আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়াহ্ন যখন হাতের মুঠোয় (পর্ব ১)

পরাঞ্জয়ী...

জন্মের ত্রুটি নিয়ে নাবিলের মনে কোন অনুশোচনা ছিলনা। তাই ছোট্র নাবিল আজ ডা. নাবিল আরমান। বাবার অস্বিকৃতী আর মায়ের অসামর্থ্য একদিন নাবিলকে ঠাঁই করে দেয় ঢাকার শ্যামলীস্থ SOS Children's Village International in Bangladesh এ! পড়াশুনায় বরাবর ভীষণ মনোযোগী নাবিল আজ সুপ্রতিষ্ঠীত চিকিৎসক একজন। সদালাপী, মিশুক এবং অল্পতে সন্তুষ্ট নাবিলের কোনদিন বন্ধুর অভাব হয়নি। বন্ধুরা একে একে একা থেকে দোকা হয়ে যায়।

নাবিল দেখে। কেউ যদিবা জিজ্ঞেস করে "কী রে বিয় করিসনা কেন?" ওর সহজ উত্তর "তোরা বিয়ে করে শুধু বউ চাস, আর আমি তো বিয়ে করে বাবা মা ভাই বোন বানাব, তাই সময় লাগবে একটু" সবাই হাসে। নাবিলের ভীষণ সখ একটা পরিবারের, মা বলে, বাবা বলে ডাকার মত দুটি মানুষ! আজ সকাল সকাল হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হয় নাবিল। খুব সকালে প্রকৃতির নরম ভাবটা নাবিলের খুব প্রিয়! নিজেকে ভীষণ নিষ্পাপ মনে হয় তখন ওর! স্কলারশীপে বাইরে এফ আর সি এস করতে গিয়ে পার্ট টাইম কাজের বদৌলতে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির মালিক নাবিল। সপ্তাহের একদিন বিনামূল্যে চিকিৎসা করে সে, তার নিজের চেম্বারে!এভাবেই অর্থ, পুরুষার্থ, পরমার্থ কোনদিক দিয়েই নাবিল পিছিয়ে নেই আজ! তবুও মনে মনে বড় দরিদ্র নাবিল।

একটা ঘর, ঘর ভর্তি মানুষ! সে কোনদিন সেই মানুষ টাকে খোঁজার চেষ্টাও করেনি, যাকে সমাজ বাবা বলে। অধিকার সে অনেক আগেই হারিয়েছে যেদিন সে অনাগত নাবিলের দায়িত্ব অস্বীকার করেছিল। আর মা?! নাবিলের জন্মের লজ্জায় নাকি নিজের শাড়ির আঁচল গলায় পেঁচিয়ে আত্মাহুতি দেন। তার কথা নাবিল ভুলেও ভাবেনা। নাবিলের অস্তিত্বকে যারা অভিশাপ হিসেবে গ্রহন করেছিল তাদেরকে ভেবে নাবিল নিজেকে একদন্ড কষ্ট দিতে চায়না! গাবতলী-টেকনিক্যাল মোড় ঘোরার সময় নাবিল খেয়াল করলো একজন বয়স্ক মানুষ রাস্তার উপর বসে পড়েছেন।

চোখে মুখে যণ্ত্রনার স্পষ্ট ছাপ! নাবিল গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে। এগিয়ে যায় লোকটির দিকে। :আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে আঙ্কেল? মাথা উচূ করে তাকায় লোকটি। চুল আর দাঁড়িতে মেহেদীর রং চেহারায় একটা আভিজাত্য এনে দিয়েছে। পরনে ট্রাউজার আর টি-শার্ট।

হয়ত সকালে জগিং করতে বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন কিংবা অসূস্থ। ঘন ঘন দম নিচ্ছেন তিনি। নাবিল ওনার কাঁধে হাত রাখলো। :হ্যা বাবা।

হঠাৎ মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। :আপনার বাসা কোথায়? :এই তো পাশেই,পাইকপাড়া। :চলুন আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি। :না বাবা, আমাকে একটা রিকশা ডেকে দাও তাহলেই হবে। :এ অবস্থায় রিকশায় একা যাওয়া ঠিক হবেনা।

চলুন নামিয়ে দিয়ে আসি আপনাকে। আর উচ্যবাচ্য না করে উনি উঠে পড়েন নাবিলের হাত ধরে। চার তলায় ছিমছাম সুন্দর একটা ড্রয়িংরুমে এসে বসলো নাবিল। টি-টেবিলে একটা খোলা ল্যাপটপ। বাংলা কোন ওয়েবসাইট খোলা।

একটা লেখা "যে রাতে আসবে তুমি" শিরোনাম। চার-পাঁচটা লাইন দেখা যায় """" কথা দিয়েছিলে কোন এক নিঃশব্দ রাতের বুক চিরে আসবে তুমি। তোমার এক হাতে থাকবে শুকতারা অন্যহাতে চাঁদের রুপালী জ্যোৎসা। আমি সেই রাতের অপেক্ষায় রোজ বিকেলে প্রার্থনা করি 'আজ যেন শুকতারা না উঠে'" আর পড়া যায়না। নাবিল এড্রেস বারে তাকিয়ে ওয়েবসাইটের এড্রেসটা মুখস্থ করে নেয়! ভদ্রলোকটির নাম আশফাকুর রহমান।

ভদ্রলোক রিটায়ার্ড সরকারী অফিসার। এক ছেলে এক মেয়ের বাবা। নাবিল ডাক্তার জেনে ভদ্রলোক সেল নাম্বার আদান প্রদান করেন। উষ্ণ আতিথেয়তার পর নাবিল বেরিয়ে আসে। ওর মনের ভেতর লাইন গুলো ঘুরপাক খায়"""" কথা দিয়েছিলে কোন এক নিঃশব্দ রাতের বুক চিরে আসবে তুমি।

তোমার এক হাতে থাকবে শুকতারা অন্যহাতে চাঁদের রুপালী জ্যোৎসা। আমি সেই রাতের অপেক্ষায় রোজ বিকেলে প্রার্থনা করি 'আজ যেন শুকতারা না উঠে'" (চলবে ৫ পর্বে সমাপ্য)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।