জরৎকারুর বিবরণ:
জটাচার্ব্ব বংশে জরৎকারু মুনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পরম যোগী ছিলেন। উলঙ্গ, উন্মত্ত অবস্থায় তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতেন।
একদিন এক বনে তিনি অদ্ভূত দৃশ্য দেখলেন। বনে এক বিরাট গর্ত।
গর্তের উপর একটি প্রাচীন বৃক্ষের মূল ধরে অনেকগুলি মানুষ ঝুলছে।
একটি ইদুঁর আবার সেই মূলটি কাটছে।
জরৎকারু সেই মানুষগুলিকে এরূপ ঝুলে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। বললেন ইদুঁরটা মূল কেটে ফেললে তারা ঐ বিরাট গর্তে পরে মরবে তবু কেন এই ঝুলে থাকা।
তখন তারা বলল – আমরা জটাচার্ব্ব বংশে জন্মে ছিলাম।
এখন নির্বংশ হয়ে পড়ছি বলে এই অবস্থা। শেষ বংশধর জরৎকারু নামে এক মূর্খ সেই এই দশার জন্য দায়ী।
সবশুনে জরৎকারু চমকে উঠলেন। তিনি নিজ পরিচয় দিয়ে তাঁদের আদেশ প্রার্থনা করলেন।
পিতৃগণ তাকে বিবাহ করে বংশরক্ষা করতে বললেন।
জরৎকারু বললেন তিনি যত্ন সহকারে বিবাহ করবেন না প্রতিজ্ঞা করেছেন। কেউ যদি তার নামে কন্যা যেচে দেন তবে তিনি সেই কন্যাকে বিবাহ করবেন।
এত শুনে পিতৃপুরুষরা অন্তর্ধান হলেন।
দৈববানীর মাধ্যমে জরৎকারু জানতে পারলেন তিনি বর্তমান বলেই ঐ শিকড়টি এখনও ছেড়েনি। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপুরুষরা বংশলোপের ফলে ঐ বিরাট গহ্বরে পতিত হবেন।
যে ইদুঁরটি মূল কাটছিল তিনি ছদ্মবেশী ধর্মদেব।
সবশুনে জরৎকারু মহাবনে প্রবেশ করলেন এবং ‘কন্যা কার আছে দেহ’ বলে তিনবার ডাক দিলেন।
নাগরাজ বাসুকি
ঐ বনে বাসুকির এক অনুচর ছিল। সে বাসুকিকে গিয়ে জরৎকারুর কথা বলল। বাসুকি সব শুনে খুশি হলেন।
তার বোনকে নিয়ে ঐ বনে জরৎকারুর কাছে গিয়ে তার বোনকে বিবাহ করতে অনুরোধ করলেন।
জরৎকারু বললেন যদি তার নামে কন্যার নাম হয় তবেই তিনি কন্যাকে বিবাহ করবেন।
বাসুকি বললেন তার বোনের নাম জরৎকারী। জরৎকারুর জন্যই তার জন্ম। এতদিন তিনি বোনকে বহু যত্নে বড় করেছেন মুনির জন্যেই।
জরৎকারু বিবাহে সম্মত হলেন। সকল নাগ এই বিবাহের সংবাদ শুনে সুখী হল।
..................
নাগেদের উৎপত্তি এবং অরুণের জন্ম:
এই পর্যন্ত শুনে মুনিরা সৌতিকে জিজ্ঞাসা করলেন বোনকে জরৎকারুর কাছে নাগরা দিল কি প্রয়োজনে। জরৎকারীর জন্ম কেন জরৎকারুর জন্যই!
সৌতি তখন সবিস্তারে এর কারণ জানালেন।
দক্ষের কন্যা কদ্রু ও বিনতা তাদের স্বামী কশ্যপের বহু সেবা করেন।
খুশি হয়ে কশ্যপ তাদের বর দিতে চাইলেন। কদ্রু সহস্র নাগকে তার পুত্র হিসাবে চাইলেন। বিনতা কেবল দুটি পুত্র প্রার্থনা করলেন।
মুনির বরে দু’জনেই গর্ভবতী হলেন। তারা বনে চলে গেলেন।
সেখানেই দু’জনে প্রসব করলেন।
কদ্রু সহস্র ডিম ও বিনতা দুটি ডিম প্রসব করলেন। ডিমগুলি তারা স্বর্ণপাত্রে রেখেছিলেন। পাঁচশ বছর বাদে সহস্র ডিম ফুটে কদ্রুর সহস্রনাগ-পুত্রের জন্ম হল।
তা দেখে বিনতার হিংসে হল।
সে একটি ডিম ফাটালে তার থেকে লাল বর্ণের এক অপূর্ব অর্ধাঙ্গবিহীন পুত্র বের হলেন।
ইনিই অরুণ।
ক্রোধে তিনি জননীকে শাপ দিলেন, অকালে বিনতা যেমন তাকে অঙ্গহীন ভাবে জন্ম দিয়ে কষ্ট দিলেন, তেমনি যে বোনকে হিংসা করে একাজ করা সেই বোনেরই দাসী তাকে হতে হবে।
আরো বললেন, অপর ডিমে মহাবীর্যবন্ত বীর আছেন। সহস্র বছর বাদে সে আপনিই ফুটবে।
সেই তার শাপমোচন করবে।
এসময় কদ্রু ও বিনতা একসঙ্গে বাস করছিলেন। দৈবের ঘটনায় একদিন তারা উচ্চৈঃশ্রবা নামে অপরূপ ঘোড়াটিকে দেখতে পেলেন। এই ঘোড়াটি সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠেছিল।
এত শুনে মুনিরা সৌতিকে সমুদ্র মন্থনের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
.......................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................
পাদটীকাঃ
সহস্রনাগ - সহস্রটি নাগ
..................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত- ১
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।