থিংক সিম্পল।
বিবর্তনের কারণে জীব জগতের একেক প্রজাতী একেক রকম ভাবে গড়ে উঠেছে। মানুষ শক্তিশালী হয়েছে মস্তিষ্কের মাধ্যমে। যখন থেকে মানুষ ভাবতে শিখেছে। তখন থেকেই প্রাণী জগতে তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে বলে সে মনে করেছে।
মনে করেছে শক্তিশালী কোন সত্ত্বা তাকে সৃষ্টি করেছে। ধারনা করেছে এ জীবনের পরে রয়েছে আরেক জীবন। তাই মৃত দেহ সৎকারের নানা পদ্ধতি আবিস্কার করেছে। যাতে মরণের পরেও তার দেহ কাজে আসে, অথবা তার আত্মা যথাযথ ভাবে পরকালের রাস্তা পারি দিতে পারে।
মানুষ ছাড়াও একেবারে খুব কাছাকাছি সময়ে যেই বাইপেডাল হোমিনিড বা দুই পায়ে হাটা এপ প্রজাতির অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল, নিয়ান্ডার্থাল তাদের মধ্যে অন্যতম।
এরাও মানূষের পূর্বপুরুষ ইরেকটাস থেকে উৎপন্ন হয়েছিল। এদের ব্রেনের সাইজ ছিল আমাদের চেয়ে বেশি ১৪০০ সিসি, কিন্তু আমাদের মতো জটিল ভাষা তৈরির ক্ষমতা ছিল না, ভোকাল কর্ডও তেমন উন্নত ছিল না, দৈহিক ভাবে আকারে ছিল ছোট কিন্তু শক্তিশালী। নিয়ান্ডার্থালদের রীতিমত সমাধিস্থল পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে আরো প্রাচীন কিছু মানুষ্য প্রজাতীর সমাধিও। নিয়ানডার্থালদের যতগুলো ফসিল পাওয়া গেছে তার মধ্যে শানিদার ৪ এবং ৩ কে যে সজ্ঞানে সমাধিস্থ করা হয়েছে এ ব্যাপারেও প্রায় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তাদের এসব সমাধি খুব আহামরি কিছু ছিল না। সতীর্থরা সম্মানের সাথে, ফুল ফল, সামান্য কিছু অস্র দিয়ে তাকে কবর দিয়েছে। এরা আমাদের পূর্বপুরুষ না, সম্পূর্ন ভিন্ন একটা প্রজাতি, তারপরও এদের মধ্যে এইধরণের সৎকার চিন্তা তৈরী হয়েছিল প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রাচীন ফারাওদের তৈরী পিরামিডের কথা আমরা সকলেই জানি। ফারাওরা মনে করত মৃত্যুর পর তাদের আত্মা ফিনিক্স পাখি হয়ে আকাশে উড়ে যাবে।
আবার কখনো ফিরে এসে নিজের দেহে বসবাস করা শুরু করবে। এ জন্যে তারা দেহকে সংরক্ষনের ব্যবস্থা সহ সমাধিস্থ করত। এসকল রাজাদের মৃত দেহের সাথে জামা-কাপড়। স্বর্ণালঙ্কার সহ জীবিত দাসদের মেরে সমাহিত করা হত। যাতে পরজীবনে ফারাওদের কষ্ট করতে না হয়।
পৃথিবী বিখ্যাত আরেকটি সমাধি ক্ষেত্রে নাম আমরা সকলেই জানি। আগ্রার তাজমহল। প্রিয় মানুষটিকে চির স্মরণীয় করে রাখতে রাষ্ট্রের কোষাগার শুন্য করে সম্রাট শাহজাহান পৃথিবীকে এ অনন্ত বিস্ময় উপহার দিয়ে গিয়েছেন।
এভাবে আলোচনা করলে দেখা যাবে মৃত দেহ সৎকার করা কোন ধর্মের নিজস্ব আবিস্কার নয়। প্রাণী জগত থেকে নিজেদেরকে আলাদা ভাবার কারণে নানান ধর্মে নানা রকম্ভাবে সৎকারের প্রথা মানুষ আবিস্কার করেছে।
কারো সমাধির সাথে মিশে আছে হাজারো মানুষের রক্ত শ্রম, যারা দাস হিসেবে কাজ করেছে। কারো সাথে মিশে আছে প্রজার হাড় নিংরানো করের অর্থ সম্পদ। আবার কারো সমাধির সাথে মিশে আছে স্রেফ কাছের মানুষদের ভালবাসা।
সৎকার শব্দটির সাথে প্রচলিত ধর্মগুলো ধর্মীয় ভাব যোগ করতে চাইলেও এর প্রকৃত অর্থ বা ভাব হল মৃত দেহের প্রতি সম্মান জানানো। ধর্মগুলো মানব দেহকে অতী পবিত্র মনে করে।
তাই মৃত দেহ তো বটেই, জীবিত দেহের কোন অঙ্গানু অপরের জীবন বাঁচাতে দান করা যাবে কিনা, এ নিয়ে মুসলিমদের মাঝে রয়েছে বিশাল বিতর্ক। কিছুদিন আগেও রক্ত, চোখ, কিডনি এসব দান করার বিপক্ষে ছিল মুসলিমরা। তবে ধর্মের এসব ধারণা মানুষ মাথা রাখেনি। নিজের প্রয়োজনেই এবং মানবতার প্রয়োজনে আজ আমরা একে অপরকে নানা অংগ দান করে চলেছি। নাস্তিকেরাই সর্বপ্রথম মানবতার কল্যানে নিজের পুরো দেহ দান করে গিয়েছে।
তাদের এ দানকে যদি সম্মান না বলা হয়। তবে যারা ডাক্তারী পড়ে, তারা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যে মানুষটির দেহ পায়। তাকে অসম্মান করে প্রকারান্তরে নিজের শিক্ষার উপকরণকে অসম্মান করবে। যারা সেই দেহ থেকে প্রয়োজনীয় অংগ পায়। তারা সেই মানুষটির প্রতি অকৃতজ্ঞ হবে।
এসব নিশ্চই মানবতার শিক্ষা না। নাস্তিকেরা কখনো বলেনি যে তাদের দেহ উপকারী কাজে লাগার পর বাকীটা জন্তু জানোয়ারকে খেতে দেবার জন্যে ফেলে রাখতে হবে। দেহকে উকপকারী কাজে লাগানোর পর সামাজিক রীতিতেই তাকে সমাহিত করতে হবে এ সাধারণ জ্ঞান সবার থাকা উচিত। মৃত দেহ প্রকৃতির খাদ্যেই পরিণত হয়। সেটা ব্যাক্টেরিয়াই হোক আর বড় শকুনই হোক।
আর তাই নাস্তিকেরা প্রয়োজনে পশুপাখির খাবার হতেও লজ্জাবোধ করবে না।
তাহলে দেহ সৎকারের এ বিষয়টি নাস্তিকদের কাছে এত গুরুত্বপুর্ণ কেন? এর উত্তর সেই ইসলামেই রয়েছে। মুসলিমদের ধর্মানুসারে মানব দেহ খুবই পবিত্র বিষয়। উপমহাদেশ সহ পৃথিবীর বেশীরভাগ আলেমদের মতামত হল
Allah Almighty made humans the best of creations and created everything for their benefit. Allah Most High Says: “It is He, who has created for you all things that are on earth.” (Surah al-Baqarah, 2.29).
Thus, it is permissible for a human to take benefit from every creation of Allah which includes animals (under certain conditions), plants and inanimate things. As such, it would be unreasonable to place humans in the same category of the above things by giving permission to use parts and derive benefit out of their body that necessitates cutting, chopping and amputating parts of the body. This is certainly unreasonable and unlawful on a human body.
দেহ সম্পর্কে ওলামাদের ধারনা হল The cutting of and tampering with a human body amounts to mutilation and deformation of a divinely created body (muthla), which has clearly been prohibited in Shariah.
যার ফলাফল মৃত দেহকে মানব কল্যানে কাজে লাগানোর ব্যাপারে মুসলিমদের অণীহা বা অহেতুক ভীতি। মানব দেহ সম্পর্কে পবিত্র ধারণার কারণে তারা নিজেদের দেহকে এরকম কোন মহৎ কাজে দিয়ে যেতে পারেনা।
অঙ্গানু দান করা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলিমদের দেহ দান শরিয়ত অনুসারেই নিষিদ্ধ। এ কাজে অমুসলিমদের দেহ ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তারা মত দিয়েছেন।
With regard to the need to dissect bodies for scientific research, this need may be met by using the bodies of those who are not protected in sharee‘ah. [The one who is not protected in sharee‘ah is the kaafir who is in a state of war with the Muslims or the one who has apostatised from Islam.]
তাহলে দেখাই যাচ্ছে নাস্তিকেরাই মানব কল্যানে ধর্মের উর্দ্ধে চিন্তা করতে পারে। তাই তারাই মাটির সাথে মিশে না গিয়ে মানুষের জ্ঞানের সাথে মিশে যেতে চেয়েছে। তারাই চেয়েছে অন্য একটি জীবনের সাথে নতুন করে বাঁচতে।
তার কিডনী, চোখ সহ প্রয়োজনীয় অংগ এটি মানুষের জীবনকে নতুন ভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ যদি এনে দেয়, এর থেকে বড় সার্থকতা আর নেই, এর চেয়ে বড় মানবতা আর কি হতে পারে? আস্তিকদের কাছ থেকে তাই নাস্তিকদের মানবতা শিখতে হয় না। মানবতা শিখতে হয় না ধর্মের কাছেও।
[বিঃ দ্রঃ এ লিখাটি সকল আস্তিক ভাইদের উদ্দেশ্য করে লিখা নয়। যারা ঐরকম মানসিকতা রাখে, তাদের কে নতুন ভাবে ভাবার সুযোগ করে দিতেই এ প্রয়াস। সবাইকে সেভেন পাউন্ড মুভিটি দেখার অনুরোধ রইল।
]
তথ্যসুত্রঃ
১. নিয়ান্ডার্থাল
২. Is organ donation permissible?
৩. Is it permissible for a Muslim to donate his body for medical research after he dies?
৪. Dissecting dead bodies in order to learn medicine
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।