আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাড়ে ৪০০ কলসেন্টার কাজই শুরু করতে পারেনি...কেন?



দক্ষ জনবলের অভাবেই কলসেন্টার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে চালু কলসেন্টারগুলোর অবস্থা বেশ করুণ। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ পর্যন্ত ৪৮৯টি কলসেন্টারের লাইসেন্স দিলেও ৪৫৬টিই কাজ শুরু করতে পারেনি। মাত্র ৩৩টি কলসেন্টার ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু করতে পেরেছে। অথচ এ শিল্পকে উৎসাহিত করতে মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, মূলত দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে কলসেন্টারগুলোর বেহাল দশা। কলসেন্টারের মূল পুঁজি ইংরেজি ভাষায় অনর্গল দক্ষতা, যা বাংলাদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। এই দক্ষতা তৈরি হলেই আমেরিকা-ইউরোপের চেয়ে ১০ ভাগ সস্তায় দেশে জনবল পাওয়া সম্ভব হবে। লাইসেন্সের হালনাগাদ: জানা গেছে, গত দুই বছরে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে তিন শ্রেণীর কলসেন্টারের লাইসেন্স দিয়েছিল বিটিআরসি। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে লাইসেন্স ফেরত দিয়েছে ৫৫টি প্রতিষ্ঠান।

আর শর্ত ভঙ্গের কারণে ১২৬টির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। বাকি ২০৫টি লাইসেন্সধারীর কোনো তথ্য কারও কাছেই নেই। বিটিআরসির হিসাবে বর্তমানে কলসেন্টারের যাবতীয় কার্যক্রম চালু আছে ৭০টি প্রতিষ্ঠানে। তবে সন্তোষজনকভাবে চালু আছে ৩৫টি। এর মধ্যে ঢাকায় ৩০টি, চট্টগ্রামে চারটি ও সিলেটে একটি।

অবশ্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বিএসিসিও) হিসাবে সচল কলসেন্টারের সংখ্যা মাত্র ৩৩টি। এগুলোও আবার বিদ্যুৎ ঘাটতি ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কারণে সার্বক্ষণিক সচল নয়। বিএসিসিওর অভিযোগ, দক্ষ জনবল ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে লাইসেন্স নিয়েও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি প্রায় ৩০০ কলসেন্টার। বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ জানান, ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে এ লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়। তখন যাঁরা চেয়েছেন তাঁদেরই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যোগ্যতাও যাচাই করা হয়নি।

মাত্র পাঁচ হাজার টাকা লাইসেন্সের দাম হওয়ায় হুজুগের বশেও অনেকে লাইসেন্স কিনেছিলেন। তিনি বলেন, শর্ত অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে সেবা কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় অনেক লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তবে ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে যোগ্যতা যাচাই করে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কলসেন্টারের কাজ: কলসেন্টারের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান তথ্য দিয়ে ক্রেতাকে সেবা ও সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। এটি মূলত আউটসোর্সিং ব্যবসার একটি অংশ।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্রেতাদের সহযোগিতা, টেলিমার্কেটিং এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা, অফার ও তথ্য জানানোই কলসেন্টারের কাজ। একে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) বলা হয়। ২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে বিপিওর বাজার ছিল ৩৮ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালেই তা ৬৪ হাজার ১২০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে দেশের জিডিপি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

কলসেন্টার সংগঠনের অভিযোগ: বিএসিসিওর অভিযোগ, লাইসেন্স নেওয়ার সময় কলসেন্টার পরিচালনা খরচ প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় অনেক কম থাকলেও এখন বিদ্যুৎসংকটের কারণে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। ফলে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এ ছাড়া কলসেন্টারগুলো একই জায়গায় অবস্থিত না হওয়ায় অন্য দেশের মতো আন্তর্জাতিক সুবিধা মিলছে না। আবার বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ হিসেবে বাংলাদেশ মাত্র একটি মাত্র সাবমেরিন কেবেলর সঙ্গে যুক্ত। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিদেশি গ্রাহকেরা এখান থেকে নিরবচ্ছিন সেবা নেওয়াটা ঝুঁকিপুর্ণ বলে মনে করেন।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ জানান, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী (২০১০-১৫) পরিকল্পনায় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (ইপিজেড) আদলে কলসেন্টার ভিলেজ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কলসেন্টার সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে আগামী মাসে লন্ডনভিত্তিক আউটসোর্স পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে বিটিআরসি। বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত কলসেন্টার মেলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেলায় অংশগ্রহণ করবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন: বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এ সেবাখাত নিয়ে প্রথম থেকেই ছিল ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। সরকারের আশা ছিল, বিশ্বে ৬৪ হাজার কোটি ডলারের ব্যবসার এক শতাংশও বাংলাদেশ পেলে ২০০৯-১০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের আয় হবে বছরে ৬৫০ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

সে স্বপ্ন আজও বাস্তবে রূপ নেয়নি। গত দেড় বছরে বাংলাদেশ কলসেন্টার খাতে আয় করেছে ১৫ কোটি টাকা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.