হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র
আরজ আলী মাতুব্বর মৃত্যুর আগে তাঁর পুরো শরীরটাই দান করে গিয়েছিলেন। তাঁর চোখ দিয়ে দুনিয়ার আলো দেখেছিল তরুনি একটা মেয়ে, আমি জানিনা সে এখনো বেঁচে আছে কি না, বেঁচে থাকলে এখনো দেখছে। তাঁর কঙ্কালটা এখনো আছে বরিশাল মেডিকেল কলেজে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাবহৃত হয়। লামচরি গ্রামের আস্তিক নাস্তিক এবং সকল ধর্মের মানুষের কাছে বিশ্বাসী, সৎ এবং পরপোকারি মানুষ হিসাবে পরিচিত আরজ আলী চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরও যেন তাঁর শরীরটা মানুষের কল্যানেই ব্যাবহৃত হয়। আরজ আলীর মতো এমন অনেকেই আজকাল মরনোত্তর চোখ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা পুরো শরীরটাই দান করে যান মানব কল্যানে।
মানবতার জন্য অকৃত্তিম ভালোবাসা আছে বলেই কিছু মানুষ এই কাজ করেন। সভ্যতার প্রথম থেকেই কিছু মানুষ মানবতার প্রতি ভালবাসার কারণে নিজেদের অকাতরে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকেন। ফিলিস্তিনের যেই মুক্তিযোদ্ধা শরীরে বোমা বেঁধে ঘাতক ট্যাঙ্কের নিচে ঝাপিয়ে পরে সৎকারের প্রত্যাশা সে করে না। নিজের শরীর ছিন্নভিন্ন করে, নিশ্চিহ্ন করে হলেও সে সজাতির কল্যান চায়।
আমি নিজে একজন মানবতাবাদী ব্যক্তি হলেও আমার মানবতায় লিমিটেশন আছে।
আমি স্বজাতির বাইরের মানুষের কল্যান চিন্তা নিয়ে খুব একটা ভাবিত না। আমার স্বজাতির, আমার এই দেশের আস্তিক, নাস্তিক, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে কাউকেই আমি ঘৃনা করতে চাই না, সচরাচর করিও না। সম্পূর্ণ ভিন্নমতের ব্যাক্তি এবং গোস্টিরও ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করতে পারি, প্রাপ্য সম্যানটুকু দেই। কোন ধর্ম বা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন ইস্যু বা টপিক অনুযায়ী আমি সমালোচনা করি, ঢালাওভাবে কোন গোস্টির সমালোচনা আমি করি এমন নজির নাই। একমাত্র নারী অবমাননাকারী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ব্যাক্তি বা মতবাদ ছাড়া সবার সাথেই আমি কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা এবং পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে যৌথ স্বার্থ রক্ষায় বন্ধুত্বে বিশ্বাসী।
"আমি ধর্মকে ঘৃনা করি" অথবা আমি "আস্তিকদের ঘৃনা করি", এই জাতীয় বিষয় আমার মধ্যে নাই।
কিন্তু আজকে আমার মন ঘৃনায় বিষিয়ে গেছে। আস্তিকতার মানে যদি হয় ঢালাও ঘৃনা এবং ভালো কাজের প্রতি অশ্রদ্ধা তবে সেই আস্তিকতাকে আমি ঘৃনা করি এবং এই ধরণের আস্তিকতা যারা পোষন করে সেই ধরণের আস্তিকদের আমি মানুষ নামের অযোগ্য বলেই মনে করি। কুকুর, বেরাল, শকুন, শেয়ালের অবস্থানও সেইসব আস্তিকের চেয়ে অনেক উচুতে। ব্লগার হা...হা...হা... একটা পোস্ট দিয়েছেন, "নাস্তিকদের লাশ দিয়ে যা যা করা যেতে পারে" ।
একজন আস্তিক হিসাবে আপনি নাস্তিকদের অনেক কিছুরই সমালোচনা করতে পারেন। সেই ধরণের সমালোচনা হয়েও আসছে। কিন্তু মরনোত্তর দেহদানের মতো একটা মহৎ কাজ নিয়ে এই ধরণের বিবেকহীন ফাজলামি এবং সমালোচনা কোন সুস্থ্য মস্তিস্কের মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। অবশ্য ব্লগার হা...হা...হা...এর মতো একজন নোংড়া মনের মানুষের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক, সে এই ধরণের পোস্ট দেয়ায় আমি খুব বেশি অবাক হই নাই, মানুষ হিসাবে সে কতটা নিচু মনের তা আমার কাছে আরো পরিস্কার হয়েছে। কিন্তু দুঃখ পেয়েছি ভিন্ন যায়গায়।
ঐ পোস্টে ভালো লেগেছে ৪৮জন মানুষের। ঐ পোস্টের অসুস্থ্য বক্তব্যের সাথে সহমত পোষন করে মন্তব্য করেছেন বহু আস্তিক ব্লগার। বিষয়টা আর কোন একক ব্যাক্তির পর্যায়ে থাকেনি, হয়ে গেছে ব্লগের "আস্তিক" গোস্টির ভিউ পয়েন্ট। ব্লগের সুপরিচিত কিছু মুখকেও এইধরণের নোংড়ামি করতে দেখেই সবচেয়ে অবাক হয়েছি। ভাবতে দুঃখই লাগছে এদের আস্তিকতা এবং ধর্ম বিশ্বাসকে আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেছি, অথচ কোন শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতাই এরা রাখেনা।
কোন নাস্তিক কি কখনো ইসলামের মহৎ বৈশিষ্ট গুলো যেমন যাকাত প্রথা, এতিমদের প্রতি ন্যায় বিচার এইসবের সমালোচনা করেছে? আমি অন্তত দেখি নাই।
এর নাম যদি আস্তিকতা হয় তাহলে আমি "আস্তিকতা কে ঘৃনা করি", এরাই যদি আস্তিকতার প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে বলবো আমি "আস্তিকদের ঘৃনা করি"। আমার লাস শেয়ালে, কুকুরে শকুনে ছিড়ে খুড়ে খাক, কোন অবলা প্রাণীর খাদ্যই আমি হবো, কিনতু এই জাতীয় পশুর চেয়েও অধম আস্তিকের হাতের সৎকার যেন আমি না পাই। আমি জানিনা স্রষ্টা বলে কেউ আছেন কি না। যদি থাকেন এবং তিনি যদি ন্যায় বিচারক হন, তাহলে এই জাতীয় আস্তিকদের সৎকারের হাত থেকে তিনি আমাকে বাঁচাবেন বলেই বিশ্বাস করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।