এই দেশ অনেক রক্তের বিনিময়ে মুক্ত হয়েছে। আমরা অনেক সমস্যা পার হয়ে আজ এই পর্যন্ত এসেছি। আমরা অনেক দল ও মতে বিভিক্ত। আর মানে এই নয় যে আমরা জাতি হিসাবে বিভক্ত। আমাদের অনেক উত্থান ও পতন মেনে নিতে হয়েছে।
তোবুও তো আমরা চলছি, থেমে নেই। আমাদের লক্ষ্য অনেক দূর যাওয়া। আমাদের এখন অনেক দূর এগুতে হবে। কিন্তু আমরা প্রায়ই কিছু বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। ইদানিং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রাহমান কে নিয়া অনেক বাজে মন্তব্য করা হয়েছে।
আমরা এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার আছে।
মুক্তিযুদ্ধের আগে যে সংগ্রাম ও আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার কেন্দ্রু বিন্দু ছিল বঙ্গবন্ধু। তিনি না থাকলে আজ এই দেশ আমরা পেতাম না । তাই তার সেই অবদান আমরা ছোটো করে দেখতে পারি না। তিনি যখন আন্দোলন করলেন এবং জনগণ তাকে বিপুল ভোট দিয়া ১৯৭০ সালে ইলেকশন এ বিজয়ী করে ছিলো তখন এটা প্রমাণ হয়ে যায় যে, পূর্ব পাকিস্তিনের সকল জনগন তাকে তাদের নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছিলো।
স্বধিনতা যুদ্ধের সময় ও স্বাধিনতার পর তিনি ছিলেন আমাদের জাতীয় নেতা। মুক্তিযুধের পরে তিনি দেশে এসে জনগন কে নিয়া কাজ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু একতার অভাবে এবং কিছু সুবিধা লোভীদের কারনে পারেন নি। এর অন্য একটি প্রধান কারন এই যে, তিনি যুদ্ধের আগে জনগন কে যে বিপুল পরিমানা আশা ও সপ্ন দেখিয়েছিলেন তা পুরন করার মত যথেষ্ঠ ক্ষমতা ছিল না। পরিস্থিতি যখন তার নিয়ন্ত্রের বাইরে, তখন তিনি "বাকশাল" প্রতিষ্ঠা করেন। তখন গনতন্ত্র বলুপ্ত হয়েছিলো।
কিন্তু গনতন্ত্রের সুযোগে যে অরাজকতা দেশে চলছিলো তা বন্ধো করার হয়তো আর কোন উপায় তার কাছে ছিলো না। তার ও তার পুরো পরিবার এর মর্মান্তিক মৃত্যু একটি অপূরনীয় ক্ষতি। আজ তার বিচার হচ্ছে। খুনিদের ফাসিঁও হচ্ছে। সকল অপরাধের বিচার হবে।
এটাই স্বাভাবিক। তাই ইতিহাস তাকে এক জন সফল সংঘটক হিসাবে মুল্যায়ন করবে। কিন্তু শাসক হিসাবে তিনি সফল ছিলেন না। আবার পরিস্থিতি মূল্যায়ন না করে তাকে ব্যার্থ বলাও যাবে না।
আবার যখন দেশের একটি সংকট চলছিলো তখন সেনা প্রধান জিয়াউর রাহমান তার অবস্থান ও পরিস্থিতি অনুযায়ী দেশ কে পরিচালনা করেছেন।
মুক্তিযুধেও তার অবদান অনেক। তিনি সিক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম প্রতিরধের ডাক দেন। সেটাকে স্বাধিনতার ঘোষণা বললে বলা যায় আবার নাও বলা যায়। কিন্তু তিনি নিজে কখনো এ ব্যাপারে কিছু দাবি করেন নি।
তিনি দেশে গনতন্ত্র পুনঃ প্রর্বতন করেন। সে সময় যা খুবই জরুরি ছিল। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি তার সময়ে অনেক জনপ্রিয়ও ছিলেন। দেশের প্রয়োজনে তিনি অনেক কাজও করেছিলেন।
তার সময়ে দেশের অনেকটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং রাষ্ট্র প্রধান ও জনগনের মাঝে দূরত্ব অনেক কমে আসে। ফলে দেশে যে থমথমে ভাব বিরাজ করছিলো তা অনেকটা কমে আসে।
যখন দুই জন নেতাই পাশাপাশি ছিলেন তখন তাদের মধে কোন দ্বন্দ ছিল নি। এমনকি তারা কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য বা সমালোচনাও করেন নি। বরং জিয়া সব সময়ই মুজিবের আনুগত্য করেছেন।
মুজিবও জিয়া কে কখনো অন্য নজরে দেখেন নি। অনেকেই এই কারনে জিয়া কে চতুর বা শিয়াল বলে থাকেন। কিন্তু তা যদি হয়েও থাকেন, তৎকালিন পরিস্থিতি বিবেচনা না করে তাকে শিয়াল কম্পনা করাটা বকামি হবে।
আজকে যারা মুজিবকে উপরে তোলার জন্য জিয়া কে নিয়ে কটু কথা বলে তারা যে, প্রকৃতপক্ষে মুজিবের নামের অপমান করতে চায় তা যে কেউ সহজেই বুঝতে পারবে। কারন এতে মুজিবকে গালি দেওয়ার সুযোগ তৈরী হয়।
জিয়া পন্থীরা মুজিব কে নিয়েও বাজে মন্তব্য করবে এতাই স্বভাবিক।
কিন্তু মুজিব এর সময়ে মুজিব যেমন জাতীয় নেতা ছিলেন, তেমনি জিয়ার সময়েও জিয়া জাতীয় নেতাই ছিলেন। আমরা আমাদের দেশ কে যেমন ভালোবাসি, সে দেশের জন্য যারা যতটুকু অবদান রেখেছেন তাকে ততটুকু সম্মান দিতে হবে। নইলে সে ভালোবাসার কোন মূল্য থাকবে না। কে কোন দলের ছিলেন তা আজ এত দিন পরে আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়।
আমরা জনগন একটি জিনিসই শুধু চিন্তা করা উচিৎ- দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে কিভাবে দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়া যায়। জাতীয় নেতাদের যোগ্য মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমেই আমরা দেশের সম্মান বৃদ্ধি করা যায়, তাদের কে গালাগালি করার মাধ্যমে নয়।
আমদের উচিৎ প্রত্যেক জাতীয় নেতাকে তার যোগ্য মর্যাদার আসনে বসিয়ে দেশ কে সম্মানিত করা। জাতীয় নেতাদের নাম নিয়ে কেউ যেন আমাদের বিভক্ত করতে না পারে সে জন্য সচেতন হওয়া।
তাদের নিয়ে বিতর্ক করা হলে তাদের ইমেজ এবং সাথেসাথে দেশের ইমেজও নষ্ট হয়।
আমি বিশ্বাস করি - সে জাতিই ধনী, যে জাতি তার যোগ্য সন্তানদের সম্মান দিতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।