বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিদু্ৎ সংকট। এ সমস্যায় দেশের শিল্প কারখানা সহ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদুতের অভাবে যখন দেশের আপামর জনসাধারণের নাভিশ্বাস। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদপে যখন ফলপ্রসূ হচ্ছে না তখন গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানের তুষ দিয়ে উৎপাদিত বিদুতের ৮০% ই অব্যবহৃত থাকছে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম বায়োম্যাস গ্যাসিফিকেশন বিদুৎ প্লান্ট ড্রিম্স পাওয়ার লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ এক্সকিউটিভ অফিসার শেখ আসাদুজ্জামান মানিক দাবী করেন আগামী ৬ মাসের মধ্যেই গ্রাম বাংলার বিদুৎ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
উদ্ভাবক
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বিদুৎবিহীন বারিষাব ইউনিয়নের গিয়াসপুর গ্রামে নবায়নযোগ্য বিদুৎ প্ল্যান্ট বায়োম্যাস গ্যাসিফিকেশন সিস্টেম প্রবর্তনের প্রাণপুরুষ শেখ আসাদুজ্জামান মানিকের জন্ম। তিনি এই গ্রামের শেখ আঃ সাহিদ মাস্টারের ২য় ছেলে। বারিষাব হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৯০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে চমকপ্রদ ফলাফল করার পর তার পিতা-মাতাসহ অভিভাবকেরা চেয়েছিলেন তাকে ডাক্তার বানাতে। কিন্তু তার ইচ্ছাছিল চিত্র জগতের নায়ক হবার। ১৯৯২ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে।
সেখানে পড়াশুনাকালীন ১৯৯৬ সালে চিত্রজগতের নতুন মুখের সন্ধানের নায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন। কিন্তু পারিবারিক বাধা ও নানা প্রতিকূলতার কারণে সে ইচ্ছা সফলতা পায়নি। পরে ১৯৯৮ সালে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমাপ্ত করে গ্রামের বেকার যুবকদের সঙ্গে নিয়ে ড্রিম্স পোল্ট্রি নামে একটি পোল্ট্রি ফার্ম চালু করেন। বিদুৎ সমস্যার কারণে এ ব্যবসাও শতভাগ সফলতা না পেয়ে অবশেষে এ প্রত্যন্ত এলাকার বিদুৎ সমস্যার সমাধানের লক্ষে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিতে থাকেন। কিন্তু আশার আলো দেখতে না পেয়ে নবায়নযোগ্য বিদুৎ প্ল্যান্ট বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন ধানের তুষ থেকে গ্যাস উৎপাদন করে তা দিয়ে বিদুৎ উৎপাদনের কথা। ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাংকের হেড অফিস ওয়াশিংটন বাংলাদেশের বিদুৎ সমস্যার দূরীকরণ কল্পে বাংলাদেশ থেকে উদ্যোক্তা খুঁজতে ছিল। এ খবর পেয়ে কাপাসিয়ার স্বপ্ন বিলাশী মানিক সেখানে একজন উদ্যোক্তা হিসাবে আবেদন করেন। এ সময় তার সাথে পরিচয় ঘটে বাংলাদেশের পারমাণবিক কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড· আনোয়ার হোসেনের। তার ব্যপক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় এ কাজে মানিক আত্মনিয়োগ করেন।
তার সঙ্গে এ দেশের আরো নামিদামী ১২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে সেখান থেকে ৭টি আবেদন নির্বাচিত হয়। তার মধ্যে মানিকের অবস্থান ছিল ২য়। পরবর্তীকালে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মানিকের পারফরমেন্স দেখে বিশ্বব্যাংক এ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য মানিককেই বেছে নেয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক মনোনীত বিশেষজ্ঞদের সাথে প্রাথমিক পর্যায়ে এ প্ল্যান্টের পদ্ধতিগত কিছু মৌলিক বিষয়ে মতবিরোধ ঘটলে মানিক নিজের মতের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, এর অন্যথা হলে তিনি এ কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিবেন। তখন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা মানিকের কাছে তার মতের স্বপক্ষেযুক্তি ও প্রমাণ চান।
পরে মানিক তাদের সকল দিধাদন্ধ অবসান ঘটিয়ে নিজের মত করে বিশেষজ্ঞমুক্ত হয়ে এ প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুমতি লাভ করেন। মানিক তার ইচ্ছামত নিজ গ্রাম গিয়াসপুরে এ কার্জক্রম শুরু করে দীর্ঘ ৪ বছরের অকান্ত পরিশ্রম করে সফলভাবে সমাপ্ত করেন। অবশেষে ২০০৭ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তৎকালিন জ্বালানী, বিদুৎ ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তপন চৌধুরী ৪০০ কেভি এ মতা সম্পন্ন বায়োম্যাস প্রজেক্ট ড্রিম্স পাওয়ার লিঃ উদ্বোধন করেন।
উৎপাদন প্রক্রিয়া
বায়োম্যাস গ্যাসিফিকেশনের মাধ্যমে বিদুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া- শুকনো ধানের তুষকে অর্ধ পুড়িয়ে গ্যাস উৎপাদন করার পর গরম গ্যাসকে বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা করার জন্য ওয়াটার প্রুপ ট্যাংকির মধ্যে প্রবাহিত করে পর্যায়ক্রমে কাঠের শুকনো গুরোভর্তি ৪টি ফিল্টার অতিক্রম করিয়ে ফাইনাল ফিল্টার শতভাগ ঠান্ডা ও বিশুদ্ধ গ্যাসে পরিণত করা হয়। পরে একে ডিজেল ইঞ্জিনে প্রবাহিত করে বিদুৎ উৎপাদন করা হয়।
এখান থেকে প্রথমে মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডে যায় পরে তাকে পর্যায়ক্রমে ৪৪০v থেকে ২২০v লাইনে প্রবাহিত করে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সেচ প্রকল্প, আঁখ মাড়াই, পোল্ট্রি ফার্ম, মসলা উৎপাদন মেশিন, ডিশ লাইন, মোবাইল টাওয়ার সহ নানা ক্ষেত্রে সরবরাহ করা হয়।
আসাদুজ্জামান মানিকের দাবি
ড্রিম্স পাওয়ার লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শেখ আসাদুজ্জামান মানিক বলেন, বিশেষজ্ঞরা প্রথমে জানিয়ে ছিলেন এ স্টেশন থেকে মাত্র ২·৫ কিঃমিঃ এলাকা বিদুতায়িত করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে আশ পাশের ৭টি গ্রামের প্রায় ১৫ কিঃমিঃ এলাকায় প্রায় ৫০০ জন গ্রাহককে বিদুৎ সর্বোচ্চমানে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ স্টেশনের মোট উৎপাদন মতা ৪০০ কেভি হলেও মাত্র ৫২ কেভি উৎপাদিত বিদুৎ জনগণের ব্যবহারে আসছে। যা মোট উৎপাদনের ২০%।
বাকী ৮০% বিদুৎই অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন পুরো মাত্রায় এ স্টেশনটিকে সচল করে শতভাগ বিদুৎ ব্যবহারে না নিয়ে আসতে পারলে এ স্টেশন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের কিছু নীতিমালার পরিবর্তন। সরকার যদি জাতীয় গ্রেডে অথবা নিকটবর্তী ট্রান্সফরমারে পিক আওয়ারে বিদুৎ ঘাটতি পুরণের লক্ষে এখান থেকে মিটারের মাধ্যমে বিদুৎ সরবরাহ করে এবং অফপিক আওয়ারে সমপরিমাণ বিদুৎ ফেরৎ দিয়ে দেয় তবে সরকারও লাভবান হবে। পাশাপাশি এ প্ল্যান্টের বিদুৎ শতভাগ ব্যবহৃত হবে।
এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যকর হবে এবং অত্র এলাকার বিদুৎ সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে। মানিক আরো দাবী করেন, মাত্র আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এরকম স্টেশন স্থাপন করে সরকার যদি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দিয়ে পরিচালনা করে তবে সারা দেশের গ্রাম-গ্রামান্তরের বিদুৎ সংকটের স্থায়ী সমাধান আগামী ৬ মাসের মধ্যেই সম্্ভব। এই গ্যাস দিয়ে গ্যাসের বিভিন্ন সমস্যার সামাধানও সম্ভব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।