আগামী অক্টোবর পর্যন্ত সবকিছু সইবে, এর পরই শেষ আঘাত হানবে বিএনপি। হরতালের পর হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ যত রকমের কর্মসূচি আছে তার সব তীরই ছুড়বে তারা। ঘোষণা করা হবে অসহযোগ কর্মসূচি। সরকারকে কোনো ক্ষেত্রে কোনো রকমের সহযোগিতা না করার আহ্বান জানাবে সর্বস্তরের মানুষের প্রতি। এর আগে সরকারের পাতানো কোনো ফাঁদে পা দেবে না বিরোধী দল।
এমনকি রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাব দিলেও নাকচ করা হবে। কারণ বিরোধী দলের মতে, রাষ্ট্রপতি এবং স্পিকার দুজনই আওয়ামী লীগ মনোনীত।
বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলের শেষ দিন ২৮ অক্টোবরের আগের রাতেই সারা দেশে রুদ্রমূর্তি নিয়ে নেমেছিল আওয়ামী লীগ। ঢাকায় শুধু জনতার ঢলই নামেনি, লগি-বৈঠার লড়াইয়েও পল্টন রক্তাক্ত হয়েছিল। বিচারপতি কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধী দলের আপত্তির মুখে বিব্রত হয়ে সরে দাঁড়ান।
আন্দোলন থামেনি। বিএনপি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মরহুম ইয়াজউদ্দিনকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করেছিল। পরে একদলীয় নির্বাচনের পথে সব কোলাহল বন্ধ হয় ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আগমনে। সাংবিধানিকভাবেই সেদিন খালেদা জিয়ার সরকারের বিদায় ঘটে। আর আন্দোলনের মুখে অচল দেশে প্রশাসন হয়ে পরে নিষ্ক্রিয়।
এবারও ২৫ অক্টোবর সংসদের মেয়াদ শেষ। তবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত শেখ হাসিনাই থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। কিন্তু বিএনপি হাইকমান্ড মনে করছে জনমত সরকারের বিরুদ্ধে। প্রশাসনও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে অক্টোবরের পরেই আঘাতটা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অক্টোবর পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও বিএনপি জোট নেতারা সারা দেশে জনগণকে প্রস্তুত করবেন। সম্পৃক্ত করবেন। অক্টোবরের পর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত সব রকমের ধৈর্যের পরিচয় দেবে বিরোধী দল। সরকারের পক্ষ থেকে নৈরাজ্য সৃষ্টি কিংবা ধ্বংসাত্দক আন্দোলন কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য যত রকমের উসকানিই দেওয়া হোক না কেন, পারতপক্ষে হরতালের মতো বড় রকমের কোনো কর্মসূচিতে যাবে না।
বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত 'সবাইকে নিয়ে নতুন ধারার সরকার গঠন করার অঙ্গীকার'-সংক্রান্ত বক্তৃতার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সব রকমের প্রতিহিংসা, নৈরাজ্য আর ধ্বংসাত্দক কর্মসূচি পরিহারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হবে। পাশাপাশি সংগঠনকে চাঙ্গা করার মাধ্যমে নির্বাচন ও আন্দোলনের শেষ প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া বিদেশি বন্ধুরা, বিশেষ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে যেসব দেশের বিনিয়োগ রয়েছে তারা তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তার খাতিরে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের জন্য বিরোধী দলকে অনুরোধ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সম্পর্কে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করবে তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিতে। কিন্তু বিএনপি সেই ভুল আর করবে না।
সরকারের ট্র্যাপে আর পা দেবে না। বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব এরই মধ্যে সরকার দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেগুলো আমাদের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আরও হয়তো চেষ্টা করবে দল ভাঙার, জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার, কিংবা জাতীয় পার্টিকে দিয়ে কিছু করানোর। কিন্তু এবার আর সে ধরনের কোনো পাতানো ফাঁদে আমরা যাচ্ছি না।
এ ছাড়া দেশের সর্বস্তরের জনগণ এখন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চায়। কাজেই দেশের মানুষের সঙ্গেও তো আমরা বেইমানি করতে পারি না। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে তাদের দল মনোনীত রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরোক্ষভাবে। কিন্তু তারা তো অওয়ামী লীগের বাইরের কেউ নন। এ ছাড়া যেই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে একদিন স্পিকার নিজে রুলিং দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সেই বিচারপতিকে প্রমোশন দিয়েছেন তিনি।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক আরও বলেন, আন্দোলন আর নির্বাচন আলাদা কোনো বিষয় নয়। একটি আরেকটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি কোনো ধরনের প্রতিহিংসা-নৈরাজ্যে বিশ্বাস করে না। এ জন্য আমরা সরকারকে শেষ পর্যন্ত সময় দিতে চাই। এর মধ্যে সাংগঠনিক কাজকর্মসহ প্রস্তুতিটাও সম্পন্ন হয়ে যাবে।
চেয়ারপারসনের বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে সভা-সমাবেশসহ জনসংযোগ করবেন। এ ছাড়াও দেশব্যাপী সর্বস্তরের পেশাজীবীদেরও কাজে লাগানো হবে। তারাও জনসংযোগ করবেন এবং অন্ততপক্ষে মহানগর পর্যায়ে তারা একটি করে বৃহৎ আকারের সম্মেলন বা কনভেনশনের আয়োজন করবেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সব সময়ই আছে। অতএব নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি সব সময়ই অব্যাহত আছে। আগামী দুই মাস আন্দোলনের পাশাপাশি জনসংযোগসহ ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হবে। কেন্দ্র থেকে যারা তৃণমূলে যাবেন তাদেরও সম্যক ধারণা প্রদানের কাজ শেষ হয়েছে। আগামীতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে দুর্নীতি দমন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আর মানুষের ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের ওপর। বিশেষ করে আগামীতে বিএনপি সরকারে গেলে প্রথম তিন বছরে নতুন করে কমপক্ষে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বিদেশে।
সেপ্টেম্বরে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছে। সামনের ঈদের আগে দেশের ছয় বিভাগ এবং ঈদের পরে আরও দুটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবেন দলীয় চেয়ারপারসন। এর মধ্যে সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশ থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তিনি। তখন নৈতিকভাবে সরকারের আর কোনো শক্তি বা সমর্থন থাকবে না। তরিকুল ইসলাম দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেন, বিগত সাড়ে চার বছরের দুর্নীতি আর অপকর্মের কারণে সরকারের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেও সত্য কথা বললে মানুষ এর উল্টোটা বিশ্বাস করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসব সমাবেশে আগামীতে নির্বাচিত হলে সম্পূর্ণ এক 'নতুন ধারার' সরকার গঠনসহ অন্যান্য করণীয় কী হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে বর্তমান মহাজোট সরকারের ব্যর্থতা ও সীমাহীন দুর্নীতির কথা তুলে ধরার পাশাপাশি আগামীতে সরকারে গেলে বিএনপি কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করবে তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেবেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের সরকারের পার্থক্য কী হবে, সেসব বিষয় তুলে ধরবেন বেগম খালেদা জিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।