একটা গাড়ী খুজছি , ব্যাক টু দ্য ফিউচারে যাওয়ার গাড়ীটা খুজছি / তথ্যের অংক , যুক্তির জ্যামিতি
" উত্তরায় ফ্ল্যাট আছে "
- এটা কোন নাটকের সংলাপ নয় ,
জীবন থেকে নেয়া ।
জীবন পাতার একটি বোল্ডেড এক্সার্প্ট ।
পত্রিকার বিয়ের বিজ্ঞাপন আর পাত্রী পক্ষের সাথে ম্যারেজ মিডিয়া (ঘটক)র কথোপকথনে প্রায়শই শোনা যায় এমনটা।
জীবনের রং রূপ এমনভাবে পাল্টে গেছে আর্থসামাজিক যাঁতাকলের পেষনে -বিয়ের বাজারে পাত্রের সচ্চরিত্রের চেয়ে বড় যোগ্যতা শহরে একটি স্থায়ী বাসস্থান।
দোষ দিয়েই বা আর লাভ কি ?
মানুষ তো আর "ভাড়াটিয়া" শ্রেনীসংজ্ঞার প্যারাসাইটিক ট্যাগ নিয়ে আটপৌরে যাযাবর জীবন চায়না।
চায় শংখচিলের ন্যায় স্বাধীনতা।
ক্যাসেট প্লেয়ারের ভলিউমটা নামিয়ে রাখতে হবে ,
দেয়ালে অতি প্রয়োজনেও একটি বোল্ট স্ক্রু করা যাবেনা ,
ফ্লোরে হাটতে হবে বিড়ালের মত মোলায়েম পায়ে
রাত ১১:৩০ এর পর গেট বন্ধ হয়ে যাবে ,
মাসের ৫ তারিখের ভেতর অবশ্যই ভাড়া দিতে হবে ,
বেশী বেশী মেহমান আসা চলবেনা ..... আরো কত কি !
আর ভাড়া ..............?
সেকথা কি আর বলা লাগে ?
অশিক্ষিত রিকশাওয়ালা , অর্ধশিক্ষিত সিএনজি ওয়ালা , রমজানের বাজারের মুদিদের মতই ভাড়া বাড়ানো নিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং এর দুর্বৃত্তপনা শিক্ষিত অনেক বাড়ীওয়ালাই এখন হরদম দেখাচ্ছেন।
অহরহ ঘটছে বাড়ীওয়ালা- ভাড়াটিয়া বচসার ঘটনা।
ভাড়াটিয়া জীবন যেন "কারার ঐ লৌহ কপাট"।
মাঝে মাঝে ভেঙে লোপাট করতে ইচ্ছা করে সবারই।
কিন্তু সম্ভব কি ?
বিশেষ করে অর্থনৈতিক বৈষম্য যেভাবে বেড়েই চলেছে , ধনী গরীবের বিত্তের পার্থক্য যেভাবে দৃষ্টিকটু প্রাকট্য ধারন করছে , একটা হ্যান্ডফুল % মানুষের কাছে চোরাই ব্যবসার টাকা যেভাবে কনসেনট্রেটেড হচ্ছে তাতে করে স্থায়ী বাসস্থান অগনিত মানুষের জন্য এক সুদুর পরাহত স্বপ্ন।
একসময় এদেশের শিক্ষিত চাকুরে বাবার মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর জীবনের চালচিত্র - আশা- স্বপ্ন একই ছিলো।
সংসার ছিলো একান্নবর্তী।
রিটায়ার্ড বাবার পেনশনের টাকা , হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্সের লোন আর দেশের বাড়ীর দু চার টুকরো জমি বেচে শহরে এক টুকরো জমি , দেয়ালের ধার ঘেষে আম - জাম - সুপারী - নারকেল - পেয়ারা আর বেলী ফুলের গাছ লাগানো....................
মাঝখানে একটা সাজানো গোছানো বাড়ী।
হয়তো একতলা....
হয়তো দোতলা......
দু একটা ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে যদি বাড়তি কিছু আসে , লোনের টাকা তাড়াতাড়ি শোধ করা যায়
.............. এইতো সামান্য স্বপ্নে ভরা ছিলো মধ্যবিত্তের জীবন।
পৃথিবীর চিরস্থির আহ্নিক গতি আর বার্ষিক গতির ঘূর্ননে জীবনের সেই দিন গুলো স্থির থাকেনি।
পাল্টেছে।
সময় ঘড়ির টিকটিক শব্দের সাথে একটি বোমও টিকটিক করে চলেছে নিয়ত।
জনসংখ্যা বোম , মানুষ বোম।
কেউ বলে অলরেডী এক্সপ্লোডেড , কেউ বলে ইয়েট টু বি এক্সপ্লোডেড।
সরকার বাহাদুর বলে ১৬ কোটি এই মুহূর্তে।
আসল স্ট্যাট নাকি ১৮ + কোটি.... !
পপুলেশন সায়েন্টিস্টদের মতে ২০২৫ এর আগে এই জনসংখ্যা বেলুন ফুলতেই থাকবে।
২৫ কোটি হওয়ার পর নাকি স্ট্যাবল হবে!
আমি বলি :
বাঙালী তুমি বলিহারি এক জাতি !
প্রোটেকশনে তোমার হয়না ,
খাঁটি প্রাকৃতিক যৌনসুখ ই তোমার লাগবে !
থু !
এক টুকরো জমি , একটি ছিমছাম একতলা বাড়ীর স্বপ্ন এখন জমিদারী আমলের "খারিজা তালুক" কেনার মতই বড়শীতে বড় বোয়ালটা তোলা!
১.৫-২ কোটি টাকার মামলা কমপক্ষে......
সবাই এখন হাউসিং কোম্পানী গুলোর (ল্যান্ড অ্যান্ড বিল্ডিং ডেভেলপার) " ইট - কাঠ- পাথরের খাঁচা " ফ্ল্যাট নামের খুপরীর নাগালই পাচ্ছেনা।
খুপরী না বলেই বা উপায় কি ?
সিড়ি , লিফ্ট , করিডোর (কমন প্যাসেজ) মিলিয়ে যখন ৯০০- ৯৫০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের দাম হয় ২৫ লাখ টাকা আর জীবনের শুরু থেকে ইদুর দৌড় দৌড়ানো নতুন প্রজন্মের এক ছাপোষা চাকুরের বেতন যখন হয় ১২০০০ টাকা সাকুল্যে.......
তখন I.Sc 'র গতিবিদ্যার অংকের কথা মনে পড়ে যায় :
বাসের গতি এত , যাত্রীর গতি এত .... আরো কত বেশী গতিতে দৌড়ালে কত সময় পরে কত দুরত্বে যাত্রী চলমান বাস টিতে পৌছাতে সমর্থ হবে !!!!!!
তাই বলে জীবন থেমে থাকেনা।
এরই মাঝে নতুন প্রজন্ম ঘর বাঁধছে , জীবন নদীতে তরী ভাসাচ্ছে।
কিন্তু স্বপ্নের উঁকি দেয়া কি তাতে বন্ধ হয়ে যায়?
হয়না।
ফিলোসোফি বলে Dream is something that heeks
সব মেয়েরই স্বপ্ন থাকে নিজের একটা "ছোট্ট ঘর রাজ্যের রাণী" হওয়ার।
জীবনের এত স্বপ্ন আর সাধ্যের টানাপোড়নের মাঝেই শুনতে হয় ধানমন্ডী- গুলশানের লেকভিউ অ্যাপার্টমেন্টের আয়েশী বাসিন্দা বুদ্ধিজীবিদের বিদেশে নতুন প্রজন্মের ব্রেনড্রেন বিষয়ক সেমিনারীয় বুলি কপচানি ।
প্রতি বুলির রেট কত কে জানে ?
হাজার হোক - উনাদের লন্ডন-টরন্টো- বোস্টন পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের রিল্যাক্স লাইফতো এনসিওর করতে হবে !
চোখের সামনেই তো দেখলাম কিছু দেশী আলাল দুলালকে Nissan 350z আর Lexus SC430 হাঁকাতে !
আর তাইতো সামুতেও খুঁজে পাওয়া যায় "ইমিগ্রেশন ফ্রম বাংলাদেশ" গ্রুপ।
জীবনের পথ জনসংখ্যা আর গৃহায়ন দস্যুদের উৎপাতে এতটাই সংকুল হয়ে উঠেছে যে যেইসব মধ্যবিত্তরা একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হতে পেরেছেন তারাও নিশ্চিন্ত নন।
নগদ প্রমান আমি নিজেই।
আমার মা আমাকে বলেন : " তুই আমেরিকায় সেটল হ , তোকে ব্যাংকে যা আছে আর জমিজমা গুলো দেবো , ফ্ল্যাটটা তোর আপুকে দেবো । "
হ্যা / না কিছুই বলতে পারিনা।
শুধু বলি : "দোয়া করো".....
স্বগোক্তিতে যেটুকু আর আম্মুকে বলা হয়না :
দোয়া করো ....আমার জন্যেও , ১২০০০ টাকা বেতনের ছাপোষা চাকুরে তোমার আরো অনেক ছেলের জন্যেও...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।