নকুল ও সহদেবের জন্মঃ
একদিন পান্ডুকে একান্তে দেখে মাদ্রী তার কাছে গিয়ে বললেন – কুরুবংশে সম্প্রতি তিনজন বধূ। ইতিমধ্যে দুজন পুত্রবতী হয়েছেন। শোনা যাচ্ছে গান্ধারীর একশত পুত্র হয়েছে। নিজ চক্ষে দেখছি কুন্তী তিনপুত্রের জননী। আমিই অভাগী তাই এই সুখ থেকে বঞ্চিত হলাম।
পান্ডু যদি কুন্তীকে বলেন, তিনি অনুগ্রহ করলে তিনিও মা হতে পারেন। সতীন কুন্তীকে তিনি নিজে ভয়ে বলতে পারেন না, কিন্তু স্বামীর বাক্য কুন্তী অন্যথা করতে পারবেন না।
মাদ্রীর কথা শুনে পান্ডু বলেন তারও এই কথাই মনে এসেছিল, কিন্তু মাদ্রী কি মনে করেন তাই বলতে পারেন নি। মাদ্রী তার ধর্মপত্নী, তিনি সম্মত থাকলে পান্ডু অবশ্যই কুন্তীকে জানাবেন।
পান্ডু কুন্তীর কাছে গিয়ে একান্তে বলেন-কুলের কল্যাণে ইন্দ্রত্ব পেয়েও ইন্দ্র নিত্য যজ্ঞ করেন।
যশের কারণে ও শাস্ত্রানুসারে বেদে-তপে শ্রেষ্ঠ হন ব্রাহ্মণ। তবুও তারা গুরুর সেবা করেন।
পান্ডু কুন্তীকে বোঝান কুন্তীই মাদ্রীকে উদ্ধার করতে পারেন। মাদ্রীর বংশ রক্ষা পেলে তারও পুত্রকামনা পূর্ণ হয়।
এত শুনে কুন্তী পান্ডুকে বলেন তার আজ্ঞায় কুন্তী মাদ্রীকে একবার মাত্র মন্ত্রদান করবেন।
মাদ্রীকে ডেকে কুন্তী তার মনের কথা জানান।
মাদ্রি চিন্তা করে দেখেন একবার মন্ত্র পেয়ে অধিক সন্তান তিনি কি ভাবে পেতে পারেন! অনেক ভেবে দেখেন দেবতাদের মধ্যে অশ্বিনীকুমাররা যমজ। তাই তিনি অশ্বিনীকুমার যুগলকে স্মরণ করলেন। মন্ত্রের প্রভাবে তারা মাদ্রীর কাছে এলেন। এভাবে মাদ্রী যমজ সন্তানের মা হলেন।
সন্তানদের জন্মের পর আকাশবানী হল- রূপেগুণে তারা শোভা বর্ধন করবেন।
এভাবে পান্ডুর পাঁচটি পুত্র হল। পর্বতবাসী ঋষিরা এসে তাদের নামকরণ করলেন। জ্যেষ্ঠ হওয়ায় নাম হল ‘যুধিষ্ঠির’।
ভয়ঙ্কর মূর্তির জন্য নাম হল বীর পুত্রের ‘ভীম’।
তৃতীয়জনের নাম রাখা হল ‘অর্জুন’।
মাদ্রীর পুত্রদের নাম হল যথাক্রমে ‘নকুল’ ও ‘সহদেব’।
এভাবে পাঁচপুত্র সিংহের মত বিক্রমের সাথে পর্বতে বাড়তে লাগলেন। শতশৃঙ্গ পর্বত তাদের উপস্থিতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। পান্ডু পঞ্চপুত্রদের দেখে আনন্দিত হন।
কুন্তি-মাদ্রীও খুশি হন। তারা তিনজন পঞ্চপুত্রদের ক্ষণের জন্যেও চোখের আড়াল করেননা।
এভাবে পাঁচপুত্রকে তারা যখন পালন করছেন, তখন একদিন পান্ডু কুন্তীকে বললেন –সন্তান সুখের তুল্য সুখ সংসারে আর নেই। সকল সুখ ম্রীয়মান হয় সন্তানসুখ বিনা। রাজ্যবন্ত, ধনবন্ত, বিদ্যাবন্ত জন সন্তান বিনা অকারণ হয়ে পরেন।
সন্তানসুখ ইহকালে সুখদায়ী, লোকের মাঝে গৌরবদায়ী এবং পরকালে নিস্তারক, পরমপাপীদেরও উদ্ধারক।
ধৃতরাষ্ট্র পরম ভাগ্যবান, শোনা যাচ্ছে তার শতপুত্র হয়েছে। সে কারণে পান্ডু কুন্তীকে অনুরোধ করছেন তিনি পুনরায় মাদ্রীকে আর একবার মন্ত্র দিন, আবার পান্ডু সন্তানসুখ পান।
শুনে কুন্তী জোড়হাতে বলেন, এরূপ আজ্ঞা রাজা যেন না করেন। কারণ, মাদ্রী পরম কপটী।
একবার মন্ত্র পেয়ে সে যমজ সন্তান কামনা করেছে।
মাদ্রীর কারণে কুন্তি ভয় পান। তিনি রাজাকে কৃতাঞ্জলি নিবেদন করেন- মাদ্রীর কারণে তাকে যেন আর কিছু অনুরোধ না করেন।
কুন্তীর কথা শুনে পান্ডু চুপ করে গেলেন এবং মনে মনে সন্তানবাঞ্ছা ত্যাগ করলেন।
পান্ডবের জন্মকথা অপূর্ব কথন, যারা শুনবে তারাই স্ববাঞ্ছিত ফল পাবে।
ব্যাসদেবের বাক্যে কোন সংশয় নেই, সে কথাই পাঁচালী আকারে কাশীরামদাস বলেছেন।
.......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৭
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।