আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালো মেয়ে, জনৈক ফেসবুক সেলিব্রেটি ও একটি দেখা করার গল্প

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! এক দেশে ছিল এক কালো মেয়ে। কালো মেয়ের মন সবসময় খারাপ থাকত। কারণ তার মা সবসময় তাকে খোঁটা দিত। সেই খোঁটার ভাষাও খুব একটা ভদ্রোচিত নয়। যেমন, "যে কালির কালি তোরে তো মেথরও বিয়া করব না" বা "তুই তো সারাজীবন বাপের ঘাড়ে চইড়া খাইবি কামলাও তোরে বিয়া করব না" ইত্যাদি।

শুধু যে মায়ের গালি শুনে তার দিন চলে যেত তা কিন্তু নয়। তার বাবাও মাঝে মাঝে তার সামান্য সম্পত্তির ঠিক কত অংশ তার কালো মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে যৌতুক হিসেবে চলে যাবে তার হিসাব করতেন। কালো মেয়ের ভাইরাও তাকে ভালো চোখে দেখত না। ক্লাসের মেয়েরাও না। কেউ তার সাথে যেচে পড়ে কথা বলত না।

অন্য মেয়েদেরকে ছেলেরা রাস্তার মধ্যে টার্গেট করে ইভটিজিং করত, তার দিকে কেউ ফিরেও তাকাত না। এতে কালো মেয়ের মন আরও অনেক অনেক বেশি খারাপ হতে লাগল প্রতিদিনই। কালো মেয়ে মন ভালো করার জন্য ফেসবুকে বসে থাকত। নিজের কোন ছবি দেবার সাহস কোনদিনও হয় নি তার। একবার বান্ধবীদের সাথে পুরনো একটা ছবি আরেকজনের ওয়াল থেকে পোস্ট দেয়া হয়েছিল, কালো মেয়েটির চোখে পানি চলে এসেছিল যখন একাধিক ছেলে ঐ পোস্টে তাকে দেখিয়ে "এই কাজের মেয়ে তোদের সাথে ক্যান?" টাইপ কমেন্ট করেছিল।

আর ঠিক এভাবেই, ফেসবুকে ঘুরতে ঘুরতে কালো মেয়েটির পরিচয় হল জনৈক ফেসবুক সেলিব্রেটির সাথে। সেলিব্রেটি মানুষটি একজন লেখক। নাম তার বালেহ তিয়াস। ছোটগল্প আর অনুকাব্য খুব চমৎকার করে লিখতে পারেন তিনি। তার লেখা প্রায়শই কাঁদিয়ে দেয় অজস্র পাঠক পাঠিকাকে।

একেকটা স্ট্যাটাস দেবার পর মেয়েরা লাইন ধরে তার ওয়ালে আর ইনবক্সে কান্নাকাটি শুরু করে। এসব দেখে অন্যান্য সেলিব্রেটিরা হিংসায় গুমরে মরে। বালেহ তিয়াসের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উনি কখনও নিজের ছবি আপলোড দেন না। হাজার হাজার পাঠিকা এ পর্যন্ত তার নাম্বার চাইলেও তিনি কাউকে কখনও তার নাম্বার দেন নি। নিভৃতচারী হয়ে থাকাটাই তার কাছে পরম আনন্দের।

আর এজন্যেই তার চারপাশে গড়ে তোলা রহস্যময় কাঁচের দেয়ালের অস্বচ্ছতায় আকৃষ্ট হয়ে পাঠক পাঠিকা তার দিকে ছুটে আসে পঙ্গপালের মত। কালো মেয়েটি বালেহ তিয়াসকে মেসেজ পাঠায়। নিজের চেহারার ছবি পাঠায়। বলে ফেলে অকপটে জীবনেও সব দুঃখকষ্টের কথা। হতে চায় তার ভার্চুয়াল বন্ধু।

কালো মেয়েটি স্বপ্নেও কখনও ভাবে নি, বালেহ তিয়াস তার মেসেজের রিপ্লাই দেবেন। কিন্তু তিনি দিলেন। কালো মেয়ে অবাক হয়ে গেল। তার মনে হয়, তার স্বপ্নের রাজকুমার মনে হয় এ-ই। কিন্তু পরক্ষণেই মাথা থেকে এই চিন্তা দূর করে দেয় কালো মেয়ে।

ধ্যাত, এত এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে যার জন্য পাগল, যার একটা কথায় জীবন দিয়ে দিতে পারে হাজার হাজার মেয়ে, সে কেন আমায় কামনা করবে? না না এ আমার বিভ্রম, বড় সুখের বিভ্রম। কালো মেয়ে নিজেই বুঝতে পারে না কখন সে বলে ফেলেছে, "আপনার সাথে দেখা করতে চাই"। অবাক কাণ্ড। বালেহ তিয়াস মেসেজের রিপ্লাই দেন। হ্যাঁ, তিনি দেখা করবেন।

কালো মেয়েটি আনন্দে নেচে ওঠে। দি গ্রেট বালেহ তিয়াস, যার এত এত সুন্দরী ফ্যান তিনি সবাইকে বাদ দিয়ে আমার সাথে দেখা করবেন। কালো মেয়ের আনন্দ বাঁধ মানে না। বালেহ তিয়াস বলেন, তিনি নীল শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে আসবেন। মেয়েটি বলে, সে সাদা সালোয়ার আর বাদামী জামা পরে যাবে।

অবশেষে আসে কাঙ্ক্ষিত দিন। কালো মেয়েটি অনেক সেজেগুজে নির্দিষ্ট জায়গায় যায়। জীবনে সে একটা মানুষকেই ভালবেসেছে, সে বালেহ তিয়াস। জীবনে সে একটা মানুষেরই ভালোবাসা পেয়েছে, হোক তা করুণা মিশ্রিত ভালোবাসা, সে বালেহ তিয়াস। মেয়েটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।

অবশেষে কেউ একজন আসে। পরনে তার নীল জামা। নিচে কালো সালোয়ার। একটা মেয়ে। ছোট।

খাট। কালো। মুখে তার সাদা সাদা ছোপ। সম্ভবত কোন রোগের ফলাফল। বয়স, হবে আনুমানিক পঁচিশ থেকে ত্রিশ।

চেহারা বৈশিষ্ট্যহীন। অসুস্থ। অপুষ্ট। অসুখী। কালো মেয়েটা কেঁদে ফেলে।

বিধাতার সৃষ্ট সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে কান্না অন্যতম, তাই মুখে ছোপ ছোপ ওয়ালা মেয়েটাও কেঁদে ফেলে। ওদের কান্না দেখে লজ্জা পায় আকাশ। আর ঠিক সেই সময় হয়তো কোন আত্মগর্বে গরবিনী ফর্সা কিউট মেয়ে বালেহ তিয়াসকে ইনবক্স করে, "ভাইয়া, দেখা করবেন? আপনার সাথে দেখা করার আমার অনেক দিনের শখ"। (গল্পের নায়িকার মতই এক অসুন্দর কালো মেয়ে এতদিন বালেহ তিয়াস সেজে ফেসবুকে লেখালেখি করে বিখ্যাত হয়েছে, এটাই গল্পের মূল কাহিনী। গুণ থাকলে বিখ্যাত হওয়া খুব সহজেই সম্ভব, কিন্তু গুণী লোকও নিজের চেহারা খারাপজনিত হতাশা থেকে দূরে থাকতে পারে না, এইটাই গল্পের মূল মরাল।

আর কিছু না। সবাইকে ধন্যবাদ। ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.