বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
ঘটনাটা সেই সময়ের যখন বাংলাদেশে মোবাইল ফোন তখনো আসেনি । তখন ইচ্ছে করলেই আজকের মতো বোতাম টিপে সবার সাঘে আলাপ করা যেত না। ছাত্রীদের হলে যে পিএ বি এক্স লাইন ছিল তা সারাক্ষণ থাকত ব্যস্ত।
ফোনের পাটর্সগুলো যেন গরম হয়ে থাকত। হলের যারা কর্মচারী ছিল তাদের ব্যস্ততার কোন শেষ ছিল না। বিভিন্ন রুম থেকে ছাত্রীদের ডেকে দেয়া সহ নানা কাজ করতে তারা অনেক ব্যস্ত থাকত। ডেকে দেয়ার জন্য প্রতি বার পেত কড়কড়া একটি পাঁচ টাকার একটি নোট। ২০ বার ডেকে দিতে পারলেই ১০০ টাকা নগদ রোজগার।
বড় সহজ ব্যাপার নয়। বর্তমানে আর সেই রোজগারপাতি নাই। দিন বদলে গেছে। মোবাইল অনেক মানুষের ভাত মেরেছে।
ক্লাশের বাইরে করিডোরে বের হতেই আবুল দেখল, পরীর চেয়েও সুন্দর একটি মেয়ে হাতে একটি বই আর একটি খাতা নিয়ে ধীরে পায়ে হেটে যাচ্ছে।
তার হাটার মধ্যেও যেন একটি আর্ট আছে। পরীদের ডানা থাকে। পার্থক্য কেবল এটুকুই। মেয়েটির কোন ডানা নেই। তাকে দেখতে পেয়ে কি যে ভাল লাগল আবুলের ।
মনে হল তার সামনে দিয়ে যেন কোন পরী হেটে যাচ্ছে। আকশের নীল পরী যেন। হাতের কাছে নীল পরী হেটে যেতে সে এই প্রথম দেখল। ডানা থাকলে সে যে উড়ে যেত উড়াল দিয়ে দেখলেই মনে হয়।
তারপরের দিনও একই সময়ে তাকে দেখতে পেল আবুল।
আজ মেয়েটি চুলের বেণী করেছে। চোখে মনে হল কাজল পড়েছে। সেই চোখ দিয়ে যেন ঠিকরে বের হচ্ছে আগুন। সেই আগুণে যেন আবুলের হৃদয় পুড়ে যেতে লাগল। কালো চুলের বেণীর আঘাতে তার হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে যেতে লাগল।
আহা কি কষ্ট তার!
আবুলের বন্ধু মজনু মিযা বলল, কি দেখিস রে, হাবলু? ক’দিন ধরে দেখছি দাঁড়িয়ে কি যেন দেখিস। তোর ঘটনা কি?
কোন ঘটনা নাই। এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম ।
এমনি এমনি কেউ রোজ দাঁড়িয়ে থাকে? আমি কিন্তু ঠিকই খেয়াল করছি।
আরে না, কিছু না ।
কিছু তো একটা অবশ্যই। তুই বলতে চাচ্ছিস না।
শেষ পর্যন্ত আবুল মিয়া ব্যাপারটা আর গোপন রাখতে পারল না। পারবে কি করে? তার বন্ধু মজনু মিয়া বড় ট্যাটনা লোক। তার চোখ ফাঁকি দেয়া তো আর তো সোজা ব্যাপার নয়।
পুলিশ-চৌকিদারের চোখ ফাকি দেয়া যায়। ট্যানা লোকের চোখ ফাঁকি দেয়া যায় না। তাদের যেন চারটি চোখ।
আবুল মিয়ার খালি খারাপ খারাপ লাগে। মনে হয় তার পৃথিবীটাই বুঝি ফাঁকা।
মনে হতে লাগল ঐ মেয়ে ছাড়া বুঝি এই পৃথিবীতে কেউ নেই। মেয়েটি কি তাকে দেখছে ? না সেই একা একা তাকে দেখে .. .. .. ..
তার নাম জানা জরুরী। অনেক কষ্টে তার নাম জানা গেল। কষ্টটা করেছে অবশ্যই মজনু মিয়া । বিরাট কাজের লোক।
তার কোন তুলনা হয়না। এমন বন্ধু না হলে কি আর চলে? খাতুনের নাম হাসি। হাসির হাসি মুখ দেখতে না পেলে তার ভাল লাগে না। অথচ সে তো তার দিকে ফিরেও চায় না । উপায় কি এখন ? উপায় তো একটা বের তরতেই হবে।
এ ছাড়া আর তো কোন উপায় নেই।
বন্ধু মজনু মিয়া অনেক চালু । সে বলে , আগে কথা বল...
সাহসে কুলায় না যে.
সাহসের কি আছে? তোকে কি মারবে? বল, মারবে?
না মারুক, তাপরও। সাহসে কুলায় না। মেয়ে মানুষ।
কি করতে কি করে বসে তার কি ঠিক আছে।
সমস্যা কোথায়? তাহলে তুই কথা বলবি না?
সাহস পাচ্ছি না। অন্য কোন বুদ্ধি বের কর।
কি বুদ্ধি বের করব?
বের একটা কিছু। যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙ্গে।
তুই একটা রাম ভোদাই। তোকে দিয়ে জীবনে কিচ্ছু হবে না, ছাগল। যা মাঠে গিয়ে ঘাস খেয়ে আয়। মাঠে অনেক দুর্বাঘাস আছে। কচি আর সবুজ।
নরম। খেয়ে আরাম পাবি।
মজনু মিয়া কেন বুঝে না ওকে দেখলেই তার বুক ঢিপ ঢিপ করে। সারা দুনিয়ায় তার উথাল পাতাল শুরু হয়। মাথা ঝিম ঝিম করে।
তার হাতপা শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে যায় মাথা থেকে পা পর্যন্ত। কেন যে এমন হয় বুঝতে পারে না আবুল। এমনিতেই ওর সাহস অনেক কম।
বন্ধু মজনু মিয়া অনেক চিন্তা করে বুদ্ধি দিল , দোস্ত এক কাজ কর।
একটা চিঠি পাঠ্ওা। এটা সহজ পথ। তোমার সব কথা তাকে লিখিত জানানো হবে । যা তুমি সামনাসামনি এ জীবনে বলতে পারবে বলে আমার মনে হয না।
কিন্তু আমি কি লিখব? আমি তো জীবনে কাউকে চিঠি লিখিনি।
কেন বাসায় টাকার জন্য চিঠি লিখিস না?
টাকা চাহিয়া পিতাকে পত্র লেখা আর কোন মেযেকে পত্র লেখা কি এক জিনিস হল?
অনেকটা একই। বাবা-মাকে লিখিস টাকা চাহিয়া । আর এই মেয়েকে লিখবি প্রেম চাহিয়া। দুই চিঠির মর্মকথা একই ।
আমি পারব না, দোস্ত।
তার চেয়ে এক কাজ কর। তুই আমাকে একটা রাফ লিখে দে। আমি সেটা ফ্রেস কাগজে লিখে পাঠাবো।
ধুর, গাধা তাও হয় নাকি ?
হবে না কেন? চিঠিতে তো আর তোর নাম থাকবে না। আর তোর হাতের লেখাও তো যাচ্ছে না ।
তোর সমস্যা কোথায়?
ঠিক আছে। আজ রাতে চেষ্ট করে দেথি।
চেষ্টা করতে হবে কেন?
অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। এটা কিন্তু টাকা চাহিয়া পিতার নিকট কোন পত্র নয়। প্রেম চাহিয়া অচেনা অজানা এক মেয়ের কাছে পত্র।
বড় সহজ বিষয় না দোস্ত।
মজুন মিযা একটা অসাধারণ কাজ করে ফেলল। সেই রাতেই একটা খসরা পত্র রচনা করে পরদিন আবুলের হাতে তুলে দিল। দেখে আবুল খুশীতে ডগমগ। সত্যি অসাধারণ একটা চিঠি লিখেছে সে ।
নীল একটা খাম নিয়ে সাদা কাগজের উপর সে দেখে দেখে তুলে দিতে লাগল সেই চিঠি খানা।
চিঠিটা শুরু হয়েছে শিরোনাম দিয়ে।
ওগো অপসরী, তোমাকে দেখি
্ওগো সুদুরতমা,
প্রতি দিন অবাক বিস্ময়ে দেখি তোমার চলা। তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন এক একটি কবিতা। মানুষ যে এতো সুন্দর করে হাটতে পারে।
তোমার হাটা না দেখলে জানা হতো না। তুমি অনেক সুন্দর, অনেক। এতো সুন্দর কেন তুমি?
আমি কেবল তোমাকে দেখার জন্যই পথ চেয়ে থাকি। ওগো অপসরী, তোমাকে দেখি
তোমাকে না দেখলে আমার দিনগুলো মনে হয় কেবলই বৃথা।
এই টুকু লেখার পর আর লেখার মতো কিছু খুজে পেলনা সে।
খসড়া থেকে এই টুকু নিয়েই কাজ চালিয়ে দেবে ঠিক করল।
পরদিনই ক্যাম্পাসের পোস্ট অফিসে গিয়ে পোস্ট করে ফেলল চিঠি খানা। জীবনের প্রথম প্রেম পত্র। এক ধরনের রোমাঞ্চ বোধ করছিল সে। কি যে হবে তার।
শরীরে যেন রক্ত গরম হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চিঠি তো পোস্ট করা হল। এবার কি কাজ। চিঠি তো ইতোমধ্যে পৌছেও গেছে প্রাপকের কাছে। ফিডব্যাক কিভাবে নেয়া যাবে।
বড় ঝামেলার কাজ। প্রতি পদে পদে কত যে ঝামেলা জীবনে। আগে তার জানা ছিল না।
চিঠিতে একটা কাজ অন্তত: হয়েছে। মেয়েটি যে চিঠি পেয়েছে তাও বোঝা গেল।
তা হচ্ছে মেয়েটি এখন করিডোর দিয়ে যাবার সময় আশেপাশে অনেক আগ্রহ সহকারে তাকায়। এটা একটা ভালো দিক। তার চোখে চোখ পড়ার সম্ভাবনা আছে । ভাগ্যক্রমে সেদিন তার সামনা-সমানি পড়ে গেল। থমকে দাঁড়ালো দু’জনে।
কি যে আগুন তার চোখে-মুখে। কাজল কালো সে চোখে কিসের এতো আগুন বুঝতে পারছেনা আবুল। সরি বলে পাশ কাটিয়ে কোন রকমে চলে গেল পাশ কাটিয়ে। আহারে কি উত্তেজনা তার মনে তখন।
রাতে মজনু মিয়াকে সব খুলে বলল সে।
বলল , দোস্ত , আরেক খানা চিঠি লিখতে হবে। বন্ধু কি আর সহজে রাজী হয়।
তুই লিখ, তুই ও তো আমার সাথে একই ক্লাশে পড়িস। ছাত্রও তো খারাপ না। একটা চিঠিও কি লিখতে পারিস না ।
গাধা কোথাকার।
আমি সব পারি। প্রেমের কোন ভাষা আমার আসে না দোস্ত । কি করব বল?
আমি পারব না। আমার অনেক কাজ আছে।
রাতে এসাইনমেন্ট লিখতে হবে।
দোস্ত, এই বারই শেষ । পরে আর তোকে লিখতে বলব না। পরেরটা আমি নিজেই লিখব।
ঠিক আছে।
এই যদি শেষ হয় তাহলে আমি লিখে দিচ্ছি। তবে মনে থাকে যেন এটাই শেষ চান্স। ভুলে যাস না যেন আবার ।
না ভুলব না। এটাই শেষ চান্স।
এই চিঠিটাও জোস হল। বার বার ওর মনে হল কি দারুণ সব ভাষা রে বাবা। আরো মনে হতে লাগল এই চিঠি যে মেয়ে পাবে সে অনেক ভাগ্যবতী। এমন ভাষার চিঠি যাকে নিয়ে লেখা হয় তার তো উচিত না ভালবাসার ডাক উপেক্ষা করা। চুপ করে অনেক ক্ষণ ভাবল সে।
ভেবে ভেবে একটা সিদ্ধান্তে সে পৌছালো তাহল: সে নিজে মেয়ে হলে তাকে যদি কেউ এমন করে লিখত তাহলে সে আর যাই করুক কবি কবি ভাষার এই নবীন প্রেমিকের ভালবাসার ডাক কে উপেক্ষা করতে পারত না। একটি বালকের এমন আহবান উপেক্ষা করে সে কোন হৃদয়হীনা। কেন যে মেয়েরা হৃদয়হীনা হয়।
এই এক তরফা চিঠির একটা সমস্যা হচ্ছে এতে প্রেরকের কোন কোন ঠিকানা থাকছেনা। ফলে প্রাপক ইচ্ছে করলেই এর জবাব পাঠাতে পারছেনা ।
প্রেরকের নাম থাকলেই যে ঐ মেয়ে চিঠির জবাব দেবে তার তো ঠিক নেই। এক তরফা প্রেমের জ্বালা অনেক জ্বালা। এই টাকে এই বার দুই তরফা করতে হবে।
বন্ধু মজনু মিয়া বুদ্ধি দিল, দোস্ত আর চিঠি নয় এবার কথা বল।
উহু, সে আমি পারব না।
আমার অতো সাহস নেই। ওকে সামনে দেখলেই আমার গা কাপে।
কেন, ভয় পাস?
ইা ঠিক ভয় না। তবে আমি বুঝতে পারি না। ্ও সামনে এলেই আমার গা কাপে।
কথা বলা দুরে থাক আমি এর সামনেই দাঁড়াতে পারি না।
এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সংসার করবি কি করে। বিয়ের পর তো আরো কত কি করতে হবে, তখন?
জানি না, আমি জানি না।
জানতে হবে। পৃথিবীতে অনেক কিছু জানার আছে।
তোকে অবশ্যই জানতে হবে।
ওকে। তাহলে এ কথাই রইল। আজ কালের মধ্যে ওর সাথে তুই কথা বলবি। আমি ব্যবস্থা করব।
আচ্ছা।
মজনু মিয়া কোন এক জনের কাছ থেকে বালিকার রুম নম্বর জোগাড় করে নিয়ে এসেছে। হলের গেস্ট রুমে যে ফোন সেটটা সবার ব্যবহারের জন্য দেয়া আছে সেটা থেকে কল দিতে হবে।
কিন্তু তাতে এক বিরাট এক সমস্যা আছে। ফোনটি সাবাক্ষণই ব্যস্ত থাকে।
কারো কল আসে। কারো কল যায়। আর যাদের প্রেম আছে তারা এক বার ফোনে লাইন পেলে সহসা ছাড়তে চায় না। রাজ্যের যত কথা আছে সব বলার চেষ্টা করে। আসলে টেলিফোনে কথা বলার মজাই মনে হয় আলাদা।
এক নাগারে কত যে কথা বলতে পারে মানুষ!
তবে বন্ধুর অনেক কৌশলের কারণে সে লাইন পেয়ে গেল। ভাগ্যক্রমে অনদিকের লাইনও ফাকা ছিল। হলের একজন কর্মচারীকে অনুরোধ করতেই সে ডেকে দিতে রাজী হয়ে গেল। মনে হয় এরকম করতে তারা অভ্যস্ত। তাদের বেশীর ভাগ সময় কাটে ফোন কল রিসিভ করতে আর ডেকে দিতে।
যেন এ কাজের জন্যই তাদেরকে বেতন দেয়া হয়।
সে শেষ পর্যন্ত এসেছে। তার সাথে এখন কথা হবে। ভাবতেই আবুলের গা কাপতে লাগল। আহা, সে কি ক্পাুণি।
তার দোস্তরা মিটিমিটি হাসতে লাগল। আহাম্মক কোথাকার। একটা মেয়ের সাথে টেলিফোনে কথা বলতে গিয়েই এই অবস্থা । বাকি কাজ করতে গেলে না জানি কি করবি?
সহসাই ও পাশ থেকে একটি মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে এলো।
হ্যালো কে বলছেন? আবুল... আমি আবুল বলছি।
মোহাম্মদ আবুল হোসেন মিয়া ।
দেখুন, আমি তো আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনা। আপনি কোন ইয়ারে পড়ছেন? কোন হলে থাকেন?
আমি ২য় বর্ষ পুরাতনে পড়ি। আপনি তো ১ম বর্ষ নতুনে । আমি এম রহমান হলে থাকি ।
আমি আপনাকে এখনো চিনতে পারছিনা।
আপনি কি ইদানিং কারো চিঠি পাচ্ছেন?
ও হ্যা। আপনি আবুল...? শুনেন , আমার অনেক কাজ আছে। এখন রাখছি। বলে সে ফোন কেটে দিল ।
শত চেষ্টায়ও আর লাইন পাওয়া যাবেনা।
সমস্যা হল একবার কথা বলে আবুলের সাহস বেড়ে গেছে। এখন সে অনেক কথা বলতে চায়। কিন্তু ফোনের লাইন পাওয়া এতো সোজা ব্যাপার নয়। যদিওবা কখনো লাইন পাওয়া যায় তাকে পাওয়া যায় না।
তাকে পেলেও সে কথা বলতে চায় না। দু’এক কথা বলার পর রেখে দেয়। তা যতটা না অপমানজনক তার চেয়ে বেশী কষ্টদায়ক। এমন কেন যে কওে মেয়েটি আবুল ভেবে প্য়া না।
অথচ তার পরিচিত কত জনই তো চুটিয়ে প্রেম করছে।
সন্ধ্যার পর লাইব্রেরীর পেছনে ঝোপের আড়ালে বসে বসে এরা কি যে করে কে জানে। মাঝে মাঝে কোন সুত্রে খবর পেযে প্রক্টর মহোদয় রাতের বেলা হারিকেন নিয়ে বের কেন কারা বসে বসে থাকে তাদেরকে হাতে নাতে ধরতে। কয়েক জনকে তিনি ধরতে পেরেছেনও। বিরাট এক অপমানকর কান্ড। সবার সামনে বসে কি যে অপমান।
তখন তো মনে হবে কেন যে এগুলো করতে গেলাম।
একদিন ভাগ্য ভাল ছিল । টেলিফোনে লাইন পাওয়া গেল। আবুলের ইচ্ছে ছিল সাহস করে বলে ফেলা : আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক বার চেষ্টা করেও সে কথাটি বলতে পারল না।
তার কেবলি মনে হতে লাগল: যদি না বলে। প্রত্যাখানের কষ্ট না পাওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
সাত পাচ ভেবে একদিন ঠিক করল তাকে বলবেই। যা হোক একটা কিছু তো হবেই। ঝামেলা বুকে চেপে রাখার চেয়ে বলে ফেলাই অনেক বেশী ভাল।
সেই সুযোগও এসে গেল্ । আবুল লাইব্রেরী থেকে বের হচ্ছিল। সামনে তাকিয়ে দেখে হাসি দাড়িয়ে। বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে সে প্রস্তুত হল।
দেখুন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আপনার কি সময় হবে?
ঊলুন, এখনই বলুন । আমার সময় নেই। বিকালে ক্লাস আছে\
আপনি কি আমাকে চেনেন?
হ্যা, চিনি। আপনি সেই । যে আমাকে চিঠি লিখে।
আমি কি ঠিক বলেছি?
হ্যা। ঠিক।
আপনি কি জানেন যে আমি এই সব ফালতু বিষয়কে কোন গুরুত্ব দিই না।
ফালতু বিষয় কোনটা?
আপনি যা করছেন তাতো ফালতুই। ভাল ভাবে পড়াশোনা করুন।
কাজে লাগবে। জীবন অনেক বড় ।
বলেই হন হন করে বেড়িয়ে গেল মেয়েটি। একবারের জন্য ও তাকাল না। এমন নিষ্ঠুর হয় কেন মেয়েরা? তার জীবনে এমন নিষ্ঠুর মেয়ে সে আর দেখেনি।
সেই দুপরে আবুলের মন এেেতা খারাপ হল যে সে বাকি টা সময় হলের বিছ্নাায় মটকা মেরে শুয়ে রইল। আর কোন ক্লাশে গেল না। অনেক গুরুত্ব পূর্ণ একটি ক্লাশ ছিল। সে গেলনা। তার কাছে জীবনটাই গুরুত্বহীন মনে হতে লগল।
ক্লাশ তো কোন ছার। মনে হল তার পৃথিবী কেবলই শূণ্য আর ফাঁকা।
সে রাতেই সে তার শেষ চিঠিখানি লিখল। চিঠি খানা যে শেষ এটা তো সে বুঝতে পারেনি।
সুদূরতমা,
আমি বুঝতে পারি না মানুষ যে কেন এতো নিষ্ঠুর হয়! আমার চোখে পৃথিবীর সেরা মানবী তুমি।
কিন্তু তুমি এতো নিষ্ঠুর কেন? তোমার জন্য যে এক জন অনেক অনেক কষ্ট পাচ্ছে তা কি তুমি বুঝতে পার না। ? অনেক অনেক ভাল থেকো।
পথচারী।
সেদিন সন্ধ্যায় তারা ক’জনে মিলে যখন যাচ্ছিল লাইব্রেরীর পাশ দিয়ে । সহসা সে দেখল একটি ছেলের সাথে অনেক আপত্তিকর অবস্থায় হাসি বসে আছে।
দু’জনের মাঝে ক’তটা গভীর সম্পর্ক থাকলে এমন নিবিড় ভাবে আধারের একটি ছেলের সাথে বসে থাকা যায় ভেবে পেল না আবুল। তার মনটা ভীষণ রকম খারাপ হয়ে গেল। তার চারদিক কেবলি মনে হতে লাগল ফাঁকা, ফাঁকা অনেক ফাঁকা। চারি দিকে যেন অসীম শূণ্যতা । কি করতে হবে আবুল বুঝতে পারল না।
আনমনে বন্ধুদের সাথে হাটতে লাগল সে। পথটাকে তার কাছে মনে হতে লাগল অনেক দীর্ঘ আর অমসৃন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।