এক্সট্রা এনার্জি এক্সচেঞ্জার
কিছুই বললেন না প্রণব বাবু। অথচ তার মুখ নিঃসৃত একটি বাক্যের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল দক্ষিণ উপকূলের সিডর দুর্গত এলাকার ১৬শ পরিবার। ৩ বছর আগে যাদেরকে ঘর তৈরী করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার দেশ ভারত। প্রণব মুখার্জী নিজের মুখেই দিয়েছিলেন সেই ঘোষণা। তখন তিনি ছিলেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কেবল ঘোষণাই নয়, শেরাটন হোটেলের আলোক উদ্ভাসিত মঞ্চে ঘরের মডেল পর্যন্ত উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। আজ পর্যন্ত সেই মডেল আর বাস্তব ঘর হয়নি। মাথার উপর চালা জোটেনি ১৬শ পরিবারের। ভারত সরকার দেবে বিধায় অন্য কেউই কিছু দেয়নি তাদের। শনিবার ৪ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে আসেন প্রণব মূখার্জী।
২ দফা কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে। তুলে ধরেন ৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তির নানা দিক। কথা বলেন সিডরের পর বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভারতের সহমর্মিতা নিয়ে। কিন্তু একটি বারের জন্য তোলেননি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গ। ১৬শ ঘরের ভবিষ্যৎ নিয়েও বলেননি কিছুই।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ব্যাপক বিধ্বংসি সিডরে বিধ্বস্ত হয় দেশের দক্ষিণ উপকূল। ১ ডিসেম্বর পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আসেন ভারতের তৎকালীণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী। বরগুনার পাথরঘাটা এবং বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকার বিধ্বস্ত উপকুল পরিদর্শন করেন তিনি। পরে দেশে ফেরার প্রাক্কালে দুর্গত এলাকার ১০টি গ্রাম পুর্নগঠনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পরদিন ফলাও করে এই খবর প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদপত্র।
প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তালবাহানা শুরু করে ভারত। একপর্যায়ে বদলে যায় প্রতিশ্রুতির ধরণ। ১০টি গ্রাম পুন:র্গঠনের স্থলে বাগেরহাট জেলার শরনখোলা উপজেলায় ১০ গ্রামে ১৬শ ঘর তৈরী করে দেয়ার কথা বলে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেই কথা মেনে নেয় বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের মে মাসে চিঠি দেয়া হয় ভারত সরকারকে।
বর্ষা মৌসুমের আগেই ঘর নির্মান কাজ শুরুর তাগাদা দেয় বাংলাদেশ। উত্তরে কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়ে দেয় ভারত। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এ ব্যাপারে আর কিছুই হয়নি। ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী আবার ঢাকায় আসেন প্রণব মুখার্জী। দ্বিপাক্ষিয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
সিদ্ধান্ত হয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে। দ্বিতীয় এই সফরে ঢাকার শেরাটন হোটেলে সাংবাদিকদের সামনে সিডর দুর্গত এলাকার জন্য ভারতীয় সহায়তার ঘরের মডেল উদ্বোধন করেন প্রণব মুখার্জী। খুব শিগগিরই ঘর নির্মাণ শুরু হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। আবার আশায় বুক বাঁধে দুর্গত এলাকার মানুষ। কিন্তু এবারেও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ভারত সরকার।
বছর পেরুলেও আসেনি ঘর নির্মান সহায়তা। বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে পররাষ্ট্র খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে অহেতুক চিঠি চালাচালি করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথমে ১৬শ পরিবারের তালিকা চায় তারা। সেটি পাঠানো হলে জানতে চাওয়া হয় পরিবারের সদস্য সংখ্যা। দ্বিতীয় এই চিঠির উত্তরের পর তৃতীয় দফা চিঠিতে তালিকাভুক্ত ১৬ পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি ও তাদের আয়ের পরিমান জানতে চায় ভারত।
যথারীতি সেই তথ্যও দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও কোনরকম সহায়তা পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথম দিকে পুনরায় তাগাদাপত্র দেয়া হলে বিষয়টি ভারত সরকারের পরীক্ষা নিরীক্ষাধীন রয়েছে বলে জানিয়ে দেয় তারা। এক্ষেত্রে সময় লাগবে উল্লেখ করে অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়। গত ৭ মাসেও শেষ হয়নি অপেক্ষার সেই কাল।
কবে নাগাদ সাহায্য আসবে তাও বলতে পারছেনা কেউ। এরকম একটি অবস্থায় শনিবার বাংলাদেশে আসেন পররাষ্ট্র থেকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া প্রণব মুখার্জী। প্রথমে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে এবং পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক আর ঋণ চুক্তি নিয়ে কথা বলেন তিনি। সিডরের পর বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের সহানুভুতি এবং দুর্গত এলাকায় তার সফর নিয়েও কথা বলেন প্রণব।
কিন্তু বলেননি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা। আদৌ বাংলাদেশ ঘর পাবে কিনা সে বিষয়েও কোনরকম মন্তব্য করেননি তিনি। ফলে হতাশ হয়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বেদনায় কষ্ট পেয়েছে তারা।
ঘর দেবে কি দেবে না বিষয়টি তাদের পরিস্কার করা উচিত।
সেক্ষেত্রে অন্ততঃ আমরা আর আশায় থাকবোনা। ৩ বছর পরেও আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছে ভারতীয় ঘর পাবার তালিকায় উঠা ১৬শ পরিবার। বিদেশ থেকে ঘর পাচ্ছে ভেবে সরকারী কিংবা বেসরকারী কেউ সহায়তা দেয়নি তাদের। ৩ বছর ধরে চিঠি চালাচালি এবং মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নেয়ার পরও তাদের এই নিরবতা মোটেই কাম্য নয়। গত বছরের শেষের দিকে একটি বেসরকারী সংস্থা কিছু পরিবারকে ঘর দিলেও বাকীরা এখনও খোলা আকাশের নিচে।
অবশ্য সামপ্রতিক সময়ে তাদের ব্যাপারে কিছু একটা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রেও সবার ঘর পেতে হয়তো বছর ১/২- ২ লাগবে। তাছাড়া সিডরকালীন সময়ে ৫ লাখ টন চাল রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েও অমানবিক আচরণ করেছিল ভারত। ২ বছর পর টন প্রতি প্রায় দেড়শ ডলার বেশী দামে ওই চাল আনতে হয়েছিল আমাদের। অথচ কথা ছিল কম দামে চাল দিয়ে দুর্গতদের সহায়তা দেবে দেশটি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।