সত্য অপ্রিয় হলেও সুন্দর
আইজকাও হাদিয়া পাওয়া গেল না মনটা খুবই খারাপ জুলহাসের। গালি গালাজ করলে গোনাহ হয় নাইলে মোকাদ্দেছ আলিরে কইস্যা একখান গালি সে দিয়া ফালাইতো, ব্যাটা দাওয়াত দিয়া খাওয়াইছস ঠিক আছে কিন্তু হাদিয়া দিবি না, মিলাদ পড়াইতে কষ্ট কি কম লাগে, দোয়া কি কম করছি? আর খাওন ডা কি দিল- সাদা ভাত আর দুই তিন টুকরা গোস্ত তাও মনে হয় বুড়া মুরগী জবাই করছিল, টাইনা ছিরন যায় না। আমি হইলাম গ্রামের মসজিদের ঈমাম আমার একটা সম্মান আছে না। সব ছোট লোক। এইতো সেদিন সাত্তার সাহেবের বাসায় দাওয়াত দিছিল কি সম্মানডাই না করলো কয়েক পদের খাওন আর আসার সময় একশ টাকার একটা নোট ধরাই দিছিল, আসল ভদ্রলোক এরেই ক্য়।
বাড়ির পথে যাওয়ারসময় এসব কথাই মনে মনে ভাবছিল জুলহাস মুন্সি। চাঁদ হীন আকাশ তাই অন্ধকার টাও খুব গাঢ় ছিল, তারাদের ক্ষীন আলোতেই পথ চলতে হচ্ছে জুলহাসকে। মোকাদ্দেছের বাড়ি হতে জুলহাসের বাড়ি কিছুটা দুরে। জুলহাস সাধারনত রাত্রীবেলা একা দুরে কোথাও যায় না। রাইত বিরাইতে তার একলা কোথাও যাইতে ডর লাগে।
দুরে কোথাও দাওয়াত খেতে গেলে সাথে মুয়াজ্জিন হাসানকে নিয়ে যায় কিন্তু হাসান একটু অসুস্থ থাকায় আজ আসতে পারে নাই। মোকাদ্দেছ আলীকেও জুলহাস না করতে পারে নাই, না করলে এইসব ছোট লোকরা আবার দল পাকায়, বলে হুজুর খালি ধনী মাইনষ্যের বাড়িত দাওয়াত খাইতে যায় গরীব মাইনষ্যের বাড়িত দাওয়াত দিলে যায় না। বদমাইশের দল আর কারে কয়। কি আর করা এখন একলাই যাইতে হবে একজন সঙ্গী পাইলে অবশ্য ভাল হইত। এই দিকের রাস্তাটাও খুব নির্জন রাস্তার দুই পাশে ঝোপঝাড় এবং মাঝ খানে একটা বড় বট গাছও আছে, গ্রামের লোকে ক্য় বট গাছে নাকি ভুত-প্রেত আছে অনেকেই নাকি স্বচক্ষে দেখছেও।
ভুত-প্রেত আবার কি হ্যা?ভুত-প্রেত বইলা কোন জিনিস কোরানে আছে? তবে জ্বীন আছে, জ্বীনদের নিয়া একটা সূরাও আছে কোরানে তেনারা কোহ্কাফের বাসিন্দা তবে মাঝে মাঝে পৃথিবীতেও ঘুরতে আসে। এদের মধ্যে আবার কিছু বদ জ্বীন ও আছে যারা কোন সুন্দরী মেয়েছেলে দেখলে তাহাদের উপর আছর করে। আবার কিছু কিছু জ্বীন আছে যারা হুদা হুদাই মাইনষ্যেরে ভয় দেহায় ক্ষতি করে। জ্বীনের কথা ভাবতেই জুলহাসের কেন জানি একটু ভয় ভয় করতে লাগল। ইস্ কেনো যে এইপথে একলা আইলাম ভাইবা জুলহাসের রাগ লাগছিলো খুব।
আয়াতুল কুরসী পইড়া বুকে ফু দিলে মনে সাহস আসে, জুলহাস আয়াতুল কুরসী পইড়া বুকে তিন বার ফু দিয়া আবার চলা শুরু করে কিন্তু তাহার সাহস যে একটুও বাড়ে নাই বরং আরো কমে গেছে তা সে ঠিকই টের পাইতে ছিল। যদিও তার বুক কিছুটা দুরু দুরু করিতে ছিল তবু সে তার হাটার গতি বাড়াইয়া দিল, যত তাড়াতাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া যায় ততই মঙ্গল। সে আশে পাশে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা হাটছিলো হঠাৎ সে দেখল তার কিছুটা সামনেই পথের মধ্যিখানে মানুষের মতই আকৃতি তবে দেখতে কিছুটা জবরজং, সাইজে প্রায় চারফুট কিছু একটা দাড়াইয়া আছে। দেখিয়া জুলহাসের বুকের মধ্যে তার হৃদপিন্ডটা তুমুল বেগে লাফাইয়া উঠিল এবং সে মুর্তির মত স্থির হইয়া গেল যেনবা সে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হইয়াছে নড়া চড়া করার শক্তিও তাহার কিছু সময়ের জন্য লোপ পাইয়া গিয়াছিল। খিচ্চা দৌড় দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা হওয়া সত্যেও তীব্র ভয়ের কারনে তার পা দ্বয় হ্যাং হইয়া গিয়াছিল।
এমত ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পরিয়াও জুলহাসের বুদ্ধি কিন্তু একেবারে লোপ পায় নাই যেজন্য সে আয়াতুল কুরসী সঠিক ভাবেই আওড়াইয়া যাইতে ছিল যদিও তাহার কন্ঠ প্রচন্ড কম্পিত ছিল। জবরজং প্রানীটি আস্তে আস্তে জুলহাসের দিকে আগাইতে ছিল । কিছুটা কাছে আশার পর জুলহাস দেখিল প্রানীটির দুইপাশে দুইটা হাতের মত অঙ্গ রহিয়াছে এবং মনে হইল নাকের ডগায় শুরের মত কোন অঙ্গও আছে দেখিতে একেবারে কিম্ভুতকিমাকার। এইটা জ্বিন না হইয়া যায় না, জুলহাস ভাবিতেছিল। হঠাৎ প্রানীটি মানুষের ভাষায় কথা বলিয়া উঠিল- হে পৃথিবীর সব চেয়ে বুদ্ধিমান প্রানী মানুষ, সুদুর অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্র পুঞ্জের গ্রহ কাইকানের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি।
জুলহাসের কাছে কন্ঠ টা কেমন জানি লাগিল রেডিও টিভির ভেতর থেকে কথা আসলে যেমন লাগে আরকি। জুলহাস আর পারিল না হঠাৎ তার পা দুইটাও সচল হইয়া গেল (আয়াতুল কুরসী পাঠ করার কারনে হয়তো) এবং জুলহাস জ্বি..জ্বি..জ্বিন বলিয়া চিৎকার দিয়া খিচ্চা দৌড় লাগাইল।
কাইকান বাসি প্রানীটার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কত কষ্ট করেই না সে এসেছিল পৃথিবী নামক গ্রহটিতে এই গ্রহের সব চেয়ে বুদ্ধিমান প্রানীর সাথে ভাবের আদান প্রদান করার জন্য মাত্র এক ঘন্টা সময় পেয়েছিল সে কিন্তু কোন লাভ হল ন। মানুষরা একদমই মিশুক প্রকৃতির না কেমন যানি ভীতু ভীতু টাইপ।
বুদ্ধিমান প্রানিরা কি এমন হ্য়! তাকে এক্ষুনি ফিরে যেতে হবে। সে আবার আসবে পৃথিবীর হিসাবে আবার এক হাজার বছর পর তখন হয়তো মানুষরা আরো সাহসী হবে তার সাথে কথাও বলবে।
পরের দিন মসজিদে সমবেত মুসুল্লীদের উদ্দেশ্যে জুলহাস মুন্সী তার জ্বীনের সাথে সাক্ষাতের বর্ননা দিচ্ছিল- ভাইয়েরা কাইল এক বিরাট ঘটনা ঘটছে। কি ঘটনা হুজুর? আর কইয়্যেন না কাইল মোকাদ্দেছ ভাইয়ের বাড়িত থিকা আসার সময় রাস্তায় এক বদ জ্বীন আমার পথ আটকাই ছিল আমিত একটুও ডড়াই নাই, আমি কইলাম জ্বীন আমার পথ ছাড় জ্বীন কয় ছাড়ুম না আমিও কম যাই না দিলাম এসমে আজম টান জ্বীনতো বাপ কইয়া দে দৌড় হা হা হা। জুলহাস হুজুর হাসে আর জনতা তার মুখের দিকে আশ্চর্য হইয়া তাকাইয়া থাকে কি কামেল লোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।