আল্লাহ তা'আলা চান যে, প্রত্যেক মু'মিন স্বচ্ছ সুন্দর নির্মল চরিত্রের অধিকারী হোক। মুসলিম সমাজের কারো থেকে যেন অশ্লীল, ঘৃণা ও চরিত্র বিধ্বংসী কাজ বা আচার-আচরণ প্রকাশ না পায়। তাই আল্লাহ তা'আলা বলেন-"তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোন অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হয়ো না। " (সূরা-আন'আম, আয়াত-১৫১)
-এ আয়াতে প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ দ্বারা যিনা বুঝানো হয়েছে আর অপ্রকাশ্য অশ্লীল কাজ দ্বারা চুম্বন, নর-নারীর বিবাহপূর্ব স্পর্শ ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে। এ ধরনের অশ্লীল কাজ করা তো দূরের কথা, বরং এ ধরনের কাজের নিকটবর্তী হতেও আল্লাহ তা'আলা নিষেধ করেছেন।
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সুস্পষ্টভাবে যিনা থেকে বহু দূরে থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন-"তোমরা যিনার নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয় তা অত্যন্ত অশ্লীল কাজ এবং অত্যন্ত গর্হিত পন্থা। " (সূরা-বনী ইসরাঈল, আয়াত-৩২)
যিনার মাধ্যমে নারীর ভূষণ 'লজ্জা' নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে সে হাজার পুরুষকে ধ্বংসের পথে টেনে আনে। সমাজের মাঝে নানা অশ্লীল কাজ শুরু হয়।
চরিত্র ও মানবতা বলতে কিছু থাকে না। তাই আল্লাহ তা'আলা পর্দার নির্দেশ দিয়ে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। নারী ও পুরুষকে অবনমিত দৃষ্টিতে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন-"আপনি ম'মিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য অধিক পবিত্রতার মাধ্যম।
তারা যা করে, আল্লাহ তা'আলা তা ভালভাবে জানেন। আর আপনি মু'মিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। " (সূরা-নূর, আয়াত-৩০-৩১)
গায়রে মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ) নারীর দিকে কামদৃষ্টিতে দেখা বা তাদের স্পর্শ করা মানুষকে যিনার দিকে ধাবিত করে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের লোলুপ দৃষ্টি ও স্পর্শকেও যিনার অন্তর্ভক্ত করে বলেন-'হাত এবং চোখ যিনা করে। ' মানে অবৈধভাবে কোন নারীকে ধরা বা লোলুপ কাম-ভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকানোও যিনার আওতাভুক্ত।
যিনার শাস্তিঃ
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) ও যায়দ ইবনে খালিদ (রা.) থেকে বর্ণিত। দুই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অভিযোগ উত্থাপন করল। একজন বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফয়সালা করে দিন। অপরজন ছিল অধিক বুদ্ধিমান। সেও বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফয়সালা করে দিন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আচ্ছা বল। লোকটি বলল, আমার ছেলে এই ব্যক্তির কাজ করত। সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করল। তখন তারা আমাকে বলল যে, আমার ছেলেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে। তখন আমি আমার ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে একশত বকরী ও আমার একটি বাঁদী দিয়ে দিলাম।
তারপর আমি আলেমদের জিজ্ঞাসা করলাম। তাঁরা বলল, আমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর তার স্ত্রীকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শোন, আমার জান যার হাতে তার শপথ করে বলছি, আমি অবশ্যই তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফয়সালা করব। তোমার বকরী এবং বাঁদী তোমার নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে।
তোমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত করে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। তারপর উনায়স আসলামী (রা.) কে বললেন, হে উনায়স! এই লোকের স্ত্রীর নিকট যাও। যদি সে অস্বীকার করে, তবে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করো। তারপর মহিলাটি যিনার কথা স্বীকার করলে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হল। " (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, মুয়াত্তা মালিক, দায়িমী)
কোরআনে যিনার শাস্তিঃ
আল্লাহ পাক যিনাকারী পুরুষ ও নারীর শাস্তির কথা ঘোষণা করে বলেন-"যিনাকারী নারী ও যিনাকারী পুরুষ এদের প্রত্যেককে একশ' করে বেত্রাঘাত কর।
আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে কোন দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও। আর তাদের শাস্তি প্রদানকালে যেন মুসলমানদের একটি দল উপস্থিত হয়। " (সূরা-নূর, আয়াত-২)
ইহকালে যিনার শাস্তিস্বরূপঃ
১) আল্লাহ প্রদত্ত রিযিকে বরকত হ্রাস পায়।
২) সর্ব প্রকার মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়।
৩) মানুষের দৃষ্টিতে ঘৃণিত ও লাঞ্চিত হয়।
পরকালে যিনার শাস্তিস্বরূপঃৎ
১) আল্লাহ তাদের উপর ক্রদ্ধ হবেন।
২) তার হিসাব অত্যন্ত কঠিন হবে।
৩) সবশেষে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
সর্বাধিক মারাত্ম যিনাঃ
যিনা গুরুতর পাপ। তদুপরি পাপ কাজকে পরওয়া না করা সর্বাধিক মারাত্মক পাপ।
বর্তমান যুগে অনেক পুরুষ কারণে-অকারণে স্ত্রীকে তালাক দেয়। কিন্তু তালাক দেয়ার পর লজ্জা-শরমের ভয়ে বা বিভিন্ন সমস্যার কারণে তালাকের কথা গোপন রেখে বা ভেজাল ফতোয়া সংগ্রহ করে পূর্বের ন্যায় জীবনযাপন করে। এ ধরনের লোকেরা ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার লজ্জার ভয়ে আল্লাহর গযবে নিপতিত হয়ে জাহান্নামের পথে চলছে। তাদের এখনই সর্তক হওয়া উচিত। এখনই তওবা করা উচিত।
মৃত্যু এসে গেলে আর তওবার সুযোগ থাকবে না। তাই তাদের পাপময় যিন্দেগী পরিহার করে ইসলামী বিধান মেনে চলা দরকার।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে যিনার মতো পাপময় কাজ থেকে দূরে থাকার তৈফিক দান করেন। .........আমীন
এটাই হোক রমাজানুল মোবারক মাসে আমাদের অঙ্গীকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।