১২ বছর বয়সী নাতি সেলিমের কাধে হাত দেখে রাস্তায় নামল আব্দুল করিম। সিগনাল পড়েছে। বড় বড় সাহেবরা তাদের বিলাসবহুল গাড়িতে চেপে সবুজ বাতির জন্য অপেক্ষা করছে। এখনি সময়, কোন রকমে কাকুতি-মিনতি করে যদি ২-৪-১০ টাকা পাওয়া যায়। দেরী হয়ে গেলে সিগনাল ছেড়ে দিবে।
তাহলে আবার অপেক্ষা করতে হবে পরের সিগনালের জন্য।
নাতির কাধে ভর করে ২-১টা গাড়িতে হাত পাতল অন্ধ আব্দুল কাদের। কেউ ১টা টাকাও দিল না। ' এদেশের মানুষের মন দিন দিন কেমন যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে ', ভাবল আব্দুল করিম, ' সময়টাই খারাপ '। হঠাৎ কোথা থেকে যেন একজন পুলিশের চিৎকার শুনা গেল।
চোখে না দেখলেও আব্দুল করিম বুঝতে পারল পুলিশ কথাগুলো তাদেরকেই বলছে।
' এই এই বুইড়া, রাস্তার মধ্যি কি? দ্যাশের নিয়ম-কানুন জান না? সরকার রাস্তায় বা প্রকাশ্যে ভিক্ষা করা নিষেধ করছে। মানুষের দয়া পাওয়ার জন্য অন্ধ সাজস না? এক্কেবারে জেলে ঢুকাই দিমু কইলাম, যা ভাগ '।
পুলিশের কথা শুনে আব্দুল করিম কিছুক্ষনের জন্য স্তম্বিত হয়ে গেল। ' পুলিশ এইডা কি কয়? এইডা কি সম্ভব? সরকার প্রকাশ্যে ভিক্ষা বন্ধ করছে, এইডা কেমুন কতা? ভিক্ষা কি তয় লুকাইয়া করুম? গরীবের পেডে লাথ্থি মাইরা সরকারের কি লাভ? নাকি পুলিশ ঠিকই কইছে।
সরকার আসলেই এই কাম করছে। রাস্তা থেইকা ভিক্ষুক সরাইয়া সরকার দ্যাশরে ভিক্ষামুক্ত বানাইতেছে . . . ', ভাবতে থাকে সে।
আচমকা সেলিমের হেচকা টানে তার সম্বিত ফিরে আসে। ভাবতে ভাবতে কখন যে সবুজ বাতি জ্বলে উঠেছিল তা আব্দুল করিম খেয়াল করেনি। সেলিম হঠাত করে তাকে টেনে পিছনে না আনলে সে যে কোন এক সাহেবের দামী গাড়ির নিচে পড়ত, তাও সে খেয়াল করেনি।
আর সেলিম যখন আব্দুল করিমকে টানতে টানতে ফুটপাথের দিকে নিয়া যাচ্ছিল তখন যে তার দৃষ্টিহীন দুই চোখের কোণে দু ফোটা অশ্রু জমেছিল, তা আর কেউ খেয়াল করেনি।
বিডি নিউজের খবর প্রসঙ্গেঃ ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এক মাসের কারাদণ্ডের দুটি বিল পাস
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।