মাতৃত্ব যখন পেশা
বর্তমানে ভারতে একটি বহুল আলোচিত ও সমালোচিত বিষয় হচ্ছে একটি ব্যতিক্রমি পেশা। ভারতের গুজরাট এর একটি ছোটো শহরই এ পেশার কেন্দ্রবিন্দু। শহরের দরিদ্র বাসিন্দা গৃহবধু শবনম এখন আট মাসের অন্তঃসত্তা। অনাগত সন্তানকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। তবে এই স্বপ্ন আর সকল মায়ের স্বপ্ন থেকে ভিন্ন।
এই সন্তানকে তিনি চার লাখ রূপিতে বিক্রি করে নিজের জন্য বাড়ি করবেন। এক কথায় বলতে গেলে তিনি তার গর্ভাশয় ভাড়া দিচ্ছেন। এই গর্ভাশয় ভাড়া দেয়াই তার পেশা। শহরের বিখ্যাত চিকিৎসক নয়না পাটেলের ক্লিনিকে সে সন্তান জন্ম দেয়া হবে। শুধু তিনি নয় আরও দ্ইুশত নারী তার ক্লিনিকে তালিকাভুক্ত আছেন।
ওই ক্লিনিকে গর্ভাশয় ভাড়া দিয়ে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়া হয় পাঁচ বছর আগে। নারীদের গর্ভাশয়ে অবস্থিত সন্তানের প্রকৃত মাতা তারা নিজেরা নন, পিতাও তাদের স্বামী নয়। অন্য মা-বাবার নিষিক্ত ডিম্বানু ধারন করেই তারা সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন। এই ক্লিনিক ও নয়না প্যাটেলের বিরূদ্ধে ভারতে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। তবে নয়না মনে করেন এ পেশায় খারাপ কিছু নেই।
তার এই ক্লিনিক শুরু হবার পর থেকেই সন্তান পাগল দম্পতিরা ছুটে আসেন সন্তানের জন্য। এই দম্পতির চল্লিশ শতাংশই আসে বিদেশ থেকে। যে পেশা একজন দুঃখী নারীর সকল কষ্টের অবসান ঘটাচ্ছে, জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া, মা হওয়ার সুখ দিচ্ছে, সে পেশা কি কখনও খারাপ হতে পারে? ভারতের আইনে গর্ভাশয় ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই তবে নয়না প্যাটেল ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’-এর নিয়মনীতি মেনে চলেন। নয়না দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাহ উইনফ্রের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তখন তিনি বলেন “গর্ভাশয় ভাড়া দেয়া কিন্তু কাউকে হত্যা করা নয়, বেআইনি কিছু নয়।
তবে এ বিষয় নিয়ে এতো আলোচনা, সমালোচনা কেনো”?
এই পেশার মাধ্যমে একজন হতদরিদ্র নারী নিজে আয় করতে পারছে, প্রতিটি সন্তান জন্মদানে ৫ থেকে ৬ লাখ রুপি পাচ্ছেন তার মা। সন্তানদের পড়াশুনা করানোর টাকা আয় করতে পারছে, থাকার জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করতে পারছে। এর মাধ্যমে অপর এক নারীর জীবনের সন্তানের স্বপ্নকে পূর্নতা দিতে পারছে। তবে কোনো নারী যদি সেচ্ছায় এ কাজকে পেশা হিসেবে না নিয়ে একান্ত বাধ্য হয়ে করেন, তা সত্যি কষ্টকর। এ পেশায় একজন নারী যেমন তার জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে তেমনি নিজের শরীর ও মনের একটি অংশ, নিজ শরীরের ভিতর ১০ মাস ধরে লালন করে সন্তানকে অন্য কারও কাছে দিয়ে দিচ্ছে।
যা একজন মায়ের জন্য নিজের হৃদয়ের একটি অংশ দিয়ে দেয়ার মতোই কষ্টসাধ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।