কয়েক বছর আগেও রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক দেশের অন্যতম দৃষ্টান্তমূলক বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত ছিল। নিয়মমাফিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ভালো মুনাফা করে আসছিল ব্যাংকটি। কিন্তু মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে কিছু রদবদল করা হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় ব্যাংকটির বিপর্যয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সমর্থন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্লিপ্ততায় বেসিক ব্যাংক পরিণত হয় মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠীর লুটপাট আর দুর্নীতির আখড়ায়।
সম্প্রতি প্রথম আলোসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া প্রতিবেদনে এই ব্যাংকের সামগ্রিক অবস্থার যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকসহ দেশের গোটা আর্থিক খাত যখন বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে, তখন বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম-লুটপাটের চিত্র প্রকাশ পাওয়ার মধ্য দিয়ে এটাই প্রতীয়মান হয় যে অনেকটা পরিকল্পনামাফিক রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে নিঃস্ব করা হচ্ছে।
বেসিক ব্যাংকের অনিয়মের ফিরিস্তি দীর্ঘ। সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ও যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়া এক বছরের কম সময়ে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। অযোগ্য লোক ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ পেয়েছেন।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নির্বিচারে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ আমানত রাখা হয়েছে। আর এই আমানত জোগানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার প্রভাব খাটানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে ও বিশেষ পরিদর্শক দলকে সরেজমিনে পাঠিয়ে এমন গুরুতর সব অনিয়ম-দুর্নীতি উদ্ঘাটন করেছে।
প্রধান কার্যালয়ের ঋণ কমিটি নেতিবাচক মত দেওয়ার পরও পর্ষদ কোটি কোটি টাকার অনিয়মের ঋণ অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদ কর্তৃক এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না।
’ আরও বলেছে, ‘ঋণের অর্থ পরিশোধিত হবে না জেনেও ঋণ প্রদান করা হচ্ছে এবং এ ধরনের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে পর্ষদ কর্তৃক আমানতকারীদের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। ’
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৬ ও ৪৭ ধারায় যেসব গুরুতর অভিযোগে কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ ও সরকার মালিকানাধীন ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করার বিধান রাখা হয়েছে, এগুলো হলো সেই ধরনের গুরুতর অনিয়ম। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের আমানত রক্ষায় আইনি দায়িত্ব পালন করছে না। তবে বেসিক ব্যাংককে দিয়ে অতিসম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। এতে কোনো সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
বেসিক ব্যাংক রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক হওয়ায় মালিক হিসেবে সরকারেরও করণীয় আছে। সরকারের উচিত অতি দ্রুত আমানত রক্ষা ও ঋণশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।