দুঃখের সগর ভেঙ্গে পথ যেতে হয়, নয়তো জীবনে কোন আসেনা বিজয়,
অসংখ্য ঘটনাবহুল মাসের নাম পবিত্র রমযান। এ মাসে পবিত্র কুরআন নাযিল ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে অনেক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দীর্ঘদিন হেরাগুহায় অবস্থান ও ধ্যানমগ্ন থাকার পর প্রথম ওহী ‘ইকরা বিসমি রাবিবকাল্লাযী খালাক...' এই রমযান মাসে নাযিল হয়। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল হওয়ার ঘটনা ছাড়াও এ মাসে রাসূল (সাঃ) ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ঘটনা সংঘটিত হয়। ৬২৪ খৃস্টাব্দে দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমযানে ইসলামের প্রথম সামরিক যুদ্ধ বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
একদিকে কাফেরদের সুসজ্জিত এক হাজার সৈন্যবাহিনী আর অপরদিকে প্রায় অস্ত্র-শস্ত্রহীন তিনশ' তেরজন মুসলিম সৈন্যবাহিনী। মুসলমানদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আর কাফেরদের নেতৃত্ব দিচ্ছে আবু জেহেল। আল্লাহ রাববুল আলামীন বিশেষ রহমত দিয়ে মুসলমানদের বিজয়ী করেন।
আল্লাহ বলেছেন ‘নিশ্চয়ই আমি বদরের প্রান্তরে তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলাম যখন তোমরা ছিলে নিতান্তই অসহায়, দুর্বল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা ও সান্ত্বনা দানকারী, ইসলামের অগ্রাযাত্রায় যিনি সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) ৬২০ খৃঃ রমযান মাসে ইন্তিকাল করেন।
হযরত খাজিদা (রাঃ) ইন্তিকাল করার কারণে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং এ শোক কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। রাসূল (সাঃ) -এর কাছে মনে হয়েছে তাকে সহযোগিতা করার আর কোন লোক যেন অবশিষ্ট নেই। ইসলামের অন্যতম ঘটনা মক্কা বিজয় এ মাসে সংঘটিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফাতহে মক্কা বা মক্কা বিজয়ের অভিযানটি ৬৩০ খৃস্টাব্দ মুতাবেক ৮ম হিজরীর ১০ রমযান পরিচালনা করেন এবং ১৭ রমযানে মক্কা বিজয় হয়। মক্কা বিজয়ের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে হুদায়রিয়ার সন্ধি মোতাবেক বনু খুযাআ মুসলামানদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে এবং বনু বকর কুরাইশদের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
কিন্তু দু'বছর যেতে না যেতেই কুরাইশ মদদপুষ্ট বনুবকর গোত্র বনু খুযাআ গোত্রের উপর হঠাৎ হামলা করে কতিপয় লোককে হত্যা করে। বনু খুযাআ নবী করীম (সাঃ) এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি তিনটি প্রস্তাবসহ একজন শান্তিদূতকে কুরাইশদের নিকট পাঠান। শর্ত তিনটি হলোঃ ১. নিহতদের কিসাস দিতে হবে, ২. বনু বকর গোত্রকে সকল প্রকার সাহায্য বন্ধ করতে হবে এবং ৩. অন্যথা হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল বলে ঘোষণা করতে হবে। কুরাইশরা শেষ প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। তাই নবী করীম (সাঃ) ৮ম হিজরীর ১০ রমযান ১০ হাজারের এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওনা হন।
মুসলমানদের অদম্য সাহস দেখে কুরাইশরা ভীত হয়ে পড়ে। তাই তারা তাদের প্রতিহত করার পরিকল্পনা নেয়নি। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানসহ দলে দলে লোক মুসলমান হতে লাগলো। রাসূল (সাঃ) মক্কা কাবাঘরের ৩৬০টি দেবতা ভেঙ্গে দু'রাকাত নামায পড়েন এবং বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সকল ঘটনাই ছিল রমযান মাসে।
বদর যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর ইন্তিকাল, প্রথম ওহী নাযিল, ১০ রমযানে নবী পরিবারে ইমাম হাসান (রাঃ) এর জন্ম, ১৯ রমযানে আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ) কুফায় মসজিদে ফজরের ওয়াক্তে নামাযরত অবস্থায় ছুরিকাহত হন, ২১ রমযানে আলী (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন। এ সকল ঘটনাই রমযান মাসে। এছাড়াও হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে যে ‘সহীফা' নাযিল হয় তা পয়লা কিংবা তেসরা রমযানে নাযিল হয়েছিল, রমযানের মতান্তরে আঠার তারিখে হযরত দাউদ (আঃ) এর প্রতি যবুর নাযিল হয়। হযরত মূসা (আঃ)-এর প্রতি তাওরাত নাযিল হয় এ রমযানেই। আর এ রমযানেরই বার কিংবা তের তারিখে নাযিল হয় হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রতি ইঞ্জিল শরীফ।
এসব কারণে রমযানের মর্যাদা অনেক। আর আল্লাহ এ মাস উপলক্ষে বান্দাদের জন্য গোনাহ মাফসহ বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন। এসব সুযোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।