তাহলে কি সত্যিই আরব বসন্তের কবর রচিত হলো মিসরে? মাত্র বছর দুয়েক আগে গণবিক্ষোভের মুখে পতন হয়েছিল দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের। এরপর সুপ্রাচীন সভ্যতার দেশটির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়। কিন্তু স্থিতিশীলতা আসেনি। আদর্শিক মতদ্বৈততা আর কায়েমি স্বার্থবাদের সুযোগসন্ধানী তৎপরতা—এ দুইয়ের জেরে উৎখাত হয়েছেন ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। দেশ দুই ভাগে বিভক্ত।
নীল নদে বয়ে যাচ্ছে রক্তের নহর। দিগন্তে নেই সংকটের কোনো আশু সমাধানের লক্ষণ। হতাশ দেশবাসীর মনে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে দৃশ্যত মুক্তির পথে হোসনি মোবারক। অনেক মিসরীয়ই ভাবছেন, এই যদি হয়, তাহলে এত কষ্ট করে লৌহমানব মোবারককে উৎখাত করে কী লাভ হলো? পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মিসরের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ঐতিহাসিক তাহরির স্কয়ারের রক্তঝরা বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার আভাস সুস্পষ্ট। একই সঙ্গে সেনাশক্তির পুনরাবির্ভাব ও তা পোক্ত হওয়ার আশঙ্কাও জোরালো।
আরব বসন্তের জের ধরে ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের উৎখাতের পর প্রকৃত গণতন্ত্র, অর্থনীতিতে সবল যে নতুন দেশের স্বপ্ন মিসরের মানুষ দেখেছিল, সে আশার মৃত্যু ঘটেছে। অগণিত কর্মহীন বেকার যুবকের দেশ মিসরে এখন সর্বব্যাপী আশঙ্কা, দ্বিধাবিভক্ত জাতি দীর্ঘস্থায়ী এক গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কি না! অন্তত সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইসলামপন্থীদের চলমান সংঘাতের অবসান না হলে দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরবে না। সংঘাতময় মিসরে এখন প্রতিদিন যা ঘটছে, তা হচ্ছে সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসি ও তাঁর পৃষ্ঠপোষক ব্রাদারহুডের সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্মম দমন-পীড়ন। গত দুই সপ্তাহের সেনা অভিযান ও সহিংসতায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘ ও প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বানেও সেনাবাহিনী শান্ত হচ্ছে না।
প্রতিদিনই সেখানে ঝরছে রক্ত। মিসরের একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাতে বুঝি আর খুব বেশি দেরি নেই। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, অভিজ্ঞজন ও কূটনীতিকেরা বারবার হুঁশিয়ার করছেন, এ পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশটিতে অচিরেই ছড়িয়ে পড়বে গৃহযুদ্ধ। তবে মিসরের বিশ্লেষকেরা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁরা জানান, সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধিতা করা ব্রাদারহুড কখনো কার্যকর সশস্ত্র দলে পরিণত হতে পারবে না।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হাজেম এল বেবলাউয়ি এর মধ্যে জোর দিয়েই বলেছেন, দেশে গৃহযুদ্ধ বাধবে বলে মনে করেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাজেম জানান, সামনের দিনগুলোয় কিছু সমস্যা যে আসবে, তা তিনি অস্বীকার করেন না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কয়েকটি দেশের মতো গৃহযুদ্ধ লাগার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।