আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংলাপ: পর্দার আড়ালে

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। নির্বাচনী জট খুলতে নানামুখী চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আলোচনাও শুর“ হয়েছে। জাতিসংঘের তরফে কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আলোচনা সফল না হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। আদালতের রায়ের পটভূমিতে সংবিধান সংশোধন করে বর্তমান সরকার স্বীকৃত নির্বাচনী ব্যবস্থা তুলে দেয়ার পর থেকে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত। কত প্রাণহানি যে হলো তার কোন হিসাব নেই। অবস্থা এমনই, কত মানুষ মারা গেছে তা নিয়ে কেউ এখন আর মাথা ঘামান না।

গায়েবানা জানাজা, হরতাল, অবরোধ দিয়েই দায়িত্ব শেষ। বক্তৃতা-বিবৃতি তো আছেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনড়। তিনি আর নির্দলীয় কোন ব্যবস্থায় ফিরবেন না। বলছেন, নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়।

অথচ তার সরকারই ওয়ান ইলেভেনের ফসল ঘরে তুলেছে। জনমত জরিপ নির্দলীয় সরকারের পক্ষে। শুধু একটি পত্রিকা নয় প্রায় সব পত্রিকার জরিপের ফলাফলও তাই। প্রতিদিনই ফলাফল দেখতে পাওয়া যায় সংবাদপত্রের পাতায়। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রক্তাক্ত পথে।

আবার ফিরিয়ে আনার জন্যও রক্তাপ্ত পথ বেছে নেয়া হয়েছে। কখন কিভাবে যে এর সমাপ্তি হবে তা রাজনৈতিক পণ্ডিতরাও বলতে পারছেন না। নির্বাচনই বা কখন হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। এক দলীয় বা তিন দলীয় নির্বাচনের আলোচনাও আছে নেপথ্যে। সব দলের অংশগ্রহণ চায় জাতিসংঘ।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর অবস্থানও প্রায় একই। ভারতের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তারা সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন চান। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। তাদের পক্ষে গণতন্ত্রের বাইরে কোন শক্তিকে আমলে নেয়াও কঠিন। নওয়াজ শরিফের সরকারকে ভারত সমর্থন দিয়েছে।

নওয়াজও শপথ অনুষ্ঠানে মনমোহন সিংকে দাওয়াত করেছেন। নওয়াজকে সরিয়ে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় এসেছিলেন। পরিণতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটেছিল। যদিও পারভেজ মোশাররফ দিল্লিতে গিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। মনে রাখা দরকার, দু’টি দেশের মধ্যে একাধিক যুদ্ধও হয়েছিল।

কাশ্মীর নিয়ে তো যুদ্ধ চলছেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি-অবনতি হয় কোন দল ক্ষমতায় আসে তার ওপর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ভারত স্বস্তিতে থাকে। ব্যতিক্রম যে ঘটেনি তা নয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে ভারত বিএনপিমুখী হয়েছিল।

কিন্তু বেশি দিন এই দোস্তি স্থায়ী হয়নি। কারণ বিএনপির ভেতরে এমন শক্তি লুক্কায়িত আছে যারা কথায় কথায় ভারত বিরোধিতাকে পুঁজি করতে চায়। সে জন্য ২০০৪ সাল থেকেই সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। বিএনপির ভেতরে উদারপন্থিরা তখন কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বীণা সিক্রি বহু চেষ্টা করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেননি।

এক রাশ দুঃখ নিয়ে দিল্লি ফিরে যান। বিএনপির ভেতরে একটি শক্তি এখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টায় তৎপর। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি যখন ঢাকায়, তখন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সূচি চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু একটি ই-মেইল বার্তা পাঠিয়ে তা বাতিল করা হয়। এর পেছনে একটি শক্তি কাজ করেছে।

যারা চায় না ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক। এর মূল্য অনেক দিতে হচ্ছে। আরও দিতে হবে হয়তো। ওই বার্তাটি পাঠিয়েছিলেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাঁর ভূমিকা নিয়ে দলের ভেতরেই এখন প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে। দলের স্থায়ী মিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচিত হয়নি।

যে দলটি ক্ষমতায় ছিল একাধিকবার, আবার ক্ষমতায় আসার জন্য লড়াই করছে- তাদের নীতিকৌশলে এত দৈন্য থাকবে কেন বিএনপিতে অবশ্য একেক সময় একেকজন ‘বাউল গুরু'র ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অতি সমপ্রতি এমনও শোনা গেল, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পঞ্চাশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছেন নির্ধারিত বৈঠকে বসার জন্য। বৈঠক শুর“ হয় না। কারণ তখন এই ‘বাউল গুরু' মহামূল্যবান পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। যার পরামর্শে বিএনপি ধরা খেয়েছে অসহায়ের মতো।

অথচ, এই ‘গুর“’র অতীত ইতিহাস সবার জানা। যিনি হঠাৎ করে আধ্যাত্মিক গুর“তে পরিণত হয়েছেন। তিনি নাকি নানা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। যে স্বপ্নে শেখ হাসিনার সাজানো সংসার ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। বাস্তবে উল্টোটা হয়েছে।

হেফাজত ফিরে গেছে শূন্য হাতে। আখেরে কি হবে তা বলা সত্যি কঠিন। নির্বাচনের আর বাকি বেশি নেই। জাতিসংঘের দূত তারানকোর ভাষায়, ‘সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আসলেও তাই।

তারানকো আরও একটি গুর“ত্বপূর্ণ কথা বলেছেন- ‘যে দেশের সৈন্যরা দেশে দেশে শান্তি রক্ষার কাজ করছেন তাদের নিজ দেশে অশান্তি কেউ দেখতে চায় না। ’ এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভেতরকার উদারপন্থিরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। তারা যে করেই হোক সমঝোতা চাইছেন। সরকারের একজন উপদেষ্টা বিএনপির একজন উদারপন্থি নেতার সঙ্গে দু’দফা কথা বলেছেন। দু’জনই দল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

ফলাফল এখনও শূন্য। আনুষ্ঠানিক পত্র গেলে হয়তো আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। বিরোধী নেত্রী জাতিসংঘের দূতকে বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই হতে হবে তা নয়। যে কোন নামেই ডাকা যেতে পারে। সরকার কি চাইছে তা স্পষ্ট নয়।

বিভিন্ন প্রস্তাব কূটনৈতিক পাড়ায় আলোচিত হচ্ছে। যেমন একটি প্রস্তাব হচ্ছে সরকার চায় আগাম নির্বাচন। দু’দল থেকে ৫ জন করে প্রতিনিধি থাকবেন অন্তবর্তী সরকারে। এই সরকার শুরু হবে শেখ হাসিনাকে রেখেই। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে তিনি পদত্যাগ করবেন।

অনেকের ধারণা, জনপ্রশাসনে যাতে বড় ধরনের রদবদল করার সময় না থাকে, সেজন্যই হয়তো এই পরিকল্পনা। তদুপরি বড় প্রশ্ন, এর পর কে আসবেন দৃশ্যপটে কে হবেন প্রধান নির্দলীয় ব্যক্তি কি জায়গা পাবেন এটা নাকি আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে এর সমাধান হতে পারে। বর্তমান স্পিকারের নাম তখন আসতে পারে। বলা হবে, তিনি তো নির্বাচিত ছিলেন না।

পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি স্পিকার হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানোর বিষয়ে আলোচনার পথ খোলা থাকবে। বিএনপির কোন প্রস্তাব এখন পর্যন্ত কূটনৈতিক পাড়ায় নেই। তারা শুধু বলছেন, সরকার কি চায় লিখিতভাবে পাওয়ার পর পরিস্কার করা হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।

দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমানোর জন্য আলাদা আলাদা বৈঠক করছেন। এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসের সম্মানে (যিনি সমপ্রতি মার্কিন কংগ্রেসনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন) তিনি এক পার্টির আয়োজন করেছিলেন। বিএনপির নেতারা সেখানে গেলেও আওয়ামী লীগের কেউই যাননি। সূত্র: মানবজমিন ও Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।