আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব দেখি কানার হাটবাজার

কবি হওয়ার ভান করি, উদাস হই; ভালোবাসার মাহাত্ব খূঁজি

রাশেদুল হাসান ডিজিটাল সরকারের প্রাচীরে আবারও গ্রেনেড ছুড়লো আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। এ গ্রেনেড সরকারের পাঁচ বছর পথের দেয়ালে কতটুকু চিড় ধরাতে পারল এ অঙ্ক কষার সময় এখন নয়। তবে এ কথা সত্য যে জলিলের এ গ্রেনেড সরকারের অগণিত নীল নকশার প্রারম্ভমাত্র। তিনি আরো তথ্য প্রকাশের হুমকি দিয়েছেন এবং অদৃশ্য হুমকিতে তা অস্বিকারও করেছেন। তিনি আরো তথ্য ফাঁস করেন কিংবা অন্যকোন সমঝোতা চুক্তিতে ফাঁসকৃত তথ্য অস্বিকার করেন এ কথা দিবালোকের মত সত্য যে, বর্তমান সরকার স্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতায় আসেননি।

আর কোন কোন অস্বাভাবিক পন্থায় এ সরকার ক্ষমতার সূরা পান করছেন তা তাদের কর্মকাণ্ডেই প্রকাশ পায়। সরকারের বর্তমান অবস্থা আর ডাকাত দলের মধ্যে তেমন প্রার্থক্য খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তারা যেমন দল বেঁধে ডাকাতি করে আর ডাকাতির মাল ভাগ করতে গিয়ে একে অপরকে খুন করতেও চিন্তা করে না। ঠিক তেমনি মহাজোট সরকার ডাকাতি করে নির্বাচনের ফল ঘরে তুললেও ভাগের বেলায় লঙ্কাকান্ড। এরশাদের ভাগে কম পড়ায় ছোট বোনের প্রতি অসন্তুষ্ট, সহ্য করতে না পারায় সামান্য তথ্য ফাঁসও করে দিয়েছিলেন কিন্তু শেষে নিজের ফাঁস এড়াতে ঢোক গিলে ফেললেন।

সেনাবাহীনির নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই এমন সুষ্ঠু ডাকাতির কথা স্বীকার করলেন। আর আবদুল জলিলতো হাটে হাঁড়িটা ভেঙ্গেই দিলেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ডিজিএফআই’র সাথে নির্বাচনের আগেই সমঝোতা হয়েছিল। এ সমঝোতার শর্ত মোতাবেক শেখ হাসিনাকে বিদেশ যেতে হয়েছিল। এমন অসংখ্য অপ্রিয় সত্য কথা লন্ডনের বাংলা টিভি ও বার্তা সংস্থা বিডি নিউজকে বলেছেন।

তার এমন বোমা ফাটানো মন্তব্যে আওয়ামীলীগের দুর্গের ফাটল ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবী উঠেছে ভারসাম্যহীন বলে সে দাবি বাস্তবায়নের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। তার উপর হামলা হয়েছে, সত্যবলার অপরাধে রাজাকার বনতেও হলো স্বাধীনতার স্বপক্ষের এ বটবৃক্ষকে। হায় কপাল স্বার্থের কারণে স্বাধীনতার জান্ডাবাহীর গলে আজ রাজাকারের বিষমাল্য! আবদুল জলিলের এ বক্তব্যে আর যাই হোক আর না হোক কতগুলো মৌলিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। শুধুই কি ভিজিএফআই এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে সমঝোতাই আ’লীগের ক্ষমতার সৌধ নির্মাণ করেছিল? লিখিত কিংবা অলিখিত আর কত সমঝোতার কেচ্ছা আমাদের শুনতে হবে ? তবে জলিল সাহেবের ফাঁসকৃত তথ্য ও আরো তথ্য ফাঁসের হুমকি, বাংলা টিভির অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার প্রচারে কঠোর চাপ প্রয়োগ শঙ্কার জট লেগে যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম, ট্রানজিট ও টিপাইমুখ ইস্যু সরকারের অন্য কোন সমঝোতার অংশ নয়তো! পিলখানায় হত্যাকান্ড নিয়েও সন্দেহ সংশয় অবান্তর মনে হবে না। সাক্ষাৎকারের বাকী অংশে গণতন্ত্র ও সার্বভৌম বিরোধী কোন সমঝোতা কোটার মুখ খুলেতে চাইছিলেন আবদুল জলিল। বিতর্কিত শিক্ষানীতি প্রণয়নসহ অন্যান্য কর্মকান্ডে, দেশের সার্বভৌমত্ব কিংবা মৌলিক সত্ত্বার প্রশ্নে সরকারের নতজানু নীতি সে রকমই ইঙ্গিত বহন করে। দেশের, দেশের জনগণের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারের আর্শিবাদ পুষ্ট ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিরানভূমিতে পরিণত হবার আশঙ্কা থাকলেও টিপাইমুখড্যাম নির্মাণে মৌনসম্মতির ফলে ড্যাম নির্মাণের কাজ তরতর করে এগিয়ে চলছে। দেশের সার্বভৌমত্ত্ব মারাত্মক অবস্থায় উপনীত হবে জেনেও সন্তু লারমাদের কাছে অলিখিত চুক্তি সম্পাদন।

স¤প্রতি এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংগঠনের দ্বারে দ্বারে সন্তু লারমাদের হাপিত্তেস, এ সকল চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ কোন ব্যাপারইনা ভাব দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। । সত্য কথক জলিলের এ বক্তব্য পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ধানের শীষে এর হাওয়া লাগেনি বলাচলে। তার এ বক্তব্যে আওয়ামী দুর্গে কম্পন সৃষ্টি হলেও দিব্যি ঘুমিয়ে সময় কাটাচ্ছে বিএনপি। রাজনৈতিক অঙ্গনে দম বন্ধকর অবস্থায় বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের স্বাগতোক্তি, আবদুল জলিল এতদিনে সত্য কথাটি স্বীকার করেছেন।

যে বক্তব্যের কারণে আবদুল জলিলের উপর হামলা, তার কুশপুত্তলিকাদাহ, বিক্ষোভ মিছিল ও বহিস্কারের দাবী তুললিছ নিজদলের নেতাকর্মীরা। সয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সেখানে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির এমন আচরণ দেশ ও জনগণের কল্যাণ, সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে তেমন ভূমিকা রাখছে বলে মনে হয় না। জনস্বার্থ বিদ্বেষী সরকারের এমন কর্মকান্ডে প্রতিরোধ তো দূরের কথা প্রতিবাদ করার সাহসও সঞ্চয় করতে ব্যর্থ বিএনপি। অন্যদিকে এ ব্যর্থতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বার্থসিদ্ধির অপূর্ব সুযোগ হাতছাড়া করছে না আওয়ামী সরকার। রাজনৈতিক বিশে ষকরা মনে করেন এ ধরনের বক্তব্য সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে।

কিন্তু এ প্রশ্নে কার কিইবা আসে যায়। যে যার মতো আখের গোচাতেই ব্যস্ত। আবদুল জলিল সরকারের একটি অংশ হয়ে যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন যা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুখ থেকেও বের হয়নি বলে তার দলের নেতাকর্মীরাও শঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা শ্কংায় আছেন এতে করে বিরোধীদলকে আরো ইস্যু সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে নাতো! আর বিরোধীদল নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছেন স্বপ্নে ইস্যুর সাক্ষাৎ লাভে! ঈদ উত্তর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থিরতার মধ্যে কেটেছে এবং এ অস্থিরতা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আবদুল জলিলের বহিস্কারের দাবী, বিএনপি’র সিনিয়র নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বক্তব্য ও তার বহিস্কারের দাবি, চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী বহিস্কারদাবী এবং আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভাবনা চিন্তা রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে মন্তব্য করেন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনে করেন, সংসদ ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে না পারলে এক এগারোর মতো একটি সরকার চলে আসতে পারে। রাজনৈতিক শঙ্কা থেকে উদগিরিত এ সব কথার রেশ কাটতে না কাটতেই আবদুল জলিলের এরূপ মন্তব্য আশরাফুলদের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় চুন কালি মেখে দিয়েছিল। আশরাফুলরা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে তাদের মধ্যে যে কেউ হয়তো অপ্রিয় সত্য কথাটি বলে ফেলবে আর তাই আগ থেকে এসব কথা বলে স্বাভাবিক অবস্থা জোর রাখার চেষ্টায় ছিলেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও পরে কমিটি গঠন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা বিভক্ত।

বিশেষ করে দল থেকে বাদ পড়া নেতারা দলের খোঁজ খবর নেয়া পর্যন্তও বন্ধ করে দিয়েছেন। জলিলের মন্তব্যে ৯০ শতাংশ নেতাই সংস্কার পন্থী এবং তারাই আওয়ামীলীগের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশ সদস্য ডিজিএফআই’র এজেন্ট এসব রুঢ় সত্য বলায় আবদুল জলিলের ভাগ্য নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়েছে। তার ভাগ্যে যাই ঘটুক না কেন সত্য কথাটি সব সময় বলে যাবার শর্তে অনড় থাকার কথা থাকলেও কথা না রাখা দলের সিনিয়র নেতা তার সিনিয়রিটি ঠিকই বজায় রেখেছেন! অন্যদিকে নিজদলের সমালোচনা করে বক্তব্য প্রদান বিএনপির প্রবীন নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বহিস্কারের দাবী উঠেছে। বিএনপির রাজনীতি গুলশান অফিসে আবদ্ধ থাকলে দলের ভবিষ্যৎ নেই এবং ভাইয়ার নাম ভাঙিয়ে জেলা কমিটি পূর্নগঠনের নামে বিএনপির এক দল নেতা বাণিজ্য করছেন মন্তব্যে তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। চট্টগ্রামের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রুদ্ধদ্বার বৈঠকও রাজনীতিক অঙ্গনে তুষের আগুনে জ্বলছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। বিশৃঙ্খল ডাকাত দলের পাকড়াও হওয়া, জেল জরিমানার কথা বাদ দিতেই হবে। গৃহস্তের মাথা ব্যাথা না থাকলে পুলিশের কিছুই করার থাকেনা। কিন্তু কিসের বলে শেখ হাসিনা এ নির্বাচনের ঘোর রহস্যকে অস্বিকার করবেন। এরশাদ, জলিলের মুখ থেকে অপ্রক্যাশিত তথ্যে কি আরো স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী, জনবিদ্বেষী প্রকল্পের নীল নকশায় আভাস পাওয়া যায় না ? আরো তথ্য ফাঁসের হুমকিতে আওয়ামী রাজপ্রাসাদ ফেঁপে ওঠায় এবং কম্পনরোধে জলিলের প্রতিষ্ঠানে চাঁদার হুমকিতে অনুমেয় সামনে এ দেশের জনগণকে কঠিন বাস্তবতা মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।

কানার হাট বাজারে নিজের অধিকার নিজেকেই আদায় করে নিতে হবে। কারো উপর ভরসা নিশ্চিত পরাজয় ডেকে আনতে পারে আমাদের এ কথা প্রতিটি মুহুত্ত্বে স্মরণ রাখতে হবে। রাশেদুল হাসান কবি ও প্রাবন্ধিক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.