আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বর নিশ্চুপ

পরাঞ্জয়ী...

মন খারাপ মুগ্ধার। কেন খারাপ তা জানেনা সে। জানার আগ্রহটা যে তীব্র তা বলা যায়না! নিয়ন কে আসতে বলে! নিয়ন আসে। মোটরবাইকের পেছনে বসে মুগ্ধা রাস্তার চারদিকে চোখ বুলায়! হলুদ রঙের একটা ব্যানার দিয়ে বস্তা বা এ জাতীয় কিছু ঢেকে রাখা। উপরে নীল কালিতে লেখা "রিখের সমাবেশ সফল করুন" তারিখের "তা" টুকু ঢাকা পড়েছে।

হঠাৎ বস্তাটা নড়ে উঠলো। আসলে ব্যানারের নীচে কোন বস্তা নয়, পরিত্যাক্ত বস্তার মতই সমাজের একটি বোঝা!! । সেদিনের সমাবেশ সফল হয়েছিল কীনা জানিনা, তবে ঐ ব্যানারে নিজের বেআব্রু জীবনের অপ্রয়োজনীয়তাটুকু ঢাকতে অনায়াসে সফল হয়েছে মানুষ নাম দেয়া প্রানীটি!!! একটা পাজেরো সাঁই করে চলে গেল পাশ কেটে। দু'টুকরো করা একটা প্যকেট পড়ে জানলা দিয়ে। চকবারের প্যাকেট! এ সি গাড়িতে বসে গরমে তারা চকবারের স্বাদ নেয়, ঠিক তার উল্টোপাশে দূজন বৈকালিক ভ্রমনে ব্যস্ত আর কেউ বা ফুটপাতে ব্যানারে শরীর ঢেকে গরম নিবারনে(!) সচেষ্ট! শুক্রবারে ঢাকা শহরটা কেমন যেন নির্মল হয়ে যায়।

পাখিরা সাহস করে যত্রতত্র গান ধরে, বাতাস বয় নির্ধিদায়, চাইলে রিখশাওয়ালারাও একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে রং সাইড দিয়ে রিকশা চালায়! নিয়ন চুপ করে গাড়ি চালায়। মুগ্ধাও চুপ। ইদানীং যেন কথা ফুরিয়ে গেছে দু'জনের! একটা সময় কথার খই ফুটতো ওদের। এখন শরীরবৃত্ত্বিয় ২-১টা কথা ছাড়া কথাই হয়না! যেমন করে চর পড়ে নদীর ,সম্পর্কেও বুঝি চর পড়ে যায় এমন করে! বলাকার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মনে মনে আওড়ায় মুগ্ধা "৬টা বকের ১২ টা পা, ৬টা বকের ১২ টা পা" বলাকার সামনে আসলেই মুগ্ধার এই কথা টা বলতে খুব মজা লাগে! তারপর আরেকটু এগিয়ে স্টেডীয়ামের কাছাকাছি এসে বিলবোর্ডে কানে শঙ্খ ধরে রাখা মেয়েটির দিকে ফিরে ফিক করে হেসে মনে মনে আবারও বলে "তোমার শঙ্খ পঁচা, আমারটা ভাল। আমারটা সাদা! ধবধবে সাদা।

মৃত্যুর মত সুন্দর! ফাঁকা রাস্তা মুগ্ধার ভাল লাগেনা। মানুষ পড়তে পারা যায়না ফাঁকা রাস্তায়! ভীড়ের মাঝে মুগ্ধা দেখে কিছু লোলুপ চোখের লকলকে জিহ্বা! ওর রাগ হয়না। ওরা তো তৃষ্ণার্ত কুকুর। ওরা সৃষ্টিকর্তার ভুলের সৃষ্টি। ঈশ্বর ভুল করে "মানবকাঠামো"তে কুকুরের আত্মা প্রবেশ করিয়েছিলেন! নিজের ভুলে লজ্জিত ঈশ্বর তাই নিশ্চুপ! আজ ফাঁকা ঢাকায় সে লোভাতুর দৃষ্টিগুলো যেন গভীর নিদ্রায় ডুবে আছে।

সে স্বস্তি পায় যেন ভাবতেই । সিগনালে এসে আটকে যায় কিছুক্ষন। পাশের হাল ফ্যশনের বাইকে বসা অধিক হাল ফ্যাশনের ছেলে একটা। দুই কানে কানফুল, দাঁড়িটা কেটেছে খুব য্ত্ন নিয়ে। চুলের কলির সাথে মিলিয়ে এক কানের গোড়া থেকে আরেক কানের গোড়া পর্যন্ত! হাতের মধ্যে কয়েক গাছা চুড়ি।

মুগ্ধার খুব ইচ্ছে করে নিজের হাতের চুড়িগুলো খুলে ছেলেটাকে পরিয়ে দিতে। নিয়নের কথা ভেবে ভয়ে পারেনা! এমনি করে ভাবতে ভাবতে ভার্সিটি পৌঁছে গেল ওরা। ভাষা ইন্সটিটিউটের সামনে ফুটপাতে একটা পাগল শুয়ে থাকে। বিবস্ত্র। ঠিক রাজনীতিবীদদের মত বিবস্ত্র! পার্থক্যটা খুব কম।

ফুটপাতের জন বোঝেনা, আর ওরা বুঝে শুনেই চোখ বন্ধ করে বিবস্ত্র থাকে! ক্যাম্পাস ভর্তি মানুষ। যেন মেলা বসেছে। কারও হাতে চা, কারও সমুচা, কারও আবার আইসক্রীম,জুস! আবার দৈর্ঘ্যে অনেক কম কিছু মানুষ হাত পেতে বলছে "ভাইয়া/আপু এট্টু দ্যান, এট্টুসখানি দ্যান"। মুগ্ধা আজকে ফিরিয়ে দেয় ওদের। ওর ভাল লাগেনা কেন জানি।

মরে যাক ওরা! ক্ষুধায় তৃষ্ণায়। এমনি করে বেঁচে কী লাভ!!! কান্না পায় ওর! হঠাৎ ধ্যান ভাঙ্গে নিয়নের কথায়............ কী হল চুপ করে আছ যে??..................................মুগ্ধা তাকায় নিয়নের চোখে....... চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিতে চায় "আমি নই, ঈশ্বর চুপ, নিয়ন!"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।