আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেড়ি কুকুরের ভাষণ: অবিচার যখন হয় আইন-শফিক রেহমান

ইসলামের পথে থাকতে চেষ্টা করি...। উপস্থিত মানুষবৃন্দ এখানে স্যুট-টাই পরে এলেও আসলে আমি একটি নেড়ি কুকুর। সাধারণত আমি ইন্টারভিউ দিয়ে থাকি। কিন্তু কোনো গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা এই প্রথম হচ্ছে আমার। আমার এই ধরনের অভূতপূর্ব উপস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন, আজকের এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক এনার্জি সলিউশন অফ বাংলাদেশ বা সংক্ষেপে ইএসবি নামের প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন উদ্যমী সাংবাদিক।

এরাই আমাকে নিয়ে এসেছেন আপনাদের মতো সুধী ও বিশিষ্ট মানুষজনের সামনে। আপনারা জানতে চাইতে পারেন, এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি কিভাবে ঘটল? কেন এমন একটি গুণী মানুষের সমাবেশে একটা নেড়ি কুকুরের আবির্ভাব ঘটলো? আপনাদের কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য আমি এই ঘটনার পেছনের ঘটনাটির কথা বলছি। দিন পাঁচেক আগে আমি আমার অভ্যাস মতো খাবারের খোঁজে ডাস্টবিনের পাশে ঘুরঘুর করছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন সাংবাদিক আমাকে ঘেরাও করে বললেন, শুক্রবার, তেসরা ডিসেম্বরে, আপনাকে প্রেস ক্লাবে একটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে হবে, যার টাইটেল হবে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। আমি তাদের বললাম, কুকুর জাতির মধ্যে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই, কুকুরাধিকার বলে কিছু নেই এবং আমাদের কোনো কুকুর মাধ্যম বা কুকুরমিডিয়া নেই।

মোট কথা, এই বিষয়টি সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞান নেই। সুতরাং আমি প্রেস ক্লাবে যাবো না এবং কোনো প্রবন্ধ পাঠ করব না। ওই সাংবাদিকরা ছিলেন নাছোড়বান্দা। তারা খুব অনুনয়-বিনুনয় করতে থাকলেন। আমি তখন জানতে চাইলাম, কেন তারা কোনো মানুষকে দিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করাচ্ছেন না।

তাদের উত্তর শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। তারা সবাই একবাক্যে বললেন, নির্দিষ্ট বিষয়টি নিয়ে মূল প্রবন্ধ লেখা ও পড়ার জন্য কোনো মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ৩০ নভেম্বর বিরোধী দল বিএনপি আহূত হরতালের কারণে বহু বিশিষ্ট ও গুণী মানুষকে বাড়ির বাইরে কাটাতে হচ্ছে। যেকোনো সময় তাদের যেকোনো স্থানে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে এই আতঙ্কে তারা সবাই নিজের শহরেই পলাতক জীবনযাপন করছেন। বিএনপি’র নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাড়িতে পুলিশ আগেভাগেই হানা দিয়েছিল।

তাকে তারা পায়নি। কিন্তু তার অভিজ্ঞতার পরে গণতন্ত্রকামী অথচ বিরোধী মতাবলম্বী অথবা ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষরা নিজেদের বাড়ির বাইরে থাকছেন। তারা সবাই ঠিকানাবিহীন হয়ে গেছেন। সুতরাং তারা আমার পার্মানেন্ট ঠিকানা, অর্থাৎ প্রযত্নে ডাস্টবিনে এসেছেন এবং আমাকে পেয়েছেন। তাদের এই দুর্গতি জেনে আমি রাজি হলাম।

তবে আমি আমার দুর্বলতা অর্থাৎ গণতন্ত্র বিষয়ে আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা বললাম। আমি আবারও বললাম, আমাদের কোনো কুকুরতন্ত্র নেই, কোনো কুকুরাধিকার নেই। আর বাকস্বাধীনতার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা তো কথা বলতে পারি না। আমরা শুধু ঘেউ ঘেউ করতে পারি।

সিনিয়র সাংবাদিক একজন নির্ভয় দিয়ে বললেন, আপনি আমেরিকার ষোড়শতম প্রেসিডেন্ট এব্রাহাম লিংকনের জীবনীটা পড়ে নেবেন। লিংকন ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি এক সন্ধ্যায় থিয়েটার হলে নাটক দেখার সময় আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। বুঝলাম, প্রায় দেড় শ’ বছর আগে গণতন্ত্র আমেরিকায় যেমন বিপজ্জনক ছিল, ঠিক তেমনি এখন, প্রায় দেড় শ’ বছর পরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.