আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকটি বুলেটের আত্মজীবনী

কেবল কবিতা লিখবো বলে

এভাবে তাকিয়ো না, আমাদের বড়ো অপরাধী লাগে মনে পড়ে সেই রাতে কী নির্বিচারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলাম আমরা আমাদের ছুটে যাবার বেগে, শব্দে প্রকম্পিত হয়েছিলো সেদিনের ধানমন্ডি বিদীর্ণ হয়েছিলো ৭ই মার্চের নায়কের বুক। এভাবে তাকিয়ো না, আমাদের বড়ো অপরাধী লাগে ক্যান্টনমেন্টের ভাগাড় থেকে একে একে উঠে এলাম আমরা চারপাশে ফিস ফিস- বুটের মচমচ শব্দ- যেনো নীরবতা ভাঙলেই ঘটে যাবে দানবীয় বিস্ফোরণ। আমরা হাত বদল হয়ে গেলাম, যেমন ইউরোপে দাস বদল হয়ে যেতো- শহর থেকে শহরে। বারো নম্বর জিপে, ঠিক মনে আছে- ‘ইটস টুয়েলভ’ বলে যে সেনা নিশ্চিত হয়েছিলো জিপের নম্বর- আমাকে নিক্ষেপ করার সময় সে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো- কেননা সে জানতো চোখ মেলে রেখে কেউ হন্তারক হতে পারে না। বত্রিশ নম্বরের সড়ক ধরে যখন জিপটি এগিয়ে গেলো আমি যেনো শিহরিত হলাম- আমার মুখাগ্রের বারুদ কেবলই এক অজানার ধ্বংসে ক্রমেই ফুঁসে উঠছিলো।

‘হ্যান্ডস আপ’। কেউ হাত তুলেছিলো কিনা জানি না, কেননা- হাত যখন তোলা হয় না, তখনই আমার ডাক পড়ে হাতটিকে চিরদিনের মতো নিস্তব্ধ করে দেবার জন্য। এভাবে তাকিয়ো না, আমাদের বড়ো অপরাধী লাগে আমাদের। আমার এবং আমার সহোদরদের। ‘ফায়ার.. ..’ ছুটে গেলো আমার কয়েক সহোদর ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়া হলো সুলতানা কামাল আর রোজী কামালের শরীর।

গড়িয়ে গেলো রক্ত। আমার সহোদরদের উদ্ধার করা হয়েছিলো রক্তের ধারা আর নববধূদের মেহেদী রাঙা হাতের ঠিক মাঝখান থেকে। এভাবে তাকিয়ো না, আমাদের বড়ো অপরাধী লাগে অপরাধী লাগে, কেননা আমাদের বিষে বিষাক্রান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েছিলো বেগম মুজিব- মাতৃস্নেহে যাকে তোমরা কিংবদন্তী বলতে। আমাদের যে সহোদর শেখ রাসেলের বুক ছিন্ন করেছিলো তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি- ওতোটুকু হৃদপিন্ডের ভেতরে, সে কী তবে হারিয়ে গিয়েছিলো! ওইটুকু হৃদপিন্ডে অতো বড়ো ভালোবাসার আকাশ! হঠাৎ। “তোমরা থামো”- বলে একটি কণ্ঠস্বর এগিয়ে এলো সিঁড়ির গোড়ায়।

সেই চির পরিচিত কণ্ঠস্বর, যে কণ্ঠস্বরে ধ্বণিত হয়েছিলো পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় লেখা শ্রেষ্ঠ কবিতা “এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”- স্বাধীনতার এই কী আশ্চর্য রূপ, স্থপতিকে নৃশংসভাবে হত্যার নামই কী তবে স্বাধীনতা? সাতই মার্চের সেই কণ্ঠস্বরে হঠাৎ থমকে গেলো আমাকে বহন করা ঘাতক, বুঝি কেঁপে উঠলো তার হাত- সঙ্গিন উঁচিয়ে আছে, বিষাক্ত আমাকে ছোঁড়ার অপেক্ষায় সামনে দাঁড়িয়ে চিরপরিচিত পাইপ হাতে ভালোবাসা জড়ানো চশমার ফ্রেমটি চোখে নিয়ে এক অপূর্ব নায়ক। স্তম্ভিত মুহূর্ত কেটে গেলে ঘাতক সজাগ হয়ে উঠে যদি ভালোবাসার কাছেই পরাজিত হবে- তবে তো আর সে হন্তারক নয়। মুহূর্তে নিক্ষিপ্ত হলাম আমরা- কয়েকজন একসাথে-ঠিক কতোজন, মনে নেই। তোমাদের খুব ঘৃণা হচ্ছে আমাদের প্রতি? ঘৃণা করো, কিন্তু- এভাবে তাকিয়ো না, আমাদের বড়ো অপরাধী লাগে। তারপর কী হলো জানো-? সেই বুকের ভেতরের হাজার স্বপ্ন আলিঙ্গন করলো আমাদের।

বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃদযন্ত্র থেকে ঝরে পড়া ভালোবাসার তুমুল বৃষ্টিতে ভিজলাম- আমি, আমরা আর পুরো বাঙলাদেশ। এভাবে তাকিয়ো না, আমাদের বড়ো অপরাধী লাগে যে বুক বিদীর্ণ করেছি আমাদের বিষাগ্র দিয়ে- সে বুকে পেয়েছি অনাবিল মমতা- সেদিন বুঝেছিলাম, কেনো তিনিই তোমাদের জাতির পিতা। সেদিনের তারিখ ছিলো পনেরোই আগস্ট, উননিশ’শো পঁচাত্তর। ছায়াপথিক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।