আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।
সামহোয়্যার ইন ব্লগের আমি একজন অতি সাধারন মানের পাঠক তবে মনের তৃষ্ণা মেটাতে মাঝে মাঝে একান্তই নিজের কিছু লেখা প্রকাশ করার দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলি। এতে করে আমাকে ব্লগার বলা যায় কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে এই ব্লগটির কল্যাণে দেশের জন্য কিছু হিতকর কাজ করতে যেয়ে কিছু সাদা মনের অসাধারন মানুষের সাথে ভার্চুয়াল জগত ছেড়ে বাস্তবে সম্পর্ক হয়েছে। পেয়েছি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা যা নিয়ে জীবনের শেষ কয়েকটা দিন খুব সুখের কিছু স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দেয়া যাবে।
তাইত এই ব্লগটির প্রতি আমার মনের অজান্তে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা গড়ে উঠেছে। আর এ কারনেই হয়ত যখন কাউকে দেখি ব্লগটির বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে তখন প্রতিবাদের ঝড় তুলি। এ কারনে তথাকথিত ফেসবুক কনফেশন পেজে অনেকে আমাকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাতে অবশ্য আমি দুঃখ পাইনি বরং যারা এমনটি করেছে তাদের প্রতি করুনাই হয়েছে আমার হৃদয়ে। আমাকে হয়তবা খুব বড় বড় পোস্ট দেয়ার জন্য পাঠকদের মনে বিরক্তির কারন হতে হয় তবে আজকের এই পোস্টটি পড়ে দয়া করে কেউ বিরক্ত হবেন না আশা করি।
এই সিরিজটি যখন শুরু করেছিলাম ভেবেছিলাম চালিয়ে যাব কিন্তু মাঝে আর লেখা চালিয়ে যাওয়া একান্ত কিছু ব্যাক্তিগত কষ্ট থেকে বিরত ছিলাম কিংবা ভেবেছিলাম আর এই সিরিজটি শেষ করব না। কিন্তু ব্লগার একজন আরমান, ব্লগার s r jony, ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসা, ব্লগার বাংলাদেশী দালাল, ব্লগার স্বপনবাজ, ব্লগার আশিক মাসুম, ব্লগার শের শায়রী, ব্লগার মনিরা সুলতানা ও ব্লগার আমিনুর রহমান উনাদের মনের তীব্র অসন্তুষ্টির জন্য মত পাল্টে সিরিজের শেষ পর্ব প্রকাশ করছি। যদিও এই পর্বে সবটুকু শেষ করা হয়ত সম্ভব হবেনা। তবু সংক্ষেপে যতটুকু প্রকাশ করা যায় চেষ্টা করছি। পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করা আর ব্লগে লেখা প্রকাশ করার মাঝে যে পার্থক্য সেটা হল পত্রিকায় যদিও কোটি কোটি পাঠক সেই লেখা পড়ে ব্লগের তুলনায় কিন্তু সেখানে পাঠকের সমালোচনা সরাসরি পাওয়া যায় না যা একমাত্র ব্লগেই সম্ভব।
তাই ব্লগেই লেখালেখি করে সত্যিকারের তৃপ্তি পাওয়া যায় আর যদি সেটা হয় বাংলাদেশের একমাত্র বহুল প্রচলিত ব্লগ সামহোয়্যার ইন ব্লগ যা পৃথিবীতে বাংলা ভাষাকে দিয়েছে এক নতুন পরিচিতি তখন মনের আনন্দ বেড়ে যায় বহুগুন।
ভালোবাসা এমন এক অনুভুতি যা নিয়ে আমার খুব প্রিয় একটি গান গাইতে ইচ্ছে করে আমি প্রেম কি জানিনা......আমি প্রেম কি বুঝিনা.........তবু ধিকি ধিকি মন যায় পুড়ে............কে জানে হায় কোন আগুনে......... মরিগো আমি এই ফাগুনে.........
যদিও এখন ফাগুনের আগুন ঝরা সেই দিন নয় এখন বাংলাদেশ উত্তপ্ত রয়েছে মহাসেন, শাপলা চত্তর, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ আর সাভার ট্র্যাজিডি নিয়ে আর আমি এতসব ঝামেলার মাঝে বসে বসে লিখছি আমার প্রেম কাহিনী।
অতপর কাণ্ডারী অথর্ব তার সকল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সিদ্ধ্যান্ত নিল যে আর নয় কোন মানবী প্রেম এবার পশু পাখির প্রতি তার সবটুকু ভালোবাসা দান করে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবে সুখে শান্তিতে। অথর্ব মস্তিষ্ক হতে নির্গত চেতনা নিয়ে একদিন এই কাণ্ডারী অথর্ব অর্থাৎ স্বয়ং এই আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। দেখি একটি কুকুরের বাচ্চা (দয়া করে কেউ একে গালি মনে করবেন না) পরে রয়েছে।
প্রথমে ভাবলাম বুঝি মরে গেছে কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমান করে আমি কাছে যেতেই জিহবা বের করে উঠে বসল। আমার সদ্য ছ্যাকা প্রাপ্ত বিষাদ মনে দারুন এক মায়ার উদয় হল। আমি বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে বাসায় চলে এলাম। তারপর বাসার ছাদে নিয়ে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে নিয়ে এলাম। রোজ আমি নিজের সিগারেটের খরচ কমিয়ে দিয়ে শুরু করলাম কুকুরের জন্য বাজার হতে গোশত আর বিস্কুট কেনা।
দেখতে দেখতে অতীব যত্নের কারনে রাস্তার সেই নেড়ি কুকুরের বাচ্চাটি বেশ নাদুস-নুদুস আর বড় হয়ে উঠল যেন বিদেশী কোন কুকুর। আমার কেবলই মনে হল হায়রে এতদিন যদি আমি কোন মানবীকে এভাবে যত্ন নিতাম তবে তার মনেও আমার প্রতি ভালোবাসা এমন নাদুস-নুদুস হয়ে উঠত। আমি আদর করে আমার পোষা কুকুরটিকে ডাকতাম তুফান বোলে। যেমন ভাবে ডাকতে চেয়েছিলাম আমার ভালোবাসার মানুষটিকে জান বোলে। কিন্তু অথর্ব যাকেই তার হৃদয় দান করে তার হৃদয়ে কোন প্রতিক্রিয়া না হলেও আমার হৃদয়ে ঠিকই তুফান বয়ে চলে।
ঠিক সেই সময়ে রাজনীতি করতাম বোলে পুরষ্কার হিসেবে একটি পিস্তল পেয়েছিলাম। একদিনের ঘটনা। আমি আমার ভালোবাসার অতি আদরের কুকুরটিকে কোনরকম বাঁধন ছাড়াই খোলা ছেড়ে দিয়েই পালতাম আর সেই সুযোগ নিয়ে তুফান একদিন সন্ধ্যায় আমার প্রানের প্রিয়া রেশমিকে রাস্তায় একা পেয়ে কামড়ে দিল পায়ে। আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল তৎক্ষণাৎ। আমি তুফানকে আমাদের বাড়ি হতে অনেক দূরের একটি খোলা মাঠে নিয়ে গিয়ে হাতের পিস্তলটি দিয়ে গুলি করলাম।
তারপর তুফান আর বেঁচে ছিল কিনা পেছনে ফিরে দেখি নাই। সোজা বাড়ি ফিরে এলাম। সেই রাতেই সিদ্ধ্যান্ত নিলাম অনেক হয়েছে আর নয় এবার তাহলে আমিও একেবারে না ফেরার দেশেই ফিরে যাব। একটি ধারাল বলাকা ব্লেড দিয়ে বাম হাতের শিরা কেটে ফেললাম। দেখলাম রক্তে ভেসে যাচ্ছে পুরো মেঝে তারপর আর কিছু মনে নেই শুধু সাদা হয়ে গেল আমার চারদিকের সবকিছু মুহূর্তের মধ্যে।
কিন্তু ঐযে বললাম আমি অথর্ব তাই ভুল করে শিরা না কেটে শিরার একটু উপরে ব্লেড চালিয়ে দেয়ার কারনে বেঁচে ফিরলাম সেই যাত্রায়। বন্ধুরা সবাই সাজেশন দিল বহুত হয়েছে আমি নাকি জীবনে কখনো রেশমিকে ভুলতে পারবনা তাই আমি যেন রেশমিকে যেয়ে সরাসরি সব কিছু পুনরায় বোলে দেই। আর যদি সে প্রত্যাক্ষান করে তবে যেন ছিনিয়ে নিয়ে আসি আমার রেশমিকে।
আমি রেশমির মোবাইল নাম্বার জোগাড় করলাম। একের পর এক মোবাইলে পরিচয় গোপন করে এস এম এস পাঠাতে শুরু করলাম।
এস এম এসের ধরনগুলো ছিল অনেকটা এই রকম যে আজ তোমাকে সাদা সালোয়ার কামিজে ভীষণ সুন্দর লাগছে, এখন তুমি আছো বাবুলের দোকানের সামনে ওখানে তোমার কি কাজ মানে কড়া নজরদারি করছিলাম ওর উপর। এর মাঝে কয়েকবার রেশমি আমাকে ফোন দিয়েছিল। কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই ফোন রিসিভ করি নাই। কিন্তু খুব বেশী দিন নিজেকে গোপন করে রাখতে পারি নাই। একদিন রেশমি আমাকে এস এম এস পাঠাল যে আমি এখন বারান্দায় বসে বসে কেন এত রাতে সিগারেট ফুঁকছি।
ব্যাস ধরা খেয়ে গেলাম। শুরু হল এস এম এস আর ফোনের সাথে রাত্রি যাপন দুটি পোড় খাওয়া হৃদয়ের। এর মাঝে রেশমির একটি ভাল বিয়ের প্রস্তাব এলো। বিয়ের দিন তারিখও পাকাপাকি হয়ে গেল। রেশমি আমাকে আমার সিদ্ধ্যান্ত জানিয়ে দিতে বলল।
সেই দিন এক বোতল মদ কিনে নিয়ে এসে বসলাম মনের সকল জ্বালা মেটাতে। মদ গিলছি আর ভাবছি আমার আরও ছয় মাস বাকি রয়েছে সেমিস্টার শেষ হতে আমি বেকার এই মুহূর্তে আমার কিবা করার আছে। বাসায় জানিয়েছি কিন্তু সব শুনে বাবা মায়ের কড়া রোষানলে পরতে হল। অতএব অবশেষে রেশমিকে পেয়েও পুনরায় শেষবারের মত হারাতে হবে রেশমিকে। হায় অথর্ব ! সারা রাত বসে বসে ভেবে পরদিন রেশমিকে দেখা করতে বললাম।
সিদ্ধ্যান্ত নিলাম এখন কাজী অফিসে গোপনে বিয়ে করে রাখব আমার পরীক্ষা শেষ হলেই দুজনে দুজনের পরিবারকে জানাব আমরা বিয়ে করেছি। আর ততদিনে রেশমি ওর পরিবারের কাছে জানিয়ে দেবে যে তার পরিবার যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে সে ওই ছেলের সাথেই বিয়ে করবে কিন্তু ছয় মাস পরে। প্ল্যান মোতাবেক আমরা পরদিন কাজী অফিসে বিয়ে করি। সাক্ষী হিসেবে ছিল আমার কিছু বন্ধু আর রেশমির এক বান্ধবী। আমরা বিকেলে কাজী অফিসে বিয়ে করলাম আনন্দে মিষ্টি খেলাম তারপর বন্ধুদের বিদায় দিয়ে একটি রিক্সা নিলাম ঘুরব বোলে।
রিক্সা চলছে আমি আর রেশমি আমাদের সামনের রঙিন দিনগুলো নিয়ে কথা বলছি। এর মাঝে শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড বৃষ্টি। রিক্সায় ভিঝলাম যেন মধুচন্দ্রিমা আজ রিক্সায় সেরে নিবে অনেক দিনের পোড় খাওয়া দুটি জীবন নতুন করে প্রান ফিরে পেয়ে। আমি রেশমিকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলাম। আমার জান কাঁদল কিনা ঠিক বুঝতে পারিনি বৃষ্টিতে ভিজে থাকার কারনে তবে রেশমি আমাকে শুধু কান্না ভরা আবেগ নিয়ে বলল এই একটি চুমুর কারনে সেইদিন সন্ধ্যায় রেশমি ওদের ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে চেয়ে যা সে সারা জীবন ধারন করে বেঁচে থাকতে চেয়ে ছিল।
কিন্তু অথর্ব সেই দিন সেটা বুঝতে পারেনি। আর এই অথর্বের কারনেই আজ এতটা বছর দুটি জীবন ক্ষয়ে ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে গেছে বার বার।
একটি একটি করে দিন চলে যায় ছটি মাস মনে হতে থাকে অনন্ত কাল। আমার পরীক্ষা শেষে হাতে সার্টিফিকেট পাই। দুজনে মিলে সিদ্ধ্যান্ত নেই বাড়ি ছেড়ে পালাব।
কারন দুজনের পরিবার আমাদের বিয়ের জন্য রাজী ছিল না। আর থাকবেই বা কি করে আমিত সদ্য বেকার। আর ওদিকে রেশমির জন্য উপযুক্ত পাত্র পেয়ে কিছুতেই হাত ছাড়া করতে রাজী নয় ওর পরিবার আর আমার বাবা মা রাজী নয় এই মুহূর্তে আমার বিয়ে নিয়ে। ব্যাস দুজনে রাতের আঁধারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেলাম কক্সবাজারে। কক্সবাজারে যে হোটেলে উঠলাম আমি ম্যানেজার কে বললাম সব কিছু বিস্তারিত।
ম্যানেজার এত চমৎকার মনের একজন মানুষ যে সাথে সাথে আমাদের সেই হোটেলের সবচেয়ে দামী রুমটি ভাড়া দিল অত্যন্ত সস্তায়। আমি তখন সম্পূর্ণ বেকার ছিলাম তাই হাতে কোন টাকা ছিল না। যা টাকা ছিল সবই রেশমি তার বাড়ি হতে চুরি করে সাথে নিয়ে এসেছিল। আর আমি আমার এক বন্ধুর কাছ হতে বেশ মোটা অংকের টাকা ধার করে নিয়ে এসেছিলাম। রেশমিকে নিয়ে গেলাম একটি পার্লারে বউ সাঁজাতে।
হোটেলে ফিরে দেখি আমাদের রুমের বিছানাটি পুরো বাসর রাতের বিছানার মতই সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে ম্যানেজার। আর সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেই আজো কক্সবাজার বেড়াতে গেলে আমরা সেই হোটেলেই যেয়ে উঠি। টেলিভিশনে তখন একটি গান হচ্ছিল। কিভাবে যেন সময় আর পরিস্থিতির সাথে প্রকৃতির নিয়মে গানটি মিলে গেল।
ছেঁড় না ছেঁড় না হাত
দেবনা দেবনাগো যেতে
থাকো আমার কাছে
ও তুমি ছাড়া বল ওগো
কে আর আমার আছেগো সুজন
থাকো আমার কাছে
ছেঁড় না ছেঁড় না হাত
দেবনা দেবনাগো যেতে
থাকো আমার কাছে
আমায় তুমি নাও রাঙ্গিয়ে
রংধনুকের রঙে
মনের ময়ূর ছড়াক পাখা
তোমার চলার ঢঙে
আমার খুসির ঝিলিক তোমার
জল চুড়িগো কাঁচের কন্যা
থাকো আমার কাছে
এক চোখে সূর্য তুমি
চন্দ্র আরেক চোখে
তোমার বাঁশী নেয় যে ডেকে
আমায় স্বপ্ন লোকে
ও প্রথম প্রেমের কলি তুমি
আমার কদম গাছেগো সুজন
থাকো আমার কাছে
একই সুরে সুর মিলিয়ে
তুমি আমি দুজন
সারা জীবন প্রেমের নীড়ে
করব কুহ কূজন
আমার মনের নীল সাগরে
সুখেরই ঢেউ নাচেগো সুজন
থাকো আমার কাছে
ছেঁড় না ছেঁড় না হাত
দেবনা দেবনাগো যেতে
থাকো আমার কাছে
ও তুমি ছাড়া বল ওগো
কে আর আমার আছেগো সুজন
থাকো আমার কাছে
ছেঁড় না ছেঁড় না হাত
দেবনা দেবনাগো যেতে
থাকো আমার কাছে
আমরা আমাদের প্রনয় অভিসার শেষে যখন ঢাকায় ফিরে এলাম দুই পরিবারের মাঝে তখন এক যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা বিরাজমান।
আমাদের দুজনকে কোন পরিবারই মেনে নিতে পারেনি। তাই ভাগ্যের নির্মম কষাঘাঁত মেনে নিয়ে দুজন হাতে হাত রেখে পথে নামি এক অনিশ্চয়তার পথে। ঢাকা শহরে কিছু এক তালা টিনের বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। কয়েকটি এক রুমের ঘর নিয়ে একটি বাড়ি হয় সেগুলো। এক একটি ঘরে থাকে এক একটি পরিবার।
সেগুলোতে থাকে একটি মাত্র রান্না ঘর যেখানে সবাই একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে রান্না করে। কেউ চাইলেই এক কাপ চাও পর্যন্ত আগে অথবা পরে রুটিনের বাইরে চুলায় বসাতে পারেনা। থাকে একটি মাত্র টয়লেট কাম গোসল খানা যেখানে টয়লেট করার জন্যও লম্বা লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। আবার নিয়ম করে সেই টয়লেট পরিষ্কার করতে হয় সবাইকে। সাধারনত এসব বাড়িতে ভাড়া থাকে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ জন।
আমি আর রেশমি এমনই একটি বাড়ি ভাড়া নেই। ঘর ভাড়া ছয় শত টাকা বিদ্যুৎ, পানি আর গ্যাস বিল সহ। আমি তখন বাংলাদেশ রেডিওতে স্ক্রিপ্ট রাইটারের কাজ পাই তাও এক বন্ধুর কারনে। বেতন মাত্র তিন হাজার টাকা। আমার স্ত্রী তখন পড়া শোনা করে ।
আমি চাই নাই ওর পড়াশোনা বন্ধ হোক। তাই আমার এই স্বল্প আয়েই ওর পড়াশোনা আর আমাদের ছোট্ট সুখের সংসার কেটে যায় প্রায় ছয়টি মাস। ঘরের আসবাব বলতে একটি মাত্র মেলামাইন বোর্ডের আলমিরা আর একটি তোষক আর একটি মাত্র বালিশ যাতে আমরা দুইজন ঘুমাতাম দারুন চমৎকার শান্তির ঘুম যেন জান্নাতের কোন হাসনাহেনা ফুলের বাগানে আমাদের ছোট্ট সুখের সংসার পাতা হয়েছে। এমনও দিন গেছে কখনো একবেলা না খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছি। আর যখন খেয়েছি শুধু ভাত আর আলু ভর্তা আর ডাল দিয়েই খুদা নিবারন করেছি।
আমার আজো মনে পরলে চোখে অশ্রু চলে আসে যে সকালে চায়ের বদলে ভাতের মাড় খেয়ে কাটাতাম চা মনে করে। অথচ আজ আমার ঘরে জীবন যাপনের আধুনিক সব কিছুই মহান আল্লাহ দিয়েছেন। দিয়েছেন ভোগ বিলাসের সব কিছুই। আর চা মাঝে মাঝে অল্প একটু পান করে বিস্বাদ মনে করে ফেলেও দেই। কেন জানি না এত সুখের মাঝে থেকেও এখন আমরা আর দুজনে সুখে নেই।
আমাদের সেই ঘরের ডান দিকের ঘরে থাকত একটি গার্মেন্টসে চাকরী করা মেয়ে একা, বাম দিকের ঘরে থাকত স্বামী- স্ত্রী আর একটি মেয়ে, ভদ্র লোক একটি জেনারেল ষ্টোরের সেলস ম্যান এর কাজ করত। আরও কয়েকটি পরিবার ছিল তাদের কেউ ছিল রিক্সা চালক আর কেউ মিশুকের ড্রাইভার। আমার আর রেশমির মত যারা সারা জীবন থেকেছে বলা যেতে পারে রাজপ্রাসাদে কখনো কষ্ট কি সেটা বুঝতেও পারেনি আর এই আমরাই কিনা এমন একটি পরিবেশে এমন একটি জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলাম প্রায় ছয়টি মাস ভাবতেই আজো সত্যি চোখে অশ্রু ধারা নেমে আসে। একদিন রেশমির সাথে আমার কি এক বিষয় নিয়ে যেন রাতে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। পরদিন সকালে রেশমি আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
আমি সারাদিন খুঁজেও যখন আর রেশমিকে কোথাও পাই নাই তখন প্রায় পাগলের মতন রাস্তায় রাস্তায় রেশমিকে খুঁজতে থাকি। সেদিন সারাদিন ধরে ঝড় হচ্ছিল। পুরো রাস্তা ঘাট কোমর সমান পানিতে ডুবে গিয়েছিল। আমি সেই কোমর সমান পানিতে আমার রেশমিকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে শুধু হেটেই চলেছি সারাবেলা সেই ঝড়ের তাণ্ডবে ভিজে ভিজে। ঠিক সন্ধ্যা বেলায় কোন এক পথের মোড়ে এসে দুজনার দেখা হয়।
দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি। অথচ আজত ঝগড়া হয় ঝড় হয় কিন্তু সেই আবেগ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে আমি তার কোন হিসেব মেলাতে পারিনা।
তারপর একে একে কেটে যায় দিনগুলো। আমারও উন্নতি হতে থাকে আয় রোজগারের। আর বদলে যেতে থাকে যাপিত জীবনের স্রোত ধারা।
দুই বছর পর রেশমি আর আমার ভালোবাসার প্রথম স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে দুজনার মনের শত কষ্ট মুছে দিয়ে জন্ম নেয় আমাদের প্রথম পুত্র সন্তান। আমার মনে আছে আমার ছেলে যখন তার মায়ের পেটে আর যখন জন্ম নিল তার পরের এক মাস আমি অফিস শেষে বাসায় ফিরে রান্না করতাম। ঠিক সেই সময় আমার প্রায় সকল প্রকার রান্নার চর্চা হয়ে উঠে। এভাবে যখন কেটে যায় আরও চারটি বছর আমাদের দুই পরিবার আমাদের মেনে নেয়। আমি আমার নিজ বাসায় ফিরে আসি কিন্তু সে ফেরা আর স্বাভাবিক কোন ফেরা নয় যেন।
অমীমাংসিত একটি সমাধান দুই পরিবারের মাঝে আজো। নিজ বাড়িতে থেকেও যেন আশ্রিত আমরা কোন এক অচেনা ভাড়াটিয়া পরিবার। তারপর জন্ম নেয় আমাদের দ্বিতীয় পুত্র সন্তান। আমি যখন সারা দিনের কাজ শেষে বাড়ি ফিরি আমার মাত্র এক বছর বয়সের ছোট ছেলেটি যার মুখে এখনো কথা ফুটে নাই যখন শুধু পাপা পাপা করে হামাগুড়ি দিয়ে আমার দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশের সময় ছুটে আসে অস্থির এক পাগল করা হাসি দিয়ে আমি যেন সত্যি তখন জীবনের সকল গ্লানিগুলো মুহূর্তেই ভুলে যাই। মনে হয় এইত জীবন।
এইত বেঁচে থাকার আমার যাপিত জীবন। এরই নাম ভালোবাসা এরই নাম বুঝি প্রেম।
কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান
কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - ১ম পর্ব
কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - ২য় পর্ব
কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - ৩ য় পর্ব
কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - চতুর্থ পর্ব
কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - পঞ্চম পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।