প্লিজ, নছিহত ভাববেন না, নিছক মতামত
আমাদের দেশের গণমাধ্যম ও আবহাওয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞদের আচরণে বিষ্ময় লাগে। গত তিন-চার দিন ধরে আবহাওয়ার বুলেটিনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা এই তিনটি বন্দরের অবস্থান থেকে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের দূরত্ব ঘোষণা করা হচ্ছিল। শুরু থেকেই দেখা গেছে, এই তিনটি বন্দরের মধ্যে মংলা থেকে মহাসেন কাছাকাছি অবস্থান করছিলো। তার মানে এটি দক্ষিণ উপকূলের জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশালের ওপর আঘাত হানবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা বার বার বলে আসছিলেন এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আঘাত করবে।
আর অমনি আমাদের গণমাধ্যমের কর্মীরা চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন । দেশের গোটা প্রশাসনিক দৃষ্টি এখন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। আর এ কারণে বরগুনাসহ অন্য জেলাগুলো ঝুঁকিগ্রস্ত বাসিন্দারা বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং তারা মনে করছেন এটা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজাওে আঘাত হানবে। এই এলাকায় কিছুই হবে না। তাই অনেকেই তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।
অথচ আজ বুধবার দুপুরের দিকে বলা হলো, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন প্রথমে আঘাত করবে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া। আর খেপুপাড়া আঘাত করলে এর সীমান্তবর্তী জেলা বরগুনায় তার প্রভাব পড়বে শতভাগ। বরগুনা, পটুয়াখালী , ভোলা এই তিন জেলা হবে এই ঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, ঝড়টি প্রথমে যাবে খেপুপাড়া, বরগুনা ও পটুয়াখালীর ওপর দিয়ে। তখন তার যে শক্তি থাকবে তা এখান থেকে ২০০-৩০০ কিলোমিটার দূরত্বেও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে গিয়ে থাকবে না।
অথচ এখনো দেশের গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে মহাসেন আঘাত করবে এমন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এই তথ্যের পেছনে না আছে যুক্তি না আছে বাস্তবতা। এটাকে কি বলা যায়, আমাদের গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা , অজ্ঞতা নাকি অন্যকিছু ? আমরা দেখেছি ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময়েও একইভাবে কিছু গণমাধ্যম সাউথখালীকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু সিডওে সবচেয়ে বেশী ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে উপক’লীয় জেলা বরগুনায়। সিডওে সারাদেশে যেখানে তিন হাজার ৩৫০ প্রাণ হারায় তারমধ্যে বরগুনায় প্রাণ হারায় এক হাজার ৬০০ লোক।
অথচ সাউথখালীকে গণমাধ্যম হাইলাইট করায় বরগুনায় লাখ লাখ অনাহারি মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছাতে এক সপ্তাহের বেশী সময় লেগেছিলো। আমাদেও গণমাধ্যম আজকের প্রেক্ষাপটে অনেক এগিয়েছে। মানুষ, প্রশাসন এদের কথা বিশ্বাস করে। এজন্য গণমাধ্যমের আরো বেশী দায়িত্বশীল, যুক্তিযুক্ত, সত্যনিষ্ঠ হওয়া বাঞ্ছনীয়। না হয় গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের উচ্চাশা হতাশায় পরিণত হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।