ব্ল্যাঙ্ক
দুপুরবেলা ঘুম থেকে উঠেই মেজাজটা বিলা হয়ে গেল। আম্মা প্রতিদিনের মত একগাদা বস্তাপচা ঝাড়ির বাক্সপ্যাটরা খুলে বসছে আর আমার ধারাবাহিকভাবে হাই তুলতে থাকা নির্লিপ্ত মুখের দিকে তাকিয়েও বিন্দুমাত্র না দমে বিপুল উত্সাহে বকেই যাচ্ছে,এইসব মেয়ের দুনিয়াতে কি হবে? ভবিষ্যত আছে কিছু এদের? আমি তো অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখি না! [তা আম্মা যে আমার ভবিষ্যতে অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখবে না সেটা আর নতুন কি? বিগত ১৫ বছর ধরে তো হিন্দী ডেইলি সোপের মত রোজ ওই এক জিনিসই দেখে আসতেসে]
জাস্ট ফর আ চেইঞ্জ আমি আম্মাকে অন্য কিছু দেখার উপদেশ দিব কিনা ভাবছিলাম কিন্তু আম্মার রাগে তপ্ত গনগনে মুখ দেখে আর সাহস করলাম না। আম্মা তখনো সেকেন্ডে একশ এক মাইল গতিতে ফুল স্পিডে বকেই যাচ্ছে,সারারাত জেগে থেকে সারাদিন ঘুম। কোনো ডিসিপ্লিন আছে এই বাসায়? যার যা ইচ্ছা তাই করতেসে। যাও তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে ভাত খেতে যাও।
সকালের নাশতা বলে তো কোনকিছুর বালাইই নাই।
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। হাতমুখ ধুয়ে যেই না খাবার টেবিলে বসেছি অমনি কানের উপর মিসাইলের মত এসে পড়ল আম্মার মধুবর্ষিত কন্ঠস্বর,"তোর ছোটখালা ফোন কর্সিলো সকালে। " মুখে বললাম, "ও আচ্ছা"! মনে মনে বললাম,"ইনার আবার নতুন কি কুমতলব?" আম্মা তখন গলায় মধু,চিনি এবং তার উপর এক্সট্রা কিছু মাখন মিশায় একেবারে বিগলিত স্বরে ধীরে ধীরে আসল কথাটা পাড়তে লাগলো।
-তোর খালুর সাথে নাভানায় একসাথে চাকরি করে এরকম একটা ছেলের কথা বলল।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ছেলে নাকি রাজপুত্রের মত দেখতে। তোর জন্য বলতেসিল........
- আম্মা, খালু যেহেতু নাভানায় চাকরি করে,সুতরাং নাভানার দারোয়ানকেও খালার কাছে যে রাজপুত্র মনে হবে, সেইটাই স্বাভাবিক! এটা এক প্রকার মানসিক ব্যাধি। তুমি এটা শুনে বিচলিত হইও না। [মনে মনে খালার উদ্দেশ্যে বললাম, বদ মহিলা তুমার রাজপুত্রের আমি গুষ্টি কিলাই! এত শখ থাকলে নিজের মেয়ের বিয়ে দাও রাজপুত্রের সাথে ]
আম্মা ফোঁস করে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল,আমি অবশ্য মানা করে দিসি।
আমি ৩২ দন্ত বিকশিত করে একটা ক্লোজ আপ স্মাইল দিয়ে বললাম, গুড! জীবনে এই প্রথম একটা কাজের কাজ করসো। এছাড়া বাকি যা করসো সবই আকাজ। তার মধ্যে প্রধান হইল আমার মত অপদার্থ মেয়ের জন্ম দেয়া।
আম্মা চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকায় মোটামুটি আমাকে দৃষ্টিবাণে ভষ্ম করে ফেলতে চাইল। আমি মানে মানে নিজের জান হাতে নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়লাম।
অতঃপর খাওয়াদাওয়া শেষ করে আনন্দচিত্তে দেশ ও দশকে উদ্ধারের মহান ব্রত নিয়ে তড়িঘড়ি পিসি খুলে বসলাম। প্রথমেই খুললাম আমার প্রাণপ্রিয় সামু,তারপর একে একে ফেসবুক ও ইয়াহু মেসেঞ্জার। সামু খুলতেই কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আমার তো চক্ষু ছানাবড়া। সুন্দরী ইনোসেন্ট অভিনেত্রী প্রভাকে নিয়ে রীতিমত ধুন্ধুমার কান্ড লেগে গেছে। পরিবেশবাদী ঈগলপাখি নামক জনৈক কোমলমতি ব্লগার সেহেরির পবিত্র ওয়াক্তে প্রভার আপত্তিকর ভিডিও দেখে নিজের আবেগ সংবরণ করতে না পেরে একটি অতি নিরীহ পোস্ট দিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই আবেগপূর্ণ পোস্টের সারমর্ম না বুঝে বর্বর ব্লগবাসী তাকে প্রভার সেই ভিডিও লিঙ্ক দেয়ার জন্য যারপরনাই ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। ঈগলপাখি যতই তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে, প্রভার মত নিষ্পাপ মেয়ের উক্ত ভিডিও দেখার পর তার কোমল হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার,তিনি আর কথা বলবার মত মানসিক অবস্থায় নেই- অবুঝ ব্লগবাসী তবুও ভিডিও লিঙ্ক পাবার জন্য তাকে রীতিমত হুমকি ধামকি প্রদর্শন শুরু করলো। ঈগলপাখির এহেন বুকফাটা আর্তনাদ দেখে আমার হৃদয় দুঃখভারাক্রান্ত হলো। আমি তার ভগ্ন হৃদয়ে কিছু সান্তনার প্রলেপ দেয়ার উদ্দেশ্যে তার ব্লগে কমেন্ট করতে গিয়ে দেখি, আরে আমার আগেই তো আমার প্রাণপ্রিয় কাঠের খাঁচা ভাইজান লিঙ্ক চেয়ে কমেন্ট করে রেখেছেন,লিংক মেইল কর জলদি। মাইরাই ফেলামু নাইলে!
কমেন্টটা দেখে আমার মাথায় দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেল।
আমি ভাইজানকে ত্যক্ত করার উদ্দেশ্যে তার কমেন্টটা ইয়াহুতে তাকেই আবার কপিপেস্ট করে খুবই ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে একটা হাই তুলার স্মাইলি দিলাম।
তার পরপরই মিসাইল বোমাটা ফাটল। ভাইজানের রিএকশন হলো দেখার মত।
কাখাঁ ভাইজান: তুই হারামি এইটা দেখলি ক্যান? উফফফফফ!!!
আমি: বাহ আপনি ভিডু দেখতে চাইতে পারবেন আর আমি সামান্য কমেন্টটা দেখতে পারুম না? কি দিনকাল আয়া পড়ল? [প্রবল আকারে চোখ ঘুরানোর ইমো]
কাখাঁ ভাইজান:
আমি: নিজে চুরামি কইরা অহন আমারে গাইল পাড়তাসে! আসরের ওয়াক্তে গাইল দিয়েননা ভাইজান,রুজা মাকরুহ হইব! [শীষ দেয়ার ইমো]
কাখাঁ ভাইজান: এই মাইয়াটার লাইগা ভালো মতন ফটকামিও করন যায়না।
আমি: আমি কি আপনারে ফটকামি করতে মানা করসি? খালি কমেন্টটাই তো দেহাইলাম।
এত চেতেন ক্যান?
যাইহোক,কিছুক্ষণ পর ভাইজান ৩২ দুগুনে ৬৪ দাঁত বের করে জানাইল,উনি সেই মহামূল্যবান লিঙ্কুখানি যোগাড় করতে সক্ষম হইয়াছেন। কে দিল? কে আবার আমাদের দাতা হাতেমতাই স্বপ্নকথক ওরফে ফটাপ ওরফে বাঁধন ভাই। ঈগলপাখির পোস্টে গিয়ে দেখতে পেলাম আমাদের মহান ফটাপ বাই ভিডুর লিঙ্কের জন্য সমগ্র ব্লগবাসীর এহেন আকুল কান্না ও হাহাকার সহ্য করতে না পেরে তাদের দুঃখ নিবারণে ত্রাণকর্তা রূপে আবির্ভূত হয়েছেন এবং অমূল্য লিঙ্কখানি প্রদান করে তাদের মর্মযন্ত্রণা থেকে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমি তার এহেন দানশীলতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে সাধুবাদ জানানো নিজের কর্তব্য জ্ঞান করলাম এবং সেই উদ্দেশ্যে তাকে ফেসবুকে নক করলাম।
আমি: আমি আগেই জানতাম আপনি একজন মহান দেশসেবী।
এতদিন শুধু লোকমুখে শুনেছিলাম,আজ দেখে চক্ষু সার্থক করলাম। [বিগলিত হাসির ইমো]
ফটাপ বাই: কি কস এইগুলা? [কনফিউজড]
আমি: আরে ভাইজান বুঝলেন না? দেশের এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে আপনি দিকভ্রান্ত যুবসমাজকে ভিডুর লিঙ্ক প্রদান করে আসন্ন বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। নইলে তারা লিঙ্কের জন্য পাগলা হয়ে না জানি কি করে বসতো। [ আতঙ্কে শুকিয়ে যাবার ইমো]
ফটাপ বাই: হেঃ হেঃ! লজ্জা দেস ক্যান? [বোকার মত হাসির ইমো]
আমি: ছি ছি লজ্জা দেব কেন? আমি আপনার মত মহান দানবীরের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত - তাই বললাম। যুগে যুগে আপনার মত বিপ্লবীরাই বিভ্রান্ত তরুণসমাজকে পথ প্রদর্শন করেছেন! [নিষ্পাপ হাসির ইমো]
ফটাপ বাই: ওরে থাম!! আর কত পচাইবি? আমি কি লিঙ্ক দিসিলাম নাকি? খালি লিঙ্কের স্ক্রিনশট দিসি।
আমি: আহা! মহতীরা এমনই বিনয়ী হয় বটে। সত্কর্ম করে তার কৃতিত্বটা পর্যন্ত নিতে চায়না।
ফটাপ বাই: হারামি চুপ কর! মাইর খাবি কইলাম! [কাঁদো কাঁদো হবার ইমো]
আমি: আরে ভাইজান,দেশের যুবসমাজের জন্য আপনি এক জলজ্যান্ত আদর্শ, আপনার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তো............
ফটাপ বাই: ওরে আমারে মাফ কর রে। পিলিজ লাগে। আমি আর জীবনেও কাউরে কোনো লিঙ্কু দিমু না,কানে ধর্তাসি! তাও তুই অফ যা।
অতঃপর ভাইজানের আকুল ক্রন্দনে আমার কোমল হৃদয় বিগলিত হলো। আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে উদাস মনে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম। একটু পর দেখি পরম শ্রদ্ধেয় হামা ভাই ফেসবুকে নক দিয়েছেন।
হামা ভাই: ৯০০!
আমি: জ্বি ভাইজান?
হামা ভাই: দেখসো অবস্থা? আমার লাস্ট পোস্টটা কেউ প্রিয়তে নিল না।
আমি: কন কি! কেউ নেয় নাই? [মনে মনে: যেই না পোস্ট একেকটা চৌদ্দ হাত মাথার উপর দিয়ে যায় এগুলা যে মাইনষে পড়ে এইতো বেশি]
হামা ভাই: আমি এখন কি করি?
আমি: ভাইজান চিন্তাইয়েন না।
পোস্ট করসেন মাত্র তো দুইদিন হইসে। আরো কয়েকদিন যাক দেখবেন অনেকেই নিসে।
হামা ভাই: আরে নাহ। গত পোস্টটাতো প্রথমদিনেই অনেকে প্রিয়তে নিয়ে নিসিলো। অথচ এই পোস্টটার দুইদিন হয়ে গেল এখনো কেউ নিল না! ধুর!
[অভিমানে ঠোঁট ফুলানোর ইমো]
আমি: তাতে কি? কমেন্ট তো অনেক আসতেসে।
হামা ভাই: আরে নাহ। এই গল্পটাতে গালি আছে দেখে কয়েকজন নিয়মিত কমেন্টার এই পোস্টে কমেন্টায় নাই।
আমি: ভাইজান কাইন্দেন না।
যদিও উনার ক্রন্দন নিবারণ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না তথাপি ভদ্রতার খাতিরে বললাম, ভাইজান,আমি কি চোখের পানি মুছার জন্য চাদর বিছায় দিব?
হামা ভাই: না থাক। তুমি বরং আমার এই পোস্টটা প্রিয়তে নাও।
[কান্নার চোটে হেচকি তুলার ইমো]
আমি: ইয়ে মানে.......আমার প্রিয়তে লিস্টটা না অনেক বড় হয়ে গেসে....তবে আমি আপনার টা নিব অবশ্যই.......কয়দিন যাক....তাছাড়া দুইটা পোস্ট তো আছেই....
বেগতিক দেখে আমি তাড়াতাড়ি ফেসবুক থেকে বের হয়ে আসলাম। এমন সময়ে ইয়াহুতে নক করে বসলো বন্ধুবর রাজসোহান।
সোহান: দোস্ত,মনটা খালি উদাস উদাস লাগে রে।
আমি: হুমম.....ঐটা তো তোর জন্মগত সমস্যা, কি আর করবি?
সোহান: মনটা খুব খারাপ। এভাবে একা একা আর ভালো লাগে না।
আমার স্বপ্নরানীকে যদি পাশে পেতাম.......
আমি: [ওর মুখের কথা থুক্কু টাইপের লেখা কেড়ে নিয়ে] তাহলে দুজনে একসাথে নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়তাম আর চিঁ চিঁ করে চিত্কার দিয়ে বলতাম,ওগো কে কোথায় আছ আমারে বাঁচাও.....আবেগের চোটে সাঁতার না জাইনা নদীতে ঝাঁপ দিয়া ফেলসি.....
সোহান: তোর কাছে এইসব মশকরা মনে হয়?
আমি: আহা তা হবে কেন? আমি তো একসাথে ডুইবা মরার ফজিলত ব্যাখ্যা করতেসিলাম মাত্র। জানিস না পানিতে ডুবে মারা গেলে বেহেশতে যায়?
সোহান: তো? [ভ্রু কুচকানোর ইমো]
আমি: তো তুই আর তোর স্বপ্নরানী মরার পরে একলগে বেহেশতে যাবি, তারপরে দুইজনে মিলে ব্রেকড্যান্স করবি। তোর লগে আইসা যোগ দিব ১৭০টা হুরপরী। নাচতে নাচতে তারা তোর লুঙ্গি ধরে টানাটানি শুরু করবে......
সোহান: তুই থামলি?
আমি: দোস্ত,এমন সুযোগ হাতছাড়া করিস না।
সোহান: চুপ কর! তোর মত আজাজীল শয়তানের লগে কথা কওয়াটাই আমার ভুল হইসে......গররররররর
অতঃপর আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে পুনরায় ফেসবুকে প্রবেশ করলাম।
দেখতে পেলাম ব্লগে আমার সবচেয়ে প্রিয় কবি অমিতদার স্ট্যাটাস, "Drinking melancholia"। আমি মনে মনে ভাবলাম আমার দুঃখ একমাত্র অমিতদাই বুঝতে পারবেন। তাই তাকে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,মেলাঙ্কলিয়া কেমন পান করছেন অমিতদা? এনজয়িং ইট?
অমিতদা: ওটাই তো আমার একমাত্র হবি নৈশ।
আমি: ইয়া....আমি জানি। মেলাঙ্কলিয়া আমারও খুব প্রিয়, তাই আমি আকাশ থেকে দুঃখ টেনে টেনে আনি।
অমিতদা: অত দূর যেতে হয়না নৈশ। তোমার ঘরে যে রেফ্রিজারেটরটা আছে তার বিষন্নতাটা দেখো......... [উদাস ভাবের ইমো]
আমি: ইয়ে আমি তো রেফ্রিজারেটর এর মধ্যে খাবার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনা অবশ্য.....খুব পেটুক তো তাই।
অমিতদা: সেটাই দেখো, রেফ্রিজারেটর তার ভেতর এত খাবার ধারণ করে আছে অথচ সে নিজে কিছুই খেতে পারছে না.....কি বিশাল শূন্যতা একবার অনুভব কর........ [প্রবল উদাস ভাবের ইমো]
আমি: আমার তো এখন আসলেই রেফ্রিজারেটরটার জন্য খুব মায়া লাগছে। আমি কি ওকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করে দেখব? [অশ্রুসিক্ত ছলছল চোখের ইমো]
অমিতদা: না তার দরকার নেই। এক্ট এর চেয়ে ফিল করাটা জরুরি.......
আমি: আপনি ঠিকই বলেছেন.......I completely realize! [দ্বিধান্বিতভাবে মাথা চুলকানোর ইমো]
অমিতদার অতি উচ্চমার্গীয় কথাবার্তা আমার গর্ধব মস্তিস্ক ছাড়িয়ে স্যাটেলাইটের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল।
তাই আমি মান বাঁচাতে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। এমনসময় দেখি দীর্ঘদিন পর আমার অতি প্রিয় জীবুদা ওরফে জীবনানন্দদাশের ছায়া অনলাইনে এসেছেন। বলিউডের এককালের বিখ্যাত নায়িকা হেমা মালিনীর সাথে উনার চেহারার অস্বাভাবিক সাদৃশ্য থাকায় আমি উনাকে হেমাদি ডাকতে পছন্দ করি। তা যাইহোক, উনাকে দেখে বললাম, ক্যামন আছেন হেমাদি?
হেমাদি: ভালো নেই ছুটকি। আমার মাইনাস পয়েন্ট ফাইভ পাওয়ারের চশমাটা হারিয়ে গেছে।
ওটার অভাবে ঠিকমত ভাব দেখাতে পারছি না আজকাল।
আমি: আরে হেমাদি! আপনার মত ভাবিস্ট মানুষের আবার ভাব দেখাতে চশমা লাগে নাকি? মডারেটরসুলভ পোস্ট দিয়ে দ্যান একটা সামুর ব্লগারদের আচার আচরণ নিয়ে। পোস্টের শিরোনাম হবে,"আসুন রমজান মাসে আমরা কিছুটা শালীনতার পরিচয় দেই। ব্লগে কমেন্ট করার সময় একে অপরের লুঙ্গি টানাটানি থেকে বিরত থাকি। "
হেমাদি: খোঁচা মার্তেসো নাকি? [ভ্রু কুচকানোর ইমো]
আমি: আয় হায় বলে কি! খোঁচা মারব ক্যান? আমি তো আপনার সমস্যার সমাধান দিলাম।
ভালা মাইনষের ভাত নাইরে! [মাথায় হাত দেয়ার ইমো]
হেমাদি: কাইল্কা তো রিজের পোস্টে যেই একটু ভাব মারতে গেসিলাম অমনি আমারে ভাগায় দিলা। ভাব ফুটা হওনের ভয়ে তল্পিতল্পা নিয়া ভাগসিলাম।
আমি: দিনরাত ভাবের উপ্রেই তো আসেন। আর কত? [হতাশায় ঘুমায় পড়ার ইমো]
হেমাদি:হ, ভাবটা আসলেই বাড়ছে। তুমি একটা গজাল নিয়া রেডি হও ভাবের বস্তা ফুটা করনের লাইগা।
(পিঠ চাপড়াইয়া উৎসাহ দেওনের ইমো)।
আমি:আবার জিগস! কুন জায়গায় ভাবডা মারতাসেন খালি খবরডা দিবেন! [শিষ বাজানোর ইমো]
হেমাদি: জানামুনে। (কি বেদ্দপ দেখ গুরুজনের সামনে শিষ বাজায় এমন ভাবার ইমো)
হেমাদির সাথে কথা বলে আমার দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় শান্ত হলো। আমি আনন্দে শীষ বাজাতে বাজাতে নিজের ব্লগে এসে দেখি, আমার সাম্প্রতিক পোস্টে ফটাপ বাইয়ের কমেন্ট,ঐ, দেখতো কাউয়াডা এইখানে কি শুরু করছে!। বুঝলাম,উনার কোনো পোস্টে প্রিয় সত্কারবিহীন ওরফে রিজ ওরফে কাউয়া ভাইজান গিয়া কুনো গেঞ্জাম পাকাইসেন এবং স্বভাবতই কাউয়া ভাগাইতে আমার ডাক পড়সে।
যেহেতু ব্লগবাসীমাত্রই অবগত আছেন, আমার সীমাহীন দৌরাত্ম্যের কারণেই অতি সম্প্রতি উনি দোয়েল হইতে কাউয়াতে রূপান্তরিত হইয়াছেন এবং কা কা করিয়া সবাইকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিতেছেন। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, পিঠেপিঠি ভাইবোনদের মধ্যে যেমন দিনভর কারণে অকারণে তুচ্ছ বিষয় লইয়া ঝগড়া ও মারপিট লাগিয়া থাকে কিন্তু দিনশেষে আবার মিলমিশ হইয়া যায় উনার সহিত আমার অবস্থা অনেকটা সেইরূপ। আমার কারণে উনাকে সমগ্র ব্লগবাসীর সম্মুখে যেরূপে নাকাল হইতে হইয়াছে তাহা ভাবিয়া আমার কোমল হৃদয় সহানুভূতিতে পূর্ণ হইলো এবং আমি মনে মনে ভাবিলাম, উনার গোপন অপকর্মসমূহ আমি কাহারও নিকট ফাঁস করিয়া আর উনার ইজ্জতের তেরটা বাজাইবো না।
ইহা ভাবিয়া আপনিই আনন্দে আমার ৩২ দন্ত বিকশিত হইয়া পড়িল এবং আমি ভাবিতে লাগিলাম, আহা দিনভর কতই না সত্কর্ম করিলাম! ইহার ফলস্বরূপ সৃষ্টিকর্তা আমাকে পরকালে অতি উত্তম পুরস্কার প্রদান করিবেন এই বিষয়ে আমি সুনিশ্চিত। ভাবিতে ভাবিতে আনন্দে আমার চক্ষু মুদিয়া আসিল এবং কিযত্ক্ষণের মধ্যেই আমি গভীর নিদ্রায় ঢলিয়া পড়িলাম.......
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
১.এই পোস্টের সকল ঘটনা ও চরিত্র বাস্তব।
উহার ৮০% বাস্তবে ঘটিয়া যাওয়া ঘটনাসমূহ হইতে এবং ২০% লেখকের অনুর্বর মস্তিষ্কের কল্পনাপ্রসূত। জীবিত কিংবা মৃত কাহারও আজন্ম অর্জিত মান মর্যাদা উক্ত পোস্ট ধুলিস্মাৎ করিয়া থাকিলে উহার জন্য লেখক দায়ী থাকিবেন না।
২.প্রিয় রানা ভাইয়া ওরফে নস্টালজিক এবং মাশরুর ভাই ওরফে অন্ধ আগন্তুককে আমি এখনো যুতমত বাঁশের আগায় আনিতে পারি নাই বিধায় এই পোস্টে উহাদিগকে বাঁশ দেয়া থেকে বিরত থাকিলাম। তাই বলিয়া উনারা যেন দূরতম কল্পনাতেও ভাবিয়া না লন যে উহারা আমার করাল গ্রাস হইতে মুক্তি পাইয়া গিয়াছেন। নিকট ভবিষ্যতে যেইমাত্র উনারা আমার নিকট কোনো বেফাঁস কথা কহিবেন আমি তত্ক্ষণাত উহাদিগকে উপযুক্ত ব্যাম্বু প্রদান করিয়া বাঁশের সার্কেল পূর্ণ করিয়া লইব।
আমীন!
৩.সামুতে আমার যেসকল প্রিয় সহব্লগার আমার এযাবত্কালের যাবতীয় বিষাদপূর্ণ ঘ্যান ঘ্যান ভ্যান ভ্যান শুনিয়া মনে মনে যারপরনাই ত্যক্ত তথাপি ধৈর্য্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনপূর্বক পরবর্তী পোস্ট পড়িতে আসিতে কার্পণ্য করেন না, তাহাদের জন্য ঈদ উপহার স্বরূপ এই ফানপোস্টের অবতারণা। পরবর্তী তিন মাস আমার নিকট হইতে আর কোনো বিনোদনমূলক পোস্টের আশা না রাখিবার সনির্বন্ধ অনুরোধ রহিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।