জন্মেজয়ের অশ্বমেধ যজ্ঞঃ
অশ্বমেধ যজ্ঞ
রাজা জন্মেজয় বলেন –অকারণে এত কিছু করলাম। কোটি কোটি অহিংস সাপকে মারলাম। এ পাপের নরক গমন থেকে দেখছি আর নিস্তার নেই!
মুনি তুমিই বল এ পাপ থেকে কি ভাবে মুক্তি পাব। পূর্বে আমার পূর্বপুরুষরা অশ্বমেধ যজ্ঞ করে সব পাপ মুক্ত হন। আমিও তাদের মত সেই যজ্ঞ করবো।
শুনে ব্যাসমুনি তাকে বারণ করেন। রাজা কারণ জানতে চাইলেন।
রাজা বলেন –পিতা পিতামহ যা করেছেন আমিও তা করতে পারি, তুমি আমায় অক্ষম মনে করো না!
মুনি বলেন –তুমি সব কর, কিন্তু অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে যেও না। কলিযুগে এ যজ্ঞ করা উচিত নয়। মাংসশ্রাদ্ধ, সন্যাস, গোমেধ, অশ্বমেধ কলিযুগে পুত্র থেকে দেবর সকলের নিষেধ।
কিন্তু রাজা বললেন –আমি অবশ্যই এই যজ্ঞ করবো। পৃথিবীর কেউ আমায় আটকাতে পারবে না।
মুনি বলেন –তুমি করতে পার কিন্তু বেদে যা বারণ তা আমি অনুমতি দিতে পারি না। এই বলে মুনি সেখান থেকে চলে গেলেন।
রাজা যজ্ঞের আয়োজন শুরু করলেন।
সেনাপতিরা যজ্ঞের অশ্ব নিয়োগ
করল। ঘোড়াটিকে বহু দেশদেশান্তরে ঘোরান হল। সারা বছর পৃথিবী ভ্রমণ করে সব রাজাদের জয় করা হল। সেই সঙ্গে পৃথিবীর সকল ব্রাহ্মণ এবং মুনিদের যজ্ঞে আমন্ত্রণও করা হল।
রাণী বপুষ্টমা ও রাজা জন্মেজয় নিষ্ঠার সঙ্গে সারা বছর অসিপত্র-ব্রত পালন করলেন।
চৈত্র পূর্ণিমায় ব্রত সাঙ্গ হলে অশ্বকে কেটে রাজা তাকে যজ্ঞের আগুনে ফেললেন। ব্রাহ্মণরা বেদমন্ত্র উচ্চারণ করে আকাশ বাতাস ভরালেন।
স্বর্গ থেকে দেবতারা এই যজ্ঞ দেখে অবাক হলেন।
দেবরাজ ইন্দ্র কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞ পূর্ণ হচ্ছে দেখে বেদনিন্দার ভয়ে কম্পিত হলেন।
যজ্ঞ পন্ড করারা উদ্দেশ্যে ইন্দ্র মায়াবলে অশ্বের কাটামুন্ডে প্রবেশ করে সভার তুরঙ্গের মৃত মুন্ডের নৃত্য শুরু করলেন।
তা দেখে সকলে বিস্মিত হলেন। সভায় রাজা, রাণী এই মুন্ডনৃত্য দেখে লজ্জিত হলেন। সকলে মাথা নত করলেন।
সভায় এক বালক ব্রাহ্মণপুত্র মুন্ড নৃত্য দেখে হেসে উঠল। সেই নিষ্পাপ বালক অদ্ভূত কান্ড দেখে আনন্দে তালি মেরে মেরে খল খল রবে হাসতে লাগল।
তা দেখে রাজা প্রচন্ড রেগে উঠলেন। তার সামনে একটি খড়গ পড়েছিল। তিনি ক্রোধে তা তুলে বালকের উপরে আঘাত করলেন। বালক দু’টুকরো হয়ে গেল।
চারদিকে হাহাকার পড়ে গেল।
যজ্ঞ পন্ড হল। ব্রাহ্মণরা যজ্ঞ স্থান থেকে পালাতে শুরু করলেন।
ব্রাহ্মণ হত্যাকারী মহাপাপী রাজাকে দর্শন করাও পাপ, তার যতদুর পর্যন্ত রাজত্ব ততদুর ব্রাহ্মণরা আর বসবাস করবেন না।
অশ্বমেধ যজ্ঞের নাম করে শেষ পর্যন্ত রাজা জন্মেজয় ব্রাহ্মণের মাংস খেতে চান – এই রব চারদিকে উঠল। ব্রাহ্মণরা যজ্ঞের সকল উপাচার ফেলে যজ্ঞস্থান ত্যাগ করলেন।
ব্রাহ্মণ হত্যাকারীর মুখ দেখা অনুচিত তাই সব রাজারাও চলে গেলেন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সকলে চলে গেলেন।
সভার মাঝে রাজা একা নত শিরে রয়ে গেলেন।
...........................
ব্যাসের পুনরাগমন ও জন্মেজয়ের প্রতি ভারত শ্রবণের উপদেশঃ
শ্রী বেদব্যাস মুনি
শ্রী বেদব্যাস মুনি হলেন সর্বজ্ঞ এবং অন্তর্যামী। তার গুণ বর্নণাতীত।
সত্যবতীর পুত্র ব্যাসমুনির অমৃত মিশ্রিত বাণীতে ত্রিভূবন পূর্ণ। সকল পাপী তার সাহায্যেই ভব সংসারে রক্ষা পায়। অগ্নিশিখার মত সোনার বর্ণের জটা, পরিধানে কৃষ্ণসার হরিণের চামড়া। তিনি অম্বরজয়ী, ভারত তার কক্ষে অবস্থিত। তাকে ঘিরে আছেন লক্ষ লক্ষ মুনি।
এই সহৃদয় অন্তরযামী জন্মেজয়ের কষ্টের সমব্যথী হয়ে তার কাছে এলেন।
ব্যাসমুনিকে দেখে রাজা আরো লজ্জিত হলেন।
মুনি তাকে অভিমান ত্যাগ করতে বললেন। তার কথা না শুনেই এই পরিনতি হল।
রাজা ব্যাসকে কাছে পেয়ে তার পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইলেন।
তার সাবধান বানী না শোনার জন্য ক্ষমা চাইলেন এবং এই নরক-সিন্ধু থেকে তাকে উদ্ধারের পথ দেখাতে বললেন।
তিনি দুঃখ করে আরো জানালেন, সকলে তাকে ত্যাগ করেছে। ব্রাহ্মণ, ভাই, মন্ত্রী, সকলে।
কেবল ব্যাসদেবই স্নেহ করে তার কাছে এলেন। আজ তিনিই রাজাকে পথ দেখান।
মুনি বলেন –চিন্তা করে কি হবে, রাজন। সব পাপ দুর হবে যদি এক লক্ষ শ্লোকে রচিত মহাভারত শুদ্ধ মনে একবার শ্রবণ কর।
কৃষ্ণবর্ণের চন্দ্রাতপ বেঁধে তার তলায় মহাভারতের অমৃতকথা শ্রবণ কর। একদিন তোমার কৃষ্ণবর্ণ গিয়ে শুক্লপক্ষ অবশ্যই উদয় হবে।
তোমারই পিতা-পিতামহদের অপূর্ব কথা এখানে গ্রথিত, এসব শুনলেই পাপ খন্ডাবে।
ব্যাস মুনির কথায় রাজা স্বস্তি পেলেন। তিনি মুনিকে প্রণাম করে অনুরোধ করলেন তাকে মহাভারত শোনানোর জন্য। তিনি ও তার পূর্ব পুরুষদের কথা জানতে উৎসুক। তারা কি কারণে যুদ্ধ করে নিহত হলেন।
জন্মেজয় বললেন –আপনি থাকাতেও তারা কেন বিবাদ করে ধ্বংস হলেন!
মুনি বলেন –মহাভারতের কথার বিস্তার বিশাল।
তার এত অবসর নেই। তবে মুনি শ্রেষ্ঠ তার শিষ্য শ্রী বৈশম্পায়নের কাছে রাজা মহাভারতের কাহিনী শ্রবণ করতে পারেন।
রাজা তাতে সম্মত হলে ব্যাসদেব শিষ্যকে মহাভারত কথনের অনুমতি দিয়ে চলে গেলেন।
রাজা কৃষ্ণবর্ণের চন্দ্রাতপ নির্মাণ করে মন্ত্রীদের এবং চারবর্ণের শ্রেষ্ঠ নাগরিকদের নিয়ে পূজার্চনা করে ভক্তিভরে সেই চন্দ্রাতপের নিচে মহাভারত শ্রবণে উপনিত হলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৯
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।