রেণীর ভণ্ডের সংখ্যা সমাজে বিপুল। আমার এই পোস্টটি যারা পাঠ করছেন তাদের বেশিরভাগই শ্রেণীর ভণ্ড। ইসলামের কোনো নির্দেশই এরা পালন করে না অথচ ইসলামবিরোধী কোনো কথা শুনলেই এরা ফাল দিয়ে উঠেন। অথচ এই ফাল দেওয়ার অধিকারই তাদের নেই।
এরা আরও স্বার্থপর, ভণ্ড এবং ক্ষতিকর জীব। কেন খারাপ?
তাহলে একটা গল্প বলি। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ভাই। ছোট ভাই মা-কালীর খুবই ভক্ত। নিয়মিত পূজা অর্চনা করেন।
আর বড় ভাই নাস্তিক। তিনি কালী-ফালী একেবারেই ঠেঙান না।
একদিন ছোট ভাই মা-কালীকে স্বপ্ন দেখলেন, স্বপ্নে কালী তাকে বলছেন, তোর বড় ভাই আমার নামে আজেবাজে কথা বলে, আমার পূজাটুজা কিছু করে না, তুই ওকে সাবধান করে দিস। জবাবে ছোটো ভাই বললো, এসব কথা আমাকে বলতে বলছো কেন? তুমি সরাসরি ওকে গিয়ে বল। কালী তখন বললো, ওমা বলে কি, আমি ওকে নিষেধ করবো কোন মুখে? ওতো আমাকে মানেই না!!
নাস্তিকরা সৃষ্টিকর্তা মানেন না, কাজেই সৃষ্টিকর্তা তাদের কাছে কিছু আশাও করেন না।
এক্ষেত্রে তাদের কোনো ভণ্ডামি থাকে না। আর যারা সৃষ্টিকর্তাকে মেনেও তাঁর কথামতো চলেন না তারা কি ভণ্ড নয়?
এই ভণ্ডগুলোই দুনিয়ার সব সুখ নিয়ে শেষ বয়সে গিয়ে বেহেশত নিশ্চিত করার জন্য নামাজ ধরবে। হয়ে যাবে নামাজি ভণ্ড (প্রথমেই যে ভণ্ডদের কথা উল্লেখ করেছি)। হজে যাবে, নামের আগে হাজী টাইটেল লাগাবে। আর যৌবনকালে সপ্তাহের জুম্মার নামাজ বা মাসে চান্দে সৃষ্টিকর্তার দরবারে হাজিরা দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করবে, ‘‘আরে আছি তোমার সঙ্গে।
তয় দুনিয়ার ভোগ বিলাসও একটু করতে দাও। ’’
বুইড়া হয়ে যাওয়ার পর পরোকালের সুখের জন্য এরা পারমানেন্টলি সৃষ্টিকর্তার কাছে সোপর্দ করে বেহেশতোর সুখের জন্য।
সম্প্রতি আমার এক বন্ধু গ্রাম থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকায় পৌঁছে। আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে সিট খালি না থাকায় বিপদে পড়ে যায় সে। এরপর সে আশপাশের কমপক্ষে ৫০টি মসজিদে ধরনা দেয় রাতটা থাকার জন্য।
সব মসজিদ বন্ধ। রাস্তায় রাত কাটাতে হলো তাকে। কি বুঝলেন?
দিনের পর দিন ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকা শহরের মসজিদগুলো রাজকীয় প্রাসাদ হয়ে উঠছে। যেখানে শুক্রবার বাদে নিচতলার দুই কাতারও লোক হয় না। সেই প্রাসাদকে কতটা অমানবিক করে রাখা হয়েছে ভেবে দেখেছেন কি?
আমাদের এলাকার মসজিদের ওজুর স্থানে লেখা রয়েছে:
‘‘ওজুর প্রয়োজন ব্যতিত অন্য কোনো কাজে মসজিদের পানি ব্যবহার নিষেধ’’
মানে আপনি কোনো প্রয়োজনে আমাদের এলাকায় যদি আসেনে এবং আপনার যদি হাগা চাপে, আপনি কই যাবেন?
হায়রে মানবিক বিবেক বোধ মানুষের।
এই চুদির ভাইরা পালন করে ধর্ম। হা..হা..হা...হা..।
যাইহোক পরে শুনলাম, মসজিদের কাছেই মাঠে বাচ্চারা খেলাধুলা করে। এরপর তারা মসজিদে হাতমুখ ধোয়। এইজন্য নাকি ওই নির্দেশনা।
কি অবান্তর যুক্তি এদের। ওরা কি চুরি ডাকাতি করে এসে হাতমুখ ধোয়? এরা আমার বালের ধর্ম পালন করে??
আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি মসজিদের সব ঈমামদের চেয়ে খেলাধুলা করা ওই বাচ্চারা লক্ষগুণ শ্রেষ্ঠ। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি আমাদের মসজিদে পানির কোনো সমস্যা নেই।
এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই
ধরুন আজ বৃহস্পতিবার। আজ ঘূর্ণিঝড় মহাসেন এদেশে আঘাত হানলো।
বহু হতাহত হলো। উপকূলের বিপুল সংখ্যক মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়লো। পানি নেই, খাবার নেই। বাঁধ মেরামত করতে বিপুল টাকার প্রয়োজন।
কাল শুক্রবারে আপনি জুম্মার নামাজ পড়তে যেয়ে কি দেখবেন?
দেখবেন হুজুর যথারীতি বয়ান পেশ করবেন, মসজিদের জন্যই টাকা তুলবেন।
নামাজ শেষে হুজুর দুর্গত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া পড়ে দেবেন!! হা..হা..হা..
দোয়া পড়তে তো আর পয়সা লাগে না। হুজুর দুর্গতদের জন্য কোনো টাকা তুলবেন না। তুলবেন মসজিদের জন্য। এখন যদি হজের টাকা জমা দেওয়ার সময়ও হয় তবে হুজুর তা নিষেধ করবেন না। বলবেন না যে, হজের টাকাটা দুর্গতদের দেওয়া হোক।
কিন্তু দেখবেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের অনেক ছেলেমেয়েরা জানপ্রাণ দিয়ে দুর্গতদের জন্য টাকা তোলা শুরু করে দিয়েছে। যাদের অনেকেই নাস্তিক। মানবিক বিবেক বোধই নাই, তাঁর আবার ধর্ম। চলবে........................................... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।