_________________সেলাই গাছের কারখানা _______________________________________
ঈশ্বরকে বেঁধেছি ঋণে, আজকের দিনে
সৈয়দ আফসার
আমার দৃষ্টি কি প্রাণরক্ষা পাবে না? কোনো কালে…! থেমে গেলে কি যে হয়; আমার দৃষ্টি একটু একটু করে দাঁড়াতে শিখেছে উঁচুটিলায়; নিঝুম পাহাড়ের চূড়ায়। রোদের উপর দাঁড়িয়েছি আমি…। তোমার দৃষ্টি দাঁড়িয়েছে জামার বুকে!‘আজ অনুগ্রহ করো’ দৃষ্টি বন্দনায় দাঁড়াতে ভয় জাগে। আকষর্ণই মনের দিকে হাঁটে; কেউ কি এভাবে সঙ্গহীন ছেলেবেলাকে ধরে রাখতে পেরেছে; বন্ধুর ছলে? আমাকে কি নেবে? মমসুধা, আলপিনে গেঁথে। কথা যত আছে খুলে রাখা খুবই সহজ নির্ধারিত তাপাঙ্কচাপায় কিংবা বীণার তারে।
যদি কারো ভরদৃষ্টি আমার নাকদেখে,মুখচুষে, গালঢলে,চিবুকে হাত রেখে ঠোঁটের উপরে জমায় উত্তেজিত তাপ; যদি চোখের অশ্রুসাঁকোর ঘ্রাণে স্থির থাকে দেহের আভাষ। সর্বদা আমি কেবলি জমিয়ে রাখি প্রত্নহাড়ে মিশে থাকা; আমার প্রস্তুতি।
নির্বাকচোখ মুগ্ধ হতে হতে খেয়ে ফেলতে পারে লজ্জাবীজ— সৃতরাং লজ্জায় তছনছ হয়ে যাওয়া তোমার জামার ভেতর লুকিয়ে রাখা বিন্দু-বিন্দু ঘাম; ঘামে কি টের পাও কুসুমগরম জলের কথা; মোহনীয় টানে রূপমাদকে আটকা পড়ে দেহপ্রকৃতি; ঠোঁটের জলখেলা আর কদ্দিন নিজ আয়ত্তে ধরে রাখা যায়? দেহ গলে গলে জল হয়; জল গলে গলে কম্পাংঙ্ক বাড়ে; বাড়ে না পতন-কৌতূহল। নিয়ম চক্রের চিকিৎসা হয় না; নিজের সাথেও মিশা হয় না অর্ধেক দিন; তবুও সমবয়স আর ক্ষতচিহ্নরা আলাদা হতে চায়; আকাঙক্ষা অসমাপ্ত রেখে দশহাত তফাৎ-এ সেও দাঁড়ায়। কারো করুণায় মনোকষ্ট বাড়ে; শোকপাখির মতো কষ্টকথা ভালো বুঝে ‘সন্ধ্যাভাষা’য়; সন্ধ্যা ঘনালে সেও সংক্ষিপ্ত সম্পর্কে বেঁধে আমাকে তাড়িত করো চুম্বনের দিকে…।
নাকটিও উড়াল হাওয়ার মাঝে লাফালাফি করে; বিন্দু থেকে বিন্দুতে ঘনিভূত হয়; পূর্ণতা খুঁজে…।
বিভিন্ন কারণে জীবনকথা বিহ্বল করে। বুকের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে কথা। কথাই আমাকে শুনায় কবিতা। হাসির শব্দরা অপরূপকথায় মিশে, কোথায় যে লুকায়! তাই— এই অন্ধকারের ভেতর নিজেকে খুঁজি; খুঁজি নিছককথা প্রাণকৃষ্ণভ্রমর… চেষ্টায় যতই আশার অবয়ব খুঁজি; ক্রমশই নিজেকে হারাই।
হারাই অপেক্ষা; অধিক আগ্রহের মতো দ্বিধাতুর সকল কাহিনী; যেন আমাদের আবছায়ায়…। মার্চমাস আমার প্রিয়। বছর ঘুরে মার্চমাস এলেই শ্বাসের সবিস্তারে একত্রিশ রকমের ঘ্রাণ পাই, কিছুশ্বাস চাখি; মোমবাতিও জ্বালিয়ে রাখি; কোন কোনো শ্বাসে নিজের অস্তিত্ব খুঁজি; কিছু শ্বাসকে অইচ্ছায় হত্যা করি; কিছু শ্বাস ফাঁসিতে ঝুলাই। তবে কি মার্চমাসে আমার ধ্বংস অনিবার্য?… না-কি বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়?
উত্তাল মার্চের গল্পকথা আমার বেশি প্রিয়। কয়েকটি দিন বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে দাঁড়ায়।
যেমন ২রা মার্চ। স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন দিন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লাল সবুজ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমেই স্বাধীনতার বীজ রোপন হয়। আর ৭ই মার্চ বাঙালি হিসাবে আমাদের গৌরবের দিন। এই দিনেই বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিকে স্বাধীন দেশের স্বপ্নে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
অনুপ্রাণিত করেছিল যুদ্ধের প্রস্তুতি। এযুদ্ধ ছিল মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য, এযুদ্ধ হয়েছে একটি পতাকার জন্য, এযুদ্ধ একটি মানচিত্রের জন্য, যুদ্ধ একটি জাতীয় সঙ্গিতের জন্য। ৭১-এর অগ্নিঝরা ৭ই মার্চে তাঁর দরাজকন্ঠের ভাষণ স্বচোখে দেখা কিংবা শোনার ভাগ্য হয়নি আমার জন্ম তারও প্রায় একযুগ পরে। যখন বুঝতে শিখেছি; পড়তে শিখেছি; জানতে চেয়েছি— আমার দুভাগ্য আমাকে ভুল ইতিহাস পাঠ করতে হয়েছিল। এখন পাঠ্য বই ব্যতিত নিজেই ইতিহাস জানতে শিখেছি; তবে এই ভাষণের আওয়াজ যেভাবেই আমার কর্ণে স্পর্শ করে; যেস্থানেই শুনি, আমি দাঁড়িয়ে যাই।
শ্বাসগুলো এখানে জমে যায়। প্রতিটি রক্তকণিকায় রক্তচাপ বাড়ার শব্দ শুনি। যখন কানে বাজে— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ ‘জয় বাংলা’। বাংলাকে মুক্তি করায় প্রত্যয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি শুনলে আমার মনে যে প্রশ্নটি বারবার উঁকি দেয়; কোনো বঙ্গবন্ধু আগে বললেন— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ তিনি বাংলাকে শোষণদের হাত থেকে আমাদের অর্থনীতির মুক্তি চেয়েছেন। সংখ্যাঘনিষ্ট হবার পরও আমাদের শাসন করতে চায়, সে থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। তাঁর রাজনীতি ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুক্তির। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির, কৃষ্টির মুক্তির। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে; ত্রিশলক্ষ শহীদের রক্তেগড়া, আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভমহানির উপর দাঁড়ানো যে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি— কিন্তু আমরা কি আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির, কৃষ্টির স্বাধীনতা পেয়েছি? আবারও কি বাংলাদেশকে তার মুক্তির অধিকারের জন্য যুদ্ধ করতে হবে?... আমার কাছে কোন সুরাহা মিলে না।
৯ই মার্চ প্রিয়বন্ধুটির জন্মদিন। ১১ই মার্চে সে বধুবেশে পালকিও চড়েছে। নয় আর এগারো এই দুই দিনের মধ্যক্ষণই আমার কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখে। খুব গোপনে তাকে মনে পুষি, তনে পুষি, পুষি যতনে…। ৯ই মার্চ এলেই বছর গুনে মোমবাতি জ্বালাই; আর সে কথাই স্মরণ করি— ‘পৃথিবীর সবচে' অস্থির বস্তু কি?’ মনে মনে ভাবছিলাম প্রেমটেম নাকি তাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছি— তাহলে তুই বল স্বস্তি কি?... ‘কাল যে কথা কাটাকাটি হল; তাতেই আমার স্বস্তি জাগে।
আর আমাকে সারাক্ষণ অস্থির রাখে কবর! প্রতিটিক্ষণেই আমাকে ডাকে প্রিয়বন্ধুর সুরে। আমি দূর পাহাড়ের ছায়া হবো; ছায়ার ভেতর মায়া জমবে; স্নান করবো, পান করবো, পবিত্র হবো; কোনটির পূর্ণতায় পবিত্রতা আসে? জানার আগ্রহ আমার; চোখের গভীরে জন্মাবে কী? অভিমানীসুর। সারাক্ষণ অস্থির রাখে প্রিয় অন্ধকার; অপরিচিত কবর…
২১শে মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস। নিজের জন্মদিনও একই দিনে। এইদিনে ঈশ্বরকে বেঁধেছি ঋণে।
মাথানত মায়ের চরণে…। জীবনানন্দ ঘাস হয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন; বিনয় তো মানুষের মাঝে ভালোবাসা খুঁজেছেন। আমি কি হতে পারলাম?— আমাকে মানুষ রূপে পাঠালে কেনো? মানুষ রূপে এসে আমি কি মানুষকে কিছু দিতে পেরেছি? আমি কি মানুষকে পাঠ করতে শিখেছি; আমাকে মাটি বানিয়ে পাঠালেই বোধ করি ভালো হত। মানুষের পায়ে পিষ্ঠ হতে পারতাম। আমাকে ফুল করে পাঠালে কী-বা ক্ষতি ছিল… সৌরভে চারদিকে ছড়িয়ে তাকতাম প্রাণীকোল আমাকে পাশাপাশি রাখতো।
আমাকে মিষ্টি ফলের ভীড়ে রাখলে তৃপ্ত হতাম। গাছ হলে ছায়া জড়িয়ে মিশে থাকতাম মাটিতে শোয়ে। পাতা হলে নড়েচড়ে উঠতাম ডালে ডালে। আমাকে তুমি বইপত্তর বানিয়ে পাঠাতে পারতে কিংবা কলমের কালি— বই হলে বইয়ের পৃষ্টা পাল্টাতে- পাল্টাতে আমাকে পাঠ করা হত; উপলব্দি করতো দীর্ঘশ্বাস। লিখা হত অনেক জানা যেত কতকিছু… কলম হলে লিখতো অনেক… যেমন সমাজের বৈষম্য যত বিভেদ, জাতপাত।
মানুষ রূপে এসে নিজের কাছে অসহায়ত্ব খুঁজি। ভাবি— হলাম কি-না বিষম অপরাধী; পাখি হলে ডানা ভরে উড়ে যেতাম; পেতাম না গাড়ির কালো ধোঁয়া,হর্ণ,শব্দদূষণ। ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার, বাস্তুহারা মানুষের আর্তনাদ আমার কান্না জাগাত না। আমাকে দুধধান বানিয়ে পাঠালে ভালো হত খুব— অন্ততঃ ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের অন্ন হতাম। তাদের পেটের ভেতর বসে বসে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতাম।
প্রাণ দিয়েছো বলে প্রাণীই হলাম; আর মনের ভেতর পেলাম মানুষের বসবাস! মন আর প্রাণ দিয়েছো বলে আমার জিজ্ঞাসাও দিনদিন দানাবাঁধছে; অনেক কথা বুকে জমিয়ে রাখছি— বলার সাহসও দিনদিন বাড়ছে; নিজেকে জানার ইচ্ছাও প্রবল থেকে প্রবলতর হতে হতে নিজেকে ভাঙছি। আমি তো জলের ছায়া হতে পারতাম; কেনো আমাকে জল বানালে না কি অপরাধ ছিল আমার? বানাতে তো পারতে আমাকে রাতের অন্ধকার তৃষ্ণার্তরা আমাকে পান করে তৃপ্তি পেত। আর অন্ধকার রাত্রির পাশে বসে কেউ হয়ত কথা বলতো ব্যর্থ প্রেমিকার। অন্ধকারের ভেতর প্রেমিকার স্মৃতি রোমন্থর করে ডুবে যেতে পারতো…। তুমি আমাকে ধুলো বানাতে পারতে; পথিকের পায়ে পায়ে হেঁটে যেতাম দীর্ঘ পথ; বানাতে পারতে চোখের পাতায় জমে থাকা নোনাজলটুকু…।
২৬শে মার্চ এলে আমি নতুন প্রত্যয়ে নিজেকে খুঁজি…
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।