আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়াহ্ন যখন হাতের মুঠোয় পর্ব ২

পরাঞ্জয়ী...

Click This Link হসপিটালে ঢুকে রুটিন চেকিং এর পর নিজের ডেস্কে এসে বসে নাবিল। ওর মাথা থেকে এখনও যায়নি সেই লাইনক'টি। কম্পিউটার অন করে বাকি লাইন গুলো পড়ার ইচ্ছে নিয়ে ব্রাউজার খুললো। মনের ভেতর গেঁথে রেখেছিল ওয়েবসাইটের এড্রেসটা। বাকীটুকু পড়ুন" এ ক্লিক করে ঢুকলো সে।

বিমুগ্ধ নাবিল শুরু করলো পড়া ""আমার সে প্রার্থনা বিধাতার বেদী ছোঁয়না আমি জানি। তাই তুমি আসনা। কত সহস্র শতাব্দি আমি তোমার প্রতিক্ষায় আছি জানোনা তুমি?" আপন মনে নাবিল বলে ওঠে "জানি গো জানি"। লেখক/লেখিকা ছদ্ম নামে লিখে। অথচ নাবিল আপন মনেই তাকে নারী সাজিয়ে নেয়! আবার পড়া শুরু করে "প্রতিটি সকাল বেলায় আমি সন্ধ্যের অপেক্ষায় থাকি! সারাবেলা সারাঘরময় ছুটোছুটি হুলস্থুল বাঁধিয়ে কাজ করি, যাতে সন্ধ্যের আগে আমার সব কাজ শেষ হয়! কারন প্রতিটা দিন আমি নিশ্চিত প্রত্যাশায় থাকি তুমি আসবে!" "আঁচল বিছায়ে আর কতকাল তোমার আসবার অপেক্ষায় আমি রাতকে দিন, আর দিন কে রাতের কোলে ঘুম পাড়াব? নিশাচর পাখিরা আমার সহচর হয়েছে অনেক আগেই।

রোজ রাতে কোন এক দুঃখবিলাসী তার বেহালায় তোলে ঝড়ের সুর! আমি শুনি সে সুর। তার প্রত্যেকটা লয় আমার মুখস্থ। রোজ রাতে পাশের বাড়ির নব্য অতিথির কান্না শুনি আমি। ঘুম পাড়ানি গানে মা তাকে আবার শুইয়ে দেয়। আমি শুতে পারিনা, আমার ঘুম নেই!" এ পর্যন্ত পড়ে নাবিলে চির তৃষ্ণার্ত হৃদয় হাঁপিয়ে ওঠে।

এমন করে সত্যিই কি কেউ কারও অপেক্ষায় থাকে? যদিবা থাকে তবে সেইজন না জানি কেমন! কেমন করে এই লেখক কে নাবিল খুঁজে পাবে তাই ভাবতে থাকে সে। ছদ্মনামটি দেখলো সে "কুঁড়ি"! নিশ্চয় মেয়েই হবে। নাবিল ভাবতে থাকে, ঐআঙ্কেলের বাসায় দেখেছিল লেখাটা প্রথম। ওখান থেকে কি কোন ক্লু পাওয়া যায়! একবার গেলে কি খুব অশিষ্ট কাজ হবে? না হয় বলবে যে, শরীরের কি অবস্থা তাই জানার জন্য গিয়েছে। এমন হাজার "সম্ভব" "অসম্ভবে"র দোলাচলে দুলতে থাকে নাবিলের মন।

তারপর একসময় স্থির করেই ফেলে যাবে একবার! আজকে হসপিটাল থেকে একটু জলদী বের হয় নাবিল। যাবে কি যাবেনা এমন মন নিয়ে অবশেষে পৌছেই গেল আশফাক সাহেবের বাসার সামনে। কলিং বেলে হাত রেখে ওর মনে হয় ফিরে গেলেই হয়। ততক্ষনে চাপ পড়ে গেছে বেলে। দরজা খুলে দেয় একটি মেয়ে।

বয়স ২৩-২৪ হবে, চোখে চশমা। নাবিলকে দেখেই হকচকিয়ে যায় মেয়েটি। " :আরে আপনি? আসুন আসুন। :ইয়ে মানে, আমার বাসাটাও কাছেই তাই ভাবছিলাম আঙ্কেল কেমন আছেন একবার দেখে যাই। :আব্বু এখন মোটামুটি ভালই আছেন।

আপনি বসুন, আমি আব্বুকে ডাকছি। আশফাকুর সাহেবকে ডাকতে হয়না, উনি নিজেই এসে হাজির হয়েছেন ততক্ষনে! : আমার বাসা কাছেই। তাই ভাবলাম আপনাকে একবার চেকআপ করে যাই। : বেশ করেছ বাবা। নাবিল ওনাকে চেক আপ করে।

আশফাকুর সাহেব জোর গলায় নির্দেশ দিয়ে যান রাতে খেয়ে যাবার জন্য। নিজে বসে গল্প করেন। মেয়েটি এসে চা নাস্তা দিয়ে যায়। আশফাক সাহেব পরিচয় করিয়ে দেন তার একমাত্র মেয়ে নিটোল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, শেষ বর্ষ।

বয়স বাড়লে মানুষ সন্তানদের ছোট ছোট অর্জনগুলোও খুব রঙ মাখিয়েই অন্যের কাছে জাহির করেন। আশফাক সাহেবও তার ব্যতিক্রম নন। কথায় কথায় বলেই ফেলেন মেয়েটি তার বড্ড গুনি। লেখার হাত চমৎকার। তারপর যে সব পত্র- পত্রিকায় নিটোলের লেখা প্রকাশিত হয়েছে তাই দেখাতে থাকেন নাবিলকে।

মাঝখানে ইন্টারনেটে কমিউনিটি ব্লগে লেখার ব্যাপারটি বাদ যায়নি। নাবিলের অতি-উৎসাহি মন তার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যায়। বুঝে ফেলে কুঁড়ি কে! নাবিলের মনে তখন বিনা বসন্তে বাহারি ফুলের কুঁড়িরা চোখ মেলতে শুরু করে। সেদিনকার মত খেয়ে বিদায় নেয় নাবিল। মন তার কি এক অসামান্য প্রাপ্তির সম্ভাবনায় উন্মাতাল হয়।

মানবদেহ নিয়ে কাঁটা ছেড়া করা ডা.নাবিল আরমান আজ মানব মনের ব্যবচ্ছেদে রত হয়! (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।