এক্সট্রা এনার্জি এক্সচেঞ্জার
ধূসর নয়, এবার পরে এলেন গাঢ় কালো স্যুট। শোক, নাকি প্রতিবাদের প্রতীক? দুটোই! পরশু বুয়েনস এইরেসের এজেইজায় যে সংবাদ সম্মেলনে এলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, তার প্রতিটি পরতে মিশে থাকল আর্জেন্টিনার ফুটবলের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের শোক। মিশে থাকল ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ। বিশ্বাসঘাতকতা? ম্যারাডোনা অভিযোগ করেছেন এমনই। আর সেই অভিযোগের আঙুল আর্জেন্টিনার সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া কোচ তুলেছেন খোদ হুলিও গ্রন্দোনা আর কার্লোস বিলার্দোর দিকে।
গ্রন্দোনা আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার (এএফএ) প্রধান। আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী কোচ বিলার্দোকে এই দলের মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও সাবেক গুরুর সঙ্গে ম্যারাডোনার জুটিটা এবার জমেনি। এই দুজনই তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন—অভিযোগ করলেন ম্যারাডোনা, ‘গ্রন্দোনা আমার কাছে মিথ্যা বলেছেন, বিলার্দো করেছেন বিশ্বাসঘাতকতা। ’ আবেগ জড়ানো কণ্ঠে এর পর দিলেন ব্যাখ্যা, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে আমরা ছিটকে যাওয়ার পর গ্রন্দোনা সেদিন ড্রেসিংরুমে এসেছিলেন।
খেলোয়াড় এবং বাকি যারা ছিল সবাইকে সাক্ষী রেখে বলেছিলেন তিনি আমার কাজে খুবই খুশি। তিনি চান, আমি যেন দায়িত্বটা অব্যাহত রাখি। ’
সেই গ্রন্দোনাকেই এর পর থেকে বদলে যেতে দেখলেন ম্যারাডোনা, ‘আর্জেন্টিনায় আমরা ফিরে আসার পর থেকে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করল। গত সোমবার আমি গ্রন্দোনার সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বললেন, তিনি চান, আমি কাজটা চালিয়ে চাই।
কিন্তু আমার সাতজন টেকনিক্যাল স্টাফকে পাল্টাতে হবে। এ কথা বলার মানেই তো তিনি চান না আমি কাজটা চালিয়ে যাই। ’
ম্যারাডোনার কথায় যুক্তি আছে অবশ্যই। ফুটবলে কোচই সর্বেসর্বা। সহকারী কে হবেন না হবেন, এটা বেছে নেওয়ার কর্তৃত্ব কোচের একারই থাকে।
পছন্দের সহকারীদের নিয়ে কাজ করেন বিশ্বের সব পেশাদার কোচই। সেখানে সাতজন সহকারী সরিয়ে দেওয়া মানে একজন কোচকে পঙ্গু করে ফেলা। ‘তিনি ভালো করেই জানেন, এই সহকারীদের ছাড়া আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়’—গ্রন্দোনার ওপর ম্যারাডোনার রাগটা এ কারণেই।
এরপর বিলার্দোর দিকে আঙুল তুলেছেন ম্যারাডোনা। গত বিশ্বকাপে প্রায় ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে থাকা বিলার্দো নাকি তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন, ‘আমরা যখন সবাই (পরাজয়ের পর) শোকে আচ্ছন্ন, বিলার্দো তখন আড়ালে বসে কলকাঠি নাড়ছিলেন কীভাবে আমাকে ছাঁটাই করা যায় সেই পথ খুঁজতে।
’
কোচ হিসেবে তাঁর সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। তবে ম্যারাডোনা দাবি করছেন, শতভাগ নিংড়ে দিয়েছেন এই দলটার জন্য। এমন এক সময় দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যখন বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনা ছিল সংকটে। সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন তিনিই, ‘যখন দায়িত্ব নিলাম, দলটা ছিল অন্তর্গত সমস্যায় জর্জরিত, বিচ্ছিন্ন আর বিভক্ত। তারা আমাকে বলল এই দলটাকে জাগিয়ে তুলতে।
আমরা সেটাই করলাম। আমি সবকিছু উজাড় করে দিলাম। ’
সবশেষে তাঁর অভিযোগটা আরও গুরুতর, ‘রাজনীতির ছলাকলা আসলে সব জায়গাতেই আছে। এমন অনেকেই আছে যারা আর্জেন্টিনার ফুটবলের ভালো চায় না। তারা শুধু নিজেদের ভালোটা নিয়েই মগ্ন।
’
এই বিস্ফোরক মন্তব্য হয়তো গ্রন্দোনার রাজত্বে ম্যারাডোনাকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা (অবাঞ্ছিত)’ করে তুলল! (এএফপি ও রয়টার্স )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।