সমাজকে বদলানোর জন্য নিজেকে আগে বদলানো প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই বদলে যাই সত্যের আলোয়।
নিমনের পিতার সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে নিমনকে হত্যা করি। হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে বাসার ওয়ার্ডরোবের ভেতর রেখে দিই।
গন্ধ বের হলে একদিন পর বাড়ির ২০০ গজ দূরে ডোবার মধ্যে ফেলে আসি।
গতকাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শরীফুর রহমানের আদালতে নিমনের ঘাতক বিনয় (৩০) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এদিকে ঘাতক বিনয়কে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষে ওসি, দারোগাসহ ১৫ পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৮শ’ থেকে ৯শ’ এলাকাবাসীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এস আই আউয়াল বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই মামলাটি দায়ের করেন। আদালতে স্বীকারোক্তিতে বিনয় জানায়, তার পুরো নাম বিনয় মণ্ডল সবুজ।
সমপ্রতি সে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়। সে ভারতীয় নাগরিক। সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ধনকুণ্ডা উত্তরপাড়া এলাকার নুর আমিনের সঙ্গে সে ঝুট ব্যবসা করতো। এক পর্যায়ে তার কাছে বিনয়ের ২৫-৩০ হাজার টাকা বকেয়া পড়ে। এ নিয়ে তাদের মতবিরোধ হয়।
এর সূত্রধরে ২৪শে আগস্ট রুহুল আমিনের ছেলে দক্ষিণ বাগপাড়া দাখিল মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আমিনুল ইসলাম নিমনকে মাদরাসা থেকে ফেরার পথে অপহরণ করে বিনয়। এক সময় নিমন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে তার মুখ চেপে ধরে। এতে নিমনের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। পরে বিনয় তার স্ত্রীর ওড়না নিমনের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। তারপর লাশটি একটি বস্তায় ভরে ঘরের ভেতর ওয়ার্ডরোবের ভেতর রেখে দেয়।
লাশ থেকে যাতে গন্ধ না বের হয় এ জন্য লাশের ওপর পারফিউম সেপ্র করে। এর মধ্যে অপরিচিত একটি সিমকার্ড ব্যবহার করে নুর আমিনকে জানায় নিমন অপহরণ হয়েছে। তাকে ফেরত দিতে অপহরণকারীরা ১০ লাখ টাকা দাবি করেছে। ঘাতক বিনয় অন্য সিমকার্ড ব্যবহার করে নুর আমিনের পাশে বসেই তার মোবাইলে এসএমএস করতো। কিন্তু নুর আমিন একটুও আঁচ করতে পারেননি তার আদরের ছেলের হত্যাকারী তারই পাশে বসে আছে।
এদিকে রফাদফার এক পর্যায়ে নুর আমিন ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। অন্যদিকে কথামতো বৃহস্পতিবার বিকালে নুর আমিনের ভাই মোতালিব ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকার মহাখালীতে এস এ পরিবহনের কাউন্টারে পৌঁছে দেয়। এর মধ্যে ওইদিনই বিকালে নিমনদের বাড়ির ২০০ গজ দূরে একটি ডোবায় একটি বস্তা ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশের খবর দেয়। পুলিশ এসে বস্তা উদ্ধার করে এবং খুলে দেখে তাতে একটি লাশ। পরে নুর আমিন ঘটনাস্থলে এসে লাশটি তার ছেলে নিমনের বলে শনাক্ত করে।
সন্ধ্যায় পুলিশ লাশটি থানায় নিয়ে যায়। ওদিকে ঘটনা জানতে পেরে ইফতারির পর এলাকাবাসী ঘাতক বিনয়ের বাসা ঘেরাও করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ বিনয়কে উদ্ধার করতে গেলে জনতার রোষানলে পড়ে। এক পর্যায়ে শুরু হয় পুলিশ-জনতা দফায় দফায় সংঘর্ষ। এতে থানার ওসি, ২ দারোগাসহ ১৫ পুলিশ আহত হয়।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নূর আমিন বাদী হয়ে গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘাতক বিনয়ের বাসার ভেতর মাটি খুঁড়ে দু’টি সিমকার্ড উদ্ধার করেছে। ২৪শে আগস্ট মাদরাসা থেকে বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হয় নিমন। যে বস্তায় লাশ পাওয়া যায় ওই বস্তাটি কয়েকদিন আগে ঘাতক বিনয় বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে নিমনের পিতার কাছ থেকে নিয়ে আসে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শহীদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত বিনয় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সুত্রঃ মানবজমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।