পান্ডুরাজার মৃত্যুঃ
সুখে পুত্রদের নিয়ে পান্ডুরাজা বসবাস করছিলেন।
এসময় ঋতুরাজ বসন্ত উপস্থিত হলেন। বন বসন্তে শোভিত হল। নানা বৃক্ষ পুষ্পে শোভিত হল-পলাশ, চাঁপা, আম, অশোক, কেশব, পারিভদ্র, কেতকী, করবী প্রভৃতি। আনন্দিত মনে পান্ডু গহন নিকুঞ্জবনে ভ্রমণ করেন।
কুন্তী পাঁচ পুত্র নিয়ে নিজ স্থানে থাকেন।
রাজা মাদ্রীকে নিয়ে অরণ্যে প্রবেশ করলেন।
মাদ্রী যে রাজার সাথে আছেন সে কথা কুন্তী জানতেন না।
বসন্তকালে যুবতী স্ত্রীকে নিয়ে রাজা বিহারে এলেন - মদন মেতে উঠল। মদনের শরে রাজা অবশ হলেন।
ঘন ঘন মাদ্রীর রূপ সৌন্দর্য দর্শণ করতে লাগলেন।
বিকশিত পদ্মের মত মাদ্রীর সুচারু দেহ সৌষ্টব। পদ্মের মত টানা টানা সুন্দর চক্ষু যেন কর্ণকে স্পর্শ করে। ডালিম ফলের মত তার দুই স্তন। বিপুল নিতম্বের ভারে গমন তার মন্থর।
সব সময় মধুর কথনে যেন সুধা বর্ষণ করেন। তাকে দেখে পান্ডুর রতিক্ষুধা জাগল। কামে অবশ রাজা মুনির কথা ভুলে গেলেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি রাজা হারালেন। মাদ্রীর সাথে শৃঙ্গার করতে চাইলেন।
মাদ্রী তাকে বাধা দিতে চাইলেন, অতি উচ্চ স্বরে হাহাকার করতে লাগলেন। রাজার আচরণের জন্য মাদ্রী তাকে ভৎসনা করতে থাকেন। মৃগরূপী ঋষির অভিশাপের কথা স্মরণ করালেন।
কিন্তু কামরসে আচ্ছন্ন পান্ডু মাদ্রীর কোন কথাই শুনতে চাইলেন না।
কালের কথা কেউই খন্ডন করতে পারে না, পরম পন্ডিতের বুদ্ধিও কাল সংহার করেন।
পান্ডুও সকল কথা বিস্মৃত হলেন। পত্নীর নিষেধ অগ্রাহ্য করে সংযম হারিয়ে তাঁকে সবলে গ্রহণ করলেন।
ঋষিশাপে মৃত্যু সেথায় উপস্থিত হলেন। পান্ডুরাজাকে শরীর ত্যাগ করতে দেখে মাদ্রী সুন্দরী হাহাকার করে উঠলেন।
এদিকে মাদ্রীসহ পান্ডুকে না দেখতে পেয়ে কুন্তী মনে মনে আতঙ্কিত হলেন।
অনেক বেলা হয়ে গেল তবু তারা ফিরছেন না দেখে কুন্তী পুত্রদের নিয়ে তাদের খুঁজতে বেরলেন।
অনেক দুর যেতে হঠাৎ মাদ্রীর কান্না ও হাহাকার শুনতে পেলেন। দ্রুত সেথায় গিয়ে দেখেন মাদ্রী কাঁদছেন এবং তার কোলে পান্ডু পরে আছেন। হঠাৎ যেন মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ল। কুন্তী জ্ঞান হারালেন।
জ্ঞান ফিরলে তিনি কেঁদে মাদ্রীকে বললেন- কি কাজ করলে মাদ্রী, নিজ দোষে স্বামী হত্যা করলে। চিরকাল এ কারণে তিনি কষ্ট পাবে।
মাদ্রী কেন একা রাজার সাথে এলেন, কেন তাকে নিবৃত্ত করলেন না, কেন পুত্রদের আনলেন না-তা হলে রাজার মৃত্যু হত না। মদনে মেতে মাদ্রী স্বামীকে হারালেন। মৃগঋষির শাপ ভুলে একা স্বামীর সাথে বনে এসেছেন।
কুন্তী রাজাকে সর্বদা সাবধানে রক্ষা করতেন। আজ বিজনস্থানে মাদ্রী রাজাকে লোভিত করলেন। মাদ্রী নিজের সাথে কুন্তীরও পরম সর্বনাশ করলেন।
মাদ্রী বলেন- দেবী আমি বার বার তাকে বারণ করেছি। তুমি মিথ্যাই আমার নিন্দা করছ।
দৈবের লিখন কারো খন্ডাবার সাধ্য নেই, তাই রাজা আমার কথা শুনলেন না এবং মৃত্যু বরণ করলেন।
কুন্তী বলেন ভাগ্যকে খন্ডন করা যায় না যখন তখন তিনি যা বলেন মাদ্রী তাই শুনুক। মাদ্রী তার থেকে ভাগ্যবতী, কারণ তিনি রাজাকে হৃষ্ট দেখেছেন। তিনি জ্যেষ্ঠা ধর্মপত্নী, সে কারণে তিনি সহমৃতা হবেন এবং মাদ্রী পাঁচপুত্রকে পালন করবেন।
মাদ্রী বলেন তিনি রাজাকে না দেখতে পেলে বাঁচবেন না।
কুন্তীর সাথে দেখা করার জন্যই তিনি প্রাণত্যাগ করেন নি। তাঁর যৌবনে রাজা এখনও তৃপ্ত হন নি, তার সাথে রমণকালে রাজার মৃত্যু হল, তাই রাজাকে তিনি ত্যাগ করতে পারবেন না। এছাড়া তিনিও রাজার থেকে তৃপ্ত হননি, অতএব তিনিই পতিকে অনুসরণ করবেন।
তার একমাত্র নিবেদন কুন্তী যেন তার দুই সন্তানকেও নিজের সন্তানের মত পালন করেন, কোন ভেদ না রাখেন। পিতা-মাতা বিনা সন্তান অনাথ।
কুন্তীই আজ থেকে তাদের পিতা-মাতা-বন্ধু। এই বলে মাদ্রী কুন্তীর কাছে বিদায়ের আজ্ঞা নিয়ে রাজার শবকে নিবিড় ভাবে আলিঙ্গন করে প্রাণত্যাগ করলেন।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৮
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।